জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নামে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। তাই ৯১ সালের পর থেকে দেশে আর গণতন্ত্র নেই। এমন বাস্তবতায় কখনোই উচ্চমানের গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। সংবিধানের ৭০, ৯৫, ১০৯ ও ১১৬ ধারা সংযোজন করে দেশের সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে অর্পণ করা হয়েছে। সংবিধানকে এমন ভাবে সংশোধন করা হয়েছে যাতে দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রায় ৯৯ ভাগই সরকার প্রধানের হাতে। এতে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা গণতন্ত্রের পরিপন্থি। আমরা সংবিধানের ৭০, ৯৫, ১০৯ ও ১১৬ ধারার বিলুপ্তি চাই।
আজ বিকেলে যমুনা ফিউচার পার্কের মহল কনভেনশন হলে জাতীয় পার্টির বছরব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্রের অভাবে সুশাসন ও আইনের শাসন নষ্ট হয়েছে। দলীয় করণের মাধ্যমে দেশের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ৯১ সালের পর থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দলীয়করণের মাধ্যমে টেন্ডারবাজী, লুটপাট ও দখলবাজীতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। অপরদিকে, দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, নিষ্পেশিত হচ্ছে এবং অত্যাচারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র নষ্ট করার মাধ্যমে দেশের সুশাসন ও আইনের শাসন নষ্ট করা হয়েছে। দেশে দুর্নীতি বেড়েছে, নিরাপত্তহীনতা বেড়েছে, দেশ এভাবে চলতে দেয়া যায়না। দেশের মানুষ মুক্তি চায়, আমরা দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ উপহার দেবো।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলেও দেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবেনা। দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়, তাই শাসন ব্যবস্থা সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্যই ইচ্ছেমত সংবিধান সংশোধন করেছে। এতে দেশের মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, অধিকারহারা হয়েছে সাধারণ মানুষ। দেশ থেকে দলীয়করণ, টেন্ডারবাজী ও চাঁদাবাজী চিরতরে বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অভাবে মুনাফালোভী ও দুর্নীতিবাজরা নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জিনিস পত্রের দাম বেড়েই চলেছে, রমজানের আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, আমাদের বন্দুকের নল নেই, পেশি শক্তি নেই, দেশের মানুষের আস্থা আর ভালোবাসা নিয়েই আমরা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়বো।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমোদ বাবলু বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই স্বপ্ন আজো পূরণ হয়নি। দেশের মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কাউকে গ্রেফতার করলে, জেল থেকে তার লাশ বের হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক কার্টুনিষ্ট কিশোরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তিনি বলেন, ধর্ষণরোধে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর প্রস্তাব অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন করা হয়েছে কিন্তু আইনের শাসনের অভাবে দেশ থেকে ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছেনা। দেশ থেকে দুর্নীতি, দুঃশাসন, একনায়কতন্ত্র, চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজী বন্ধ করতে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে আহবান জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহবায়ক শেরিফা কাদের-এর নির্দেশনা এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ এর পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্যবৃন্দ।
এসময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভরায়, এস.এম. ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, উপদেষ্টা- জহিরুল আলম রুবেল, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, এইচ.এম. শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, ছাত্র সমাজ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মেজর (অব.) সোহেল মোঃ রানা এমপি, উপদেষ্টা শেরিফা কাদের, নুরুল ইসলাম শানু, আমানত হোসেন, হেনা খান পন্নি, খান ইসরাফিল খোকন, নুরুল ইসলাম তালুকদার, এডভোকেট লাকি বেগম, হারুন আর রশীদ, নাজনিন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম শফিক, সালমা হোসেন, শফিউল্লাহ শফি, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, লুৎফুর রেজা খোকন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোঃ রাজু, আমির হোসেন ভূঁইয়া, মোঃ সামছুল হক, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাইফুল ইসলাম, হুমায়ুন খান, আবুল খায়ের, জয়নাল আবেদিন, ইফতেকার আহসান হাসান, মাখন সরকার, মিজানুর রহমান, সুলতান মাহমুদ, এম এ রাজ্জাক খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, এটিআই আহাদ চৌধুরী শাহীন, সাকিব রহমান, গোলাম মোস্তফা, নুরুল হক নুরু, এম এ সুবহান, জাকির হোসেন মৃধা, শারমিন পারভীন লিজা, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল, ডা. সেলিমা খান, শেখ মোহাম্মদ শান্ত, এডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, শাহনাজ পারভীন।