সংলাপের মাধ্যমেই দেশে চলমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে মনে করছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের রাজনীতি আবার পুরোনো চেহারায় ফিরছে। দুই মাস পরে নির্বাচন। এভাবে কি চলতে থাকবে? এর সমাধান তো রাজনীতিবিদদের হাতেই আছে। আলোচনার মাধ্যমে কি এর সমাধান করা যায় না- জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে অনেক সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। সংলাপের তো কোনো বিকল্প নেই। সেটি আমাদের করতে হবে। আমরাও বলি এবং আমরাও মনে করি সংলাপের মাধ্যমেই আমাদের এ সমস্যা সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আপনি যদি দরজা বন্ধ করে… যেমন ইসরায়েল তারা তো কোনোদিনই সংলাপের মাধ্যমে এটার সমাধান করবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে ইসরায়েল শুরু হয়েছে সেই থেকেই তারা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে। এবং দেখেন মানবতার কী ধরনের বিপর্যয়।’
‘তারা (বিএনপি) যদি বলে যে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এ সরকার থাকলে নির্বাচনে যাবে না। এই নির্বাচন কমিশনের আওতায় তারা নির্বাচন করবে না- এই দুটি কথা তারা এমনভাবে বলেছেন, এখানে আলোচনা করে কী হবে! সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ তো এই মুহূর্তে নেই। কাজেই সেটা তো হবে না। নির্বাচন কমিশন তো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই করা হয়েছে। সেই নির্বাচন কমিশন না থাকলে নির্বাচন হবে কেমনে!’
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার গঠন করে কার্যকর করতে হবে, সংসদ বসতে হবে। এই বেসিক ইস্যুগুলো তারা যদি মেনে নিতো, তখন আমরা অবশ্যই তাদের সঙ্গে বসে কীভাবে নির্বাচনটা সুন্দর করা যায়, কোন কোন এসপি বা ডিসিকে সরাতে হবে সেটা যদি বলে বা অন্য কোনো প্রস্তাব দেয় সেটা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা যেতে পারে।’
‘কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে, পালানোর জায়গা পাবে না- প্রতিদিন এ কথা বললে কি সংলাপ হবে। সেই সংলাপ তো ফলপ্রসূ হবে না। আমরা সংলাপের বিরুদ্ধে না কিন্তু দরজা বন্ধ করে দিয়ে তো সংলাপ করা যাবে না।’
তারা তিনদিনের অবরোধ দিয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিকভাবে এটা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে আছে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার সভা-সমাবেশ করার, বিক্ষোভ করার; কিন্তু বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা, হিংস্রতা, তারা যে সন্ত্রাসের পথে যাচ্ছে আমি মনে করি এটা জাতি কোনো দিনই অনুমোদন করে না। এমনিতেই মানুষ তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। কাজেই শত সহিংসতা করেও তারা সফল হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ নির্বাচন হবে এবং আমি মনে করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে একটা মুহূর্তে তখন তারাও নির্বাচনে আসবে। তারা আন্দোলনে সফল হতে পারবে না।’
‘তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের যে ভিত্তি, ইচ্ছা করলে আওয়ামী লীগের মতো সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না।’
কীসের ওপর ভিত্তি করে বলছেন বিএনপি নির্বাচনে আসবে- এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের প্রস্তুতি আছে, তারা বড় দল। আমরা আন্দোলন করছি তারাও করছে। যখন স্বীকার করবে নির্বাচন করবে, আলাপ-আলোচনা করে তারাও মনোনয়ন দেবে। এমন তো না যে তারা নতুন ক্ষমতায় আসছে, তারা তো আগেও ক্ষমতায় ছিল। কাজেই তাদেরও প্রস্তুতি আছে।’
২০১৪ সালের তফসিলের পর নির্বাচনকালীন সরকারের সর্বদলীয় সরকারের একটা বিষয় ছিল। এবারও সেটা হবে কি না- জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মনে হয় না এই ধরনের… মূল বিষয় যেটি যে এই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে কি না, সেটা হলে এগুলোর বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। সেগুলো আমি এই মুহূর্তে বলবো না রাজনৈতিক কৌশলের কারণে। আমি অকপটে বলছি। বেসিক সমস্যাগুলোর যদি সমাধান হয়, তখন এগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন বিবেচনা করবেন।’
২৮ অক্টোবর বিএনপি’র বিরাট সমাবেশ ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ সমাবেশ থেকে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে দিল। আমার বাসাও প্রধান বিচারপতির বাসার কাছে আমি আমার বাসা থেকে সব দেখেছি। আমার বাসার স্টাফরাও ছিল। তারা বলেছে, এটা প্রধান বিচারপতির বাসা। ওরা বলছে এটাই আগে ভাঙতে হবে। বিচার করে করে আমাদের লোকজনদের ফাঁসি দিছে বিচারপতিরা। তারা জেনে সুপরিকল্পিতভাবে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। যারা করেছে তারা রাজনৈতিকভাবে বিএনপির প্রথম লাইনের কর্মী এবং তারা সচেতন।’
‘দেখেন সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়েছে, এটা কেবল শুরু এর থেকেও ভয়ঙ্কর হবে অপেক্ষা কর।’
বিএনপি ফের সহিংসতা করলে কঠোর হস্তে এটা মোকাবিলা করা হবে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও নেই যেখানে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়। পুলিশের গাড়ি পোড়ানো হয়।’