বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলার মুখ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও আনন্দ শোভাযাত্রায় আগে তিনি এ কথা বলেন।
হানিফ বলেন, আমরা অনুরোধ করবো মিথ্যাচার-বিভ্রান্তি বন্ধ করে আপনারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সাড়া দিন, আপনাদের মতামত সেখানে পেশ করুন। আপনাদের যদি ভালো পরামর্শ থাকে, অবশ্যই সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করতে পারেন। সে পরামর্শ আপনারা দিন।
হানিফ আরও বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করছেন। আগামী বছরের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন করবে আওয়ামী লীগ সরকার এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এসময় রাষ্ট্রপতির কাছে তারা তাদের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন জানিয়ে হানিফ বলেন, ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। তাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, লাগাতার মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা (বিএনপি)। যারা ধর্মের নামে ফতোয়া দিয়েছিলেন সেই জামায়াতকে রাজনীতি করতে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেঈমানি করেছিলেন বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করেছিলেন তিনি।
হানিফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দেশে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, যেটা সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি সেটা অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তাদের মতামতে সার্চ কমিটি গঠন করে এবং তাদের দেওয়া নাম যাচাই-বাছাই করে আমাদের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এটাই হলো গণতান্ত্রিক, সবচেয়ে উত্তম পন্থা। সেটাকে নিয়েও বিএনপি আজ সমালোচনা করছে।’
বিএনপি কেন ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, তারা বলছে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এটা প্রশাসনের নাটক। এরকম নানা অভিযোগ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে তারা। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনারা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তখন আপনারা নির্বাচন কমিশন গঠন করেননি কেন?’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আপনারা যে কলঙ্ক তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন, সে কলঙ্ক তো এখনও জাতির মনে আছে। ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়ে ভোটার লিস্ট করেছিলেন। আপনারা এ ধরনের মিথ্যা অপকর্মগুলো করেছিলেন। সেটাকে ঢাকার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মান্ধ করা হচ্ছে- মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশে যারা ক্ষমতা দখল করে বসেছিল, তাদের নেতৃত্বেই আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর থেকে এ জাতিকে তারা উল্টো পথে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ধর্মকে রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তারা সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত করেছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে কি লাভ, কি ক্ষতি সেটা আমি জানি না। কারণ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ তার চিন্তা-চেতনা সংবিধানের আলোকে করে না।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম, বাংলার মুখের সভাপতি সাইফুল আজম বাশার প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা রেব করা হয়। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।