দেশজুড়ে ১৫ থেকে ২১ জুন চলা জনশুমারির কাজে অবহেলা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর মতে, সাত দিনব্যাপী চলা এই কর্মযজ্ঞে অনেকের মধ্যে দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণে অনেকে গণনা থেকে বাদ পড়েছেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজের দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছি, এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে।’
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, এবারের ষষ্ঠ জনশুমারিতে তাঁদের বাসায় গণনাকারীরা যাননি। আবার কোথাও কোথাও তথ্য সংগ্রহ না করেই দরজার সামনে স্টিকার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও স্টিকার টানানোর অর্থ হচ্ছে ওই বাসা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু আদতে তথ্য নেওয়াই হয়নি।
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এবারের জনশুমারির কাজ অনেকটাই সহজ ছিল। কোনো তথ্যই হাতে লেখার প্রয়োজন হয়নি। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ট্যাবে।
এইচএসসি পাস ছেলেমেয়ে দিয়ে গণনার কাজ করানো হয়েছে। তাঁদের অনেক বেশি সম্মানী দেওয়া হয়েছে। তবু অনেককেই দায়িত্বহীনভাবে কাজ করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনায় সবচেয়ে বেশি প্রচার চালানো হয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা হয়েছে। সাড়ে তিন লাখের বেশি গণনাকারী দেশজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সবার ওপর হয়তো নজর রাখা সম্ভব হয়নি। গণনা থেকে কেউ বাদ পড়লে প্রচারিত ফোন নম্বরে ফোন করেও গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা ছিল।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, অভিযোগ অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে তথ্য সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সমন্বয় করা হবে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রমে দেশজুড়ে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ট্যাবের সাহায্যে ৭ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বন্যাকবলিত সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত গণনা কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালের সর্বশেষ পঞ্চম জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। সেই শুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। ১০ বছর পরপর শুমারি হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। করোনা মহামারি ও ট্যাব কেনাকাটায় জটিলতার কারণে এবার ১১ বছর পর জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম করা হয়েছে।