বাংলাদেশ থেকে চিরতরে গুমের সংস্কৃতিকে বিদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে মায়ের ডাক আয়োজিত ‘গুম, জান, জবানবন্দি’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
আয়নাঘরের হোতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের আমলারা এখনও বহাল তবিয়তে। এদের রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করতে পারবে না। এসব আওয়ামী দোষরদের স্বপদে রেখে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
এসময় নিজের ৬১দিন গুম থাকার ভয়াবহ স্মৃতি তুলে ধরে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, গুমের বিরুদ্ধে বিএনপির সংগ্রাম জারি থাকবে।
গুম হওয়া স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এই অনুষ্ঠান হয়। সেখানে গুমের শিকার স্বজনরা উপস্থতি ছিলেন। সবার হাতে ছিলো তাদের প্রিয়জনদের আলোকচিত্র। বিকেলে অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আলোকচিত্রী মোশফিকুর রহমান জোহান বক্তব্য রাখেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি নিজেই গুম ছিলাম। কবর থেকে বেরিয়ে আসা একজন মানুষ। আমাদের দেশ থেকে চিরতরে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য কাজ করতে হবে। যারা এখনো স্বজনদের ফিরে পান নাই তারা তো জিন্দা লাশ।
আমি এই অনুষ্ঠানকে থেকে বলছি সরকারকে সংশ্লিষ্ট সকলকে যারা গুমের সংস্কৃতির ধারক, বাহক, যারা গুম করেছে, হত্যা করেছে তারা কারা আপনারা জানেন, বাংলাদেশের জনগণ জানেন… এই জিয়াউল হাসান, বেনজীর, মনিরুল, ডিবি হারুন, বিপ্লব, মেহেদী যত আছে নো মার্সি, গো টু জাস্টিস। তাদেরকে ইন্টারোগেট করতে হবে… তারা মানুষকে গুম করেছে, হত্যা করেছে…. তাদের বিচার করতে হবে।
‘সর্বত্র বসে আছে পতিতদের প্রেত্মাতা’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বসে আাছে সমস্ত জায়গায়। আমি গতকালকে সরকারকে একটা অনুষ্ঠানে বলেছি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যারা ছাত্রলীগ ছাড়া কাউকে চাকুরি দেয়ার সুপারিশ করেনি তারা যদি পদত্যাগ না করে আমরা পদত্যাগ করাব। এরকম দেখবেন সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। এরা থাকলে আমরা কিভাবে বিচার পাবো?
‘গুম জান ও জবান’ নামের এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে। সেখানে বিভিন্ন পরিবারের নানা গল্প ফুটে ওঠে আলোকচিত্রীর ছবিতে। একটি ছবিতে দেখা যায়, সিসিটিভি ফুটেজে মানুষ উঠিয়ে নেওয়ার দৃশ্য সাদা প্রাইভেটে। আরেক ছবিতে মেলে ভারাক্রান্ত চেহারায় অসুস্থ মায়ের অপেক্ষা ছেলের ছবি হাতে। কোনো ছবিতে দেখা যায় মা-ছেলে অপলক তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। হয়তো অপেক্ষায় প্রিয় মানুষটি ফেরার।
মোশফিকুর রহমান জোহান ক্যামেরার আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারীতে চলবে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সিনিয়র গবেষক তাসকিন পারভীন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।