বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চাই। কোন সংখ্যা লঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দেশ বিভক্ত চাই না। বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাজারো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় কাজে লাগিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এজন্য আমাদের নিজেদেরকে জাতির সামনে সৎ ও যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। জাতি ইনসাফপূর্ণ সমাজ চায়। সে সমাজ গঠনে জামায়াতে ইসলামীকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, জাতি আমাদের উপর যে আশা করে তা যেন আমরা পূরণ করতে পারি সে জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। বিগত সাড়ে ১৩ বছর আওয়ামী জুলুমের কারণে আমরা দলীয় অফিসে বসতে পারি নাই, নিজের বাড়ি ঘরে থাকতে পারি নাই, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি করতে পারি নাই, এমনকি পরিবারের ঠিকমতো খবর নিতে পারি নাই, পিতা মাতা, নিকটজন মারা গেলে তাদের মুখও দেখতে পারি নাই। আল্লাহ আমাদের উপর রহমত ঢেলে দিয়েছেন বলে আজ বড় সমাবেশ করতে পারছি। তাই এ সময়কে কাজে লাগিয়ে দ্বীনের দাওয়াত সবার কাছে গিয়ে দিতে হবে।
শনিবার সকালে বগুড়া শহর ও জেলা শাখার সদস্য (রুকন ) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বগুড়া শহর শাখার আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী অধ্যাপক আ,স,ম আব্দুল মালেকের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, বগুড়া অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা আব্দুর রহিম ও নজরুল ইসলাম, বগুড়া পশ্চিম জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হক সরকার, পূর্ব জেলা আমীর অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, জয়পুরহাট জেলা আমীর ডা. ফজলুর রহমান সাইদ, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর শাহীনুর আলম।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তির আন্দোলনের কোন একক মাস্টার মাইন্ড নেই। দেশের মানুষ আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। আন্দোলনের নেতৃত্বের কৃতিত্ব যুবসমাজের। যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছি সেইসব বীর শহীদদের কে জামায়াতে ইসলামী দলীয়ভাবে বিবেচনা করে না।
তারা আমিরে জামায়াত বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বিচারের নামে প্রহসন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছিল। জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসসহ সারাদেশের সকল অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। সাড়ে ১৩ বছর আমরা আমাদের অফিসে বসে কোন কাজ করতে পারিনি। গায়ের জোরে আমাদের নিবন্ধন এবং প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বুলডোজার দিয়ে আমাদের বাড়ি-ঘর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল। চব্বিশের ছাত্রজনতার আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতা ছাড়েনি, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভয়ে দেশ ছেড়েই পালাতে বাধ্য হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের শেষের দিনগুলো মোটেও সহজ ছিল না। আন্দোলনকারীদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তারা একসাথে বসে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা লড়াই করে জাতিকে মুক্তি এনে দিয়েছে। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার আহতদের আর্তনাদের বিনিময়ে বিজয় এসেছে। সকল শহীদ এবং আহতদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সাধ্যমত সকল শহীদ এবং আহতদের পাশে থাকবে। তিনি বগুড়ায় আন্দোলনে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের আগে ২০২৫-২৬ মেয়াদের জন্য নির্বাচিত বগুড়া শহর আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল ও জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হক সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করান। সম্মেলনে ৪ হাজারের অধিক পুরুষ ও নারী সদস্য অংশগ্রহণ করেন। সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি মাথায় নিতে সম্মেলনে যোগ দেন সদস্যরা। বিকালে তিনি একই স্থানে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।