প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন,গত ৪০ বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু তিক্তকর বিষয় হিসেবে ঝুলে আছে। ১৯৭৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে দেশচ্যুত করছে মিয়ানমার। ২০১৭ সালে একসঙ্গে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে হত্যা, ধর্ষণ ও নানা কায়দায় অত্যাচার চালিয়ে বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশের ভূমিতে ঠেলে দেয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা গোষ্ঠিকে বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন।
রওশন এরশাদ বলেন, বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে অবস্থানের কারণে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জনজীবন ও প্রাণ-প্রকৃতিতে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি রোহিঙ্গা বিদ্রোহী দমনের নামে যে গোলাবারুদ ও কামান ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বেশ কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ছে। যা আর্ন্তজাতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন এবং দুই দেশের তিক্তকর সম্পর্ক আরো গভীর করে তুলছে।
বিরোধী দলী নেতা আরো বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও কূটনৈতিক মহল দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এই সংকটকে যদি একটি দ্বিপাক্ষিক বাস্তব সম্মত পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতো, তাহলে আজ হয়তো নতুন সংকট সৃষ্টি হতো না। বিরোধী দলীয় নেতা আরো বলেন, মন্ত্রনালয় ও কূটনীতিকদের অদক্ষতা;সমস্যা সমাধানে চরম ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দ্বিপাক্ষিকভাবে অথবা চীন, ভারত ও সৌদিআরবের মধ্যস্থতায় ত্রি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ত্বড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।
বেগম এরশাদ বলেন, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে যে ভয়াবহ পরিবেশ বিরাজ করছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক পাহারার মাধ্যমে জনগণের জান-মাল রক্ষা করছেন তার জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অতীতে আমাদের সেনাবাহিনী যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবদী গোষ্ঠিকে দৃঢ়তার সঙ্গে দমনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্য-সংহতি রক্ষা করেছেন, তাদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তৎকালীন সময়ে যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
মিয়ানমারকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, কূটনীতিক মধ্যস্থতায় যদি এর সমাধান না করেন, তাহলে বাংলাদেশের জনগন ও সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের মানুষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ় এবং বদ্ধপরিকর।
বেগম রওশন এরশাদ আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার অনতিবিলম্বে দ্বি-পাক্ষিক ও ত্রি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। মিয়ানমার কূটনৈতিক উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে। যাতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধান কার্যকরভাবে সম্পন্ন হবে।