বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিটা দুর্যোগে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগ-দুর্ভোগে জনগণ আওয়ামী লীগকে কাছে পেয়েছে। কে আসলো আর কে আসলো না, তা জানি না। গণমানুষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নৈতিক দায়িত্ব থেকেই সবসময় মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। প্রতিনিয়ত দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা।’
সোমবার রাত ৯টায় ‘দুর্যোগে দুর্বিপাকে, আওয়ামী লীগ সর্বদা মানুষের পাশে’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের মাথার ওপর ছাতা ধরে সবসময় তাদের ছায়ার নিচে রাখার চেষ্টা করেছেন। যেকোনো সমস্যা, দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য তার আন্তরিকতা, মানবিকতা বিশ্বে বিরল। আমাদের সম্পদ সীমিত। কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সফলও হয়েছি। একটা বিষয় পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের সুখে-দুঃখে, বিপদে আপদে অতীতে মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৯৭০ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় শেখ হাসিনা নিজ হাতে রুটি বানিয়ে মানুষকে বিতরণ করেন। চট্টগ্রামে যখন ঘূর্ণিঝড় হয়েছিলো তখন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। সেই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল।’
হানিফ বলেন, ‘আমরা ১৯৯৮ সালের বন্যা দেখেছি। যেসব এলাকা কখনো বন্যাকবলিত হয় না, সেইসময়ে ওসব এলাকাও দীর্ঘসময় বন্যায় আক্রান্ত ছিল। সেই দুর্যোগের সময় সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ২০০৩-০৪ সালের বন্যায় দুর্গত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহাদুর্যোগে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। কোটি কোটি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে রাস্তায় লাশ দেখা যায়নি। কারণ, করোনা দুর্যোগের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ মাস্ক, স্যানিটাইজার, ওষুধপত্র, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। করোনার শুরুতে কেউ মৃত্যুবরণ করলে ভয়ে যখন কেউ দাফনে আসেনি তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাশ সৎকারের ব্যবস্থা করেছে।’
করোনায় দুই কোটি মানুষকে আওয়ামী লীগ ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে উল্লেখ করে দলটির এ সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে সবসময়ে মানুষের পাশে থেকেছে। মানুষের দুর্যোগ, দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগ সবসময় বড় ভূমিকা পালন করে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘সিডরে যখন সাতক্ষীরা, খুলনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারে এসেছে। দুর্যোগে আক্রান্ত সেসব মানুষের পাশেও তিনি দাঁড়িয়েছেন। বন্যাদুর্গত মানুষদের দেখতে আগামীকাল (মঙ্গলবার) তিনি সিলেট সফরে যাবেন।’
করোনা আক্রান্ত হয়ে মাহবুব উল আলম হানিফ বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জ বন্যাকবলিত হওয়ার পরপরই সিলেট জেলা, মহানগর ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ প্রথমে চেষ্টা করেছে দুর্গতদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় দেওয়ার। তাদের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছে। প্রথমদিন থেকে তারা কাজ করছে। প্রতিদিন রান্না করা খাবার, শুকনা খাবার বিতরণ করছেন। দুর্গত এলাকায় যুবলীগ, ছাত্রলীগের টিম গেছে। তিনদিন ধরে প্রত্যেক এলাকায় তারা যাচ্ছে এবং দুর্গত মানুষকে উদ্ধারে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপজেলা পর্যায়ে দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করছে।’
সুফি ফারুক ইবনে আবুবকরের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এ টকশোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক বিভাষ বাড়ৈ ও অনলাইন এক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল।