গত ২ মার্চ ইউক্রেনে আগ্রাসন সংক্রান্ত জাতিসংঘের একটি রেজল্যুশনে ভোটদানে বিরত থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ইউক্রেন সংক্রান্ত আরেকটি রেজুলেশনে পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। ওই রেজুলেশনে ১৪০টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়, ৩৮টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল এবং পাঁচটি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মানবিকতা। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মানবিক দেশ হিসেবে সুপরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে এবং যুদ্ধের বিপক্ষে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনও যুদ্ধে সাধারণ নাগরিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি।’ তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের রেজুলেশনে বলা হয়েছে, যারা নির্যাতিত এবং আহত হয়েছে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। যেহেতু আমরা চাই, যারা নির্যাতিত হয়েছে তারা সব ধরনের সুবিধা পাক, সেই জন্য আমরা এ রেজুলেশনে রাজি হয়েছি।’
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘে পশ্চিমা দেশের পক্ষ থেকে একটি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে আরেকটি রেজুলেশন এসেছিল এবং দুটোই মানুষের মঙ্গলের জন্য আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ উভয় রেজুলেশনে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু সাউথ আফ্রিকার রেজুলেশন পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ার কারণে ভোট দেওয়া হয়নি।
আগের রেজুলেশন
গত ২ মার্চের রেজুলেশন একতরফা ছিল এবং সেখানে শুধু রাশিয়াকে দোষারোপ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যুদ্ধতো এক হাতে হয় না, এক হাতে তালি বাজে না। এখানে অন্য পক্ষের নামই আসেনি। সে জন্য আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এটি অত্যন্ত পার্টিজান এবং এটিতে যুদ্ধ থামবে না।’
যুদ্ধ থামাতে হলে উভয় পক্ষকে আন্তরিকতার সঙ্গে সামনে আসতে হবে। কিন্তু আগেরটাতে মনে হয়েছিল এক পক্ষকে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার একজন প্রতিনিধি সম্প্রতি বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের যুদ্ধতে আমাদের জোর করে অংশীদার করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের দাবা খেলার রাজনীতিতে আমাদের জোর করে টেনে আনার চেষ্টা করছে, যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি তিনি ভালো কথা বলেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না এবং যুদ্ধে অংশীদার হতে চাই না।’
অর্থনৈতিক যুদ্ধ
বর্তমানের যুদ্ধ শুধু সৈন্য দিয়ে হয় না, অর্থনৈতিকভাবেও হয় বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ধরনের বিষয় চিন্তা করছি। দেখা যাক কী হয়। কারণ, আমাদের মনে হচ্ছে এর একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে এবং এটি গোটা বিশ্বের যে আর্কিটেকচার সেটি পরিবর্তন করতে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটি ভালো হবে না মন্দ হবে সেটি জানি না। তবে যে বিশ্বাসের জায়গার ওপরে অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটিতে একটি বড় ধরনের আঘাত আসবে।’
যুদ্ধে সব দেশের ক্ষতি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তেলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসের দাম বাড়বে। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে যুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু আমরা যেহেতু আন্তনির্ভরশীল একটি ব্যবস্থার বড় সদস্য, আমাদের উন্নয়ন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর বড় প্রভাব আসবে।’
বাংলাদেশের ওপর অনেক চাপ
বাংলাদেশের ওপর বিভিন্নমুখী চাপ আছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চাপ আমাদের অনেক দিক থেকেই আছে। কিন্তু চাপ আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনও ভ্রুক্ষেপ করেন না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন এবং কোনও চাপের পরোয়া করেন না।’