জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে বাঙালি মুসলমানরা বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ভাষার মাধ্যমে বাঙালিদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানিরা। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে যখন বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় তখন বাঙালি জাতি বুঝতে পেরেছে স্বাধীনতা ছাড়া মুক্তির আর পথ নেই। সেই সময়ে বাঙালিরা যদি সাহস দেখাতে না পারত তাহলে ইতিহাস থেকেই হয়তো বাঙালি জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। তাই একাত্তরকে বাদ দিয়ে কোনো মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালে বাঙালি জাতি যখন আবার নিগৃহীত হলো, নিষ্পেষিত হলো তখন ছাত্রদের নেতৃত্বে বাঙালি আবার রুখে দাঁড়াল। তখন ছাত্ররা চেয়েছিল শেখ হাসিনার পতন ও অবাধ-সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার গঠন। সেই সরকারের জন্য একটি শাসনব্যবস্থা। যে শাসনব্যবস্থায় এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকবে না এবং তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দানবে পরিণত করবে না।
মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছাত্রদের অহিংস আন্দোলনকে দমন করতে শেখ হাসিনা সরকার চরম সহিংসতা করেছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই আন্দোলনে মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরাও অংশ নিয়েছিল। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।
জিএম কাদের বলেন, বিচারের নামে কোনো প্রহসন চাই না। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন, একটি হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে পারেন। ১০-১৫ বছর পর যখন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন না তখন আবার ঠিকই সেই মামলা সামনে চলে আসবে। শহিদদের আত্মত্যাগের ঘটনায় মিথ্যা মামলা বানিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলা করবেন করেন, সঠিক অপরাধীকে গ্রেফতার করেন কিন্তু শাস্তি দেওয়ার নামে প্রতিহিংসা বা জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কাম্য হতে পারে না। ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন, একটি ভালো শাসনব্যবস্থা এবং একটি বৈষম্যহীন দেশের জন্য। সারা দেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে। একটি অংশকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক আরেকটি অংশকে বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা নির্যাতিত হয়েছে বা ঝুঁকিতে ছিল তাদের দেশপ্রেমিক মনে করা হচ্ছে। যারা নির্যাতিত হয়নি তারা দেশপ্রেমিক নয়? আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নামে এখনো মামলা দেওয়া হচ্ছে।
আমাদের দু’জন এখনো জেলে আছে। মাঠেঘাটে সভা-সমাবেশ করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে আমরা সেল্ফ সেন্সরশিপ দেখতে পাচ্ছি। আমরা যা বলি গণমাধ্যম তা প্রকাশ করতে পারে না।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, মেজর (অব.) আনিসুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, যুগ্ম মহাসচিব এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার প্রমুখ।