তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি নেতারা এখন সাংবাদিকদের সামনে গিয়ে বড়বড় কথা বলে অথচ তারাই ২০০৬ সালে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার কিছুদিন আগে কলমের এক খোঁচায় আইন পরিবর্তন করে সমস্ত সাংবাদিককে শ্রমিক বানিয়ে দিয়েছিলো।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাবের শহীদ শেখ আবু নাসের ব্যাংকুয়েট হলে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারবর্গের জন্য সহায়তা ও করোনায় বিশেষ সহায়তা চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তর সালের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন, এরশাদ সাহেব ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দুইবার ক্ষমতায় ছিলো, সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য তারা কিছু করেনি, কোনো ট্রাস্ট করেনি। সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
‘শুধু তাই নয়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো, এই খুলনাতেই হুমায়ুন কবির বালু, মানিক সাহা, যশোরে শামসুর রহমান কেবল, সাইফুল আলম মুকুলসহ অনেক সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, শতশত সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন’ উল্লেখ করেন ড. হাছান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সরকার সাংবাদিকদের পাশে আছে।
এসময় দেশ ও সমাজ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকাকে অনন্য হিসেবে বর্ণনা করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে জনমত তৈরি হয়, সমাজ সঠিক বার্তাটি পায়, আবার কারো ভুল বা অসত্য লেখনীর মাধ্যমে সমাজ ভুল বার্তা পায়। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র গঠনে ও সমাজকে ঠিক খাতে প্রবাহিত করতে সাংবাদিকরা যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, অন্য পেশার মানুষ সেভাবে পারেন না।
‘তাই যে পৃথিবীতে আয়তনের দিক দিয়ে ৯২তম যে দেশে মাথাপিছু জমির পরিমাণ সর্বনিম্ন, সেই বাংলাদেশ যখন আজ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়-তৃতীয়ের মধ্যে ওঠানামা করে, আলু উৎপাদনে সপ্তম, করোনায় ১৩০টি দেশে টিকা শুরুর আগে যে দেশে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মানুষকে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে, আমেরিকা থেকে প্রবাসীরা এসে টিকা নিয়েছে এবং মির্জা ফখরুল-রিজভী সাহেবরা নানা সমালোচনা শেষে আবার কেউ রাতের আঁধারে, কেউ দিনের আলোতে টিকা নিয়েছেন, করোনায় সমগ্র বিশ্ব যখন থমকে গেছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তখন ঘোষণা দিয়েছেন- এই দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, রোদে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা মানুষ যারা শুধু একটু ঘুমানোর জায়গা স্বপ্ন দেখতো, তারা বাড়ি পেয়েছে -এই চিত্রগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাই’ বলেন মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, খুলনার ডেপুটি কমিশনার মনিরুজ্জামান তালুকদার, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু ও এস এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য এদিন খুলনায় ৩২ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারকে ২৩ লাখ সহায়তা এবং ৮৬ জন সাংবাদিককে ১০ হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর করোনা সহায়তা থেকে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। ২০১৪ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের পর থেকে চলতি এপ্রিলের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ৮ হাজার ১৫৬ জন সাংবাদিক ও তার পরিবারকে ২২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর করোনা সাহায্যের ১০ কোটি টাকা থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৬ কোটি টাকা দেশব্যাপী সাংবাদিকদের এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।