তৃণমূল নেতাদের বলয় ভেঙে দিয়ে দলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে, অনেক জায়গায় বলয় তৈরির চেষ্টা আছে। আমাদের ভাই ভাইয়ের মধ্যে কেনো এই বলয় তৈরি করতে হবে, বলয় দলের জন্য কখনোই সুখবর নয়। এসব বলয় ভেঙে দিতে হবে।
মঙ্গলবার হবিগঞ্জের জালাল স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হানিফ বলেন, জেলার নেতাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে দলে যাতে বলয় তৈরি না হয়, সেটা খেয়াল রাখবেন। আপনারা জেলার নেতা; আপনাদের কাছে সকল নেতাকর্মী সমান। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। দলে কোনো বলয় সৃষ্টি করা যাবে না।
হানিফ বলেন, ২০০৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফ সাহেব ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। আমাদের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০০৯ সালে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে এসেছিলেন। আমিও উনার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই- দলের নেতাকর্মীদের একমুখী করা, শেখ হাসিনামুখী করা। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, শেখ হাসিনার কর্মী। বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা সব পূরণ হয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের হাত ধরে মানুষ পরাধীনতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব অর্জন আওয়ামী লীগের। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে আজ আমরা অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। আর আওয়ামী লীগের সফলতার পেছনে মূল চালিকাশক্তি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি তৃণমূল।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসা। সেই আসার পথ সুগম করাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ এই দেশে যদি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হয় তাহলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন, মুক্তির চূড়ান্ত বিজয় যদি অর্জন করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আজকে দেশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে গেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতা রাখতে হলে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের দায়িত্ব থাকা মানে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া।
খালেদা জিয়ার হাত আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীর রক্তে রঞ্জিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা রাজাকার-আলবদরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খুঁজে পান। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়া কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মাকে পদদলিত করেছেন। তারেক জিয়া হাওয়া ভবন বানিয়ে সরকারের মধ্যে সরকার গঠন করেছিল। পাঁচ বছরে এ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। ১৯৭৭ সাল থেকেই জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। একইভাবে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছেন।
গণঅধিকার পরিষদ আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, হবিগঞ্জে কৃতি সন্তান ছিলেন শাহ এম এস কিবরিয়া। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এস এম কিবরিয়া সাহেবকে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি, মন্ত্রী বানিয়েছেন। সেই কিবরিয়া সাহেব বিএনপির সন্ত্রাসীদের বোমায় নিহত হয়েছিলেন। আর তার পুত্র রেজা কিবরিয়া বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কথা বলেন। লজ্জা করে আমার। উনার হয় কি-না জানি না। অবাক হয়ে যাই, মানুষ ক্ষমতা পাওয়ার জন্য কতো পাগল হতে পারে। আমরা ধিক্কার জানাই এরকম সন্তানদের যারা ক্ষমতার লোভে পিতা হত্যাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে।
অন্য দলের নেতাকর্মীদের তোষণ-পোষণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে এমপিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অন্য কোনো দলের সাহায্যে ক্ষমতায় আসেনি। দলের নেতাকর্মীদের পরিশ্রমে আপনার এমপি হয়েছেন। তাদের (বিএনপি-জামায়াত) কেউ আপনাদের ভোট দিয়ে এমপি বানায়নি। বিএনপি-জামায়াতকে কাছে রাখার মানসিকতা বদলাতে হবে।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সদস্য ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, আজিজুস সামাদ ডন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী প্রমুখ।