বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে সাহসী দেশপ্রেমিকদের খুব বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার দুপুরে দলের প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন স্মরণে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার প্রথম মৃত্যু্বার্ষিকী উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে তার জীবনীর ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ‘গেরিলা থেকে জননেতা’ প্রদর্শিত হয়। পরে খোকার ওপর দুই দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। অনুষ্ঠানে কবি শামসুর রহমানের গেরিলা কবিতা পাঠ করেন শাকিলা মবিন মৃধলা।
২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্নোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খোকা। পরে দেশে মরদেহ এনে জুরাইন কবরাস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে সংকট চলছে। এই যে রাজনৈতিক সংকট এই সংকটে খুব বেশি প্রয়োজন সাহস, খুব বেশি প্রয়োজন ধৈর্যের, খুব বেশি প্রয়োজন দেশপ্রেমের।’
সাদেক হোসেন বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা খুব কষ্টের যে, খোকা ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কথা বলতে হচ্ছে। যে মানুষটি সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্ট লোকজনের কাছে একই মানুষ ছিলেন, সেই মানুষটি সম্পর্কে কীভাবে কথা বলতে হবে আমার জানা নেই। এত জনপ্রিয় একজন মানুষ, এত দেশপ্রেমিক একজন মানুষ, এত সহনশীল একজন মানুষ আমি আমার জীবনে কম দেখেছি। উনি ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে অত্যন্ত সাহসী বীর এবং রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গেরিলা ছিলেন। সেই মানুষটি যখন জনগণের জন্য রাজনীতিতে আসলেন দেখা গেল তার সেই সম্পৃক্ততাটা অভাবনীয়ভাবে একেবারে মানুষের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে মিলে গেল। একেবারে মাটি থেকে উঠে আসা মানুষ ছিলেন খোকা ভাই।’
ফখরুল বলেন, ‘তিনি সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ছিলেন, তিনি রাজনীতির দলকানা নেতা ছিলেন না। আমি তাকে কখনো দেখিনি যে তিনি অন্য দলের নেতাদের সমালোচনা করেছেন। আমাকে সবসময় একটি কথা বলতেন, ভাই কখনো ধৈর্য হারাবেন না। অনেক ধাক্কা আসবে, ঘাত আসবে, প্রতিঘাত আসবে-এর মধ্য দিয়ে ধৈর্য্যের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়াটাই আমাদের কাজ।’
স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খোকা ভাইয়ের মতো এতো চমৎকার মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। আমার মনে আছে উনি যখন গোপীবাগের বাসায় থাকতেন, বাগান ছিল বাসার মধ্যে। ছোট একতলা বাসা। ঘুম থেকে উঠেননি তখনো। বাসা বোঝাই মানুষ। উনার বিছানায় গিয়ে বসে আছেন অনেকে। এই যে জনগণের নেতা, মানু্ষের নেতা। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। উনি দেশনেত্রীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। আমি যখন তার সঙ্গে শেষ বার দেখা করি– উনি আমাকে বলেছিলেন, কখনো ম্যাডামকে ছেড়ে যাবেন না, ম্যাডামের সঙ্গে থাকবেন। এই কথাগুলো নিয়ে আমরা পথ চলছি। উনি আমার বয়সের ছোট হলেও আমি মনে করি উনি আমার নেতা ছিলেন। তার আদর্শকে আমি ধারণ করি, সেভাবে চলার চেষ্টা করি এখন।’
প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা চিরকাল দেশের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন বলে মন্তব্য তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সাদেক হোসেন খোকা মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বিএনপির সেলিমা রহমান, শওকত মাহমুদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, হাবিব উন নবী খান সোহেল, জয়নাল আবেদীন, শিরিন সুলতানা, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানী, নাসির উদ্দিন অসীম, আমিনুল হক, কাদের গনি চৌধুরী, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেছারুল হক, ফরিদা ইয়াসমীন, নজরুল ইসলাম তালুকদার, লেবার পার্টি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাদেক হোসেন খোকার ছোট ছেলে ইশফাক হোসেনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও প্রয়াত নেতার বন্ধু-বান্ধবরা উপস্থিত ছিলেন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন