বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তি চেয়ে ভারত যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি দেশটির উলম্ব অভিযান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে একটি সংগঠন, যাদের বৈধতা আছে কি আছে না এ সম্পর্কেও বাংলাদেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতা যার বিতর্কিত আচার-আচরণের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশের ভেতরের কেউ কেউ এবং বাইরে থেকে সেই বিতর্কিত নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদ করছেন। এই প্রতিবাদ আসাটাই সারা দেশের মানুষকে এক ধরনের দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলেছে, মানুষ বিস্মিত হয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করছে।
তিনি বলেন, চিম্ময় নামে একজন ব্যক্তি যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অথচ সেই সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন তাকে পূর্বেই অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে দাঁড়াক তা কখনই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র (ভারত) চায়নি। চায়নি বলেই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তাদের অশ্বমেধযজ্ঞ করার কিছু মানুষকে এদেশে পাঠিয়ে দিয়ে চক্রান্ত করছে। তাদের জন্য তারা বিলাপ করছে। তারা আটক হলে আক্ষেপ করছে, প্রতিবাদ করছে। চিম্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি ভারতের উলম্ব অভিযান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর ঘাতক সরকারের পতনের পর থেকে এদের (ইসকন) অস্বাভাবিক তৎপরতা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। তাদের কী দাবি? দাবি সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি সেটিও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। তাদের দাবি নিয়ে দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে কী এমন ঘটনা ঘটেছে, যে ৭টি বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি দিয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম নামে একটি ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? কী করতে চাচ্ছে? আবার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তার গ্রেফতার নিয়ে মুক্তি দাবি করেছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তো লুট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গুম, খুনসহ ভয়ংকর অভিযোগে অনেককেই গ্রেফতার করা হয়ে থাকে। চিন্ময় যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু দেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্য দেশের স্টেটমেন্ট বিরল।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগের খুনিরা যখন বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, নিপুণ রায়কে রাস্তার মাঝে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিল তখন তো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবাদ করতে দেখলাম না!’ তারাও তো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বাংলাদেশে ইসকন নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনটিকে কখনও দেখিনি শেখ হাসিনা যখন দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করল তাদের একটি স্টেটমেন্ট দিতে! অথচ, যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক, যা সারা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘অথচ তাদের একজনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে যারা দুইদিন আগেই একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে, সেই সংগঠনের একজন নেতাকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্য দেশ বিবৃতি দিচ্ছে তার মুক্তির জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি আছে? এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয় তারা বিশেষ কোনো মহলকে মদদ দিচ্ছে এবং বাংলাদেশে যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে সে পরিবর্তনকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।’