দেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে শুধু শাসকের হাত বদল হয়েছে, আমরা কিছু পাইনি। একদল খেয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। আমরা এরকম চাই না। আমরা চাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্নীতির আখড়াখানা। গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। লুটপাট করতে করতে এ দেশের মানুষকে ফুটপাতে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।’
ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইসলাম দিয়ে আমাদের জীবন ও পরিবারকে সাজাতে হবে। কোরআন থেকে প্রেসক্রিপশন না নিলে জীবন সুন্দর হবে না, সমাজ ও রাষ্ট্র সুন্দর হবে না। কোরআনের প্রেসক্রিপশন অ্যাপ্লাই না করলে শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আসল পরিচয় ইসলাম। এদেশের সংসদ, বঙ্গভবন, সরকারি অফিসে কলেমার পতাকা উঠুক আমরা চাই।’
আজহারী বলেন, ‘মানুষ চাইলে বিশ্বজয় করতে পারে। মানুষকে কেউ হারাতে পারে না। আল্লাহ আমাদেরকে জনসংখ্যা দিয়েছেন। এ জনসংখ্যা অনেক বড় সম্পদ। এটা আমাদের জন্য অভিশাপ না, আশীর্বাদ। আমাদের জনসংখ্যাকে যদি আমরা জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি আজকে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে তার চেয়ে ২০ গুণ উন্নতির শিখরে চলে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানব সম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। একটি দেশের মানুষের জ্ঞান, তাদের দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়, বাড়িয়ে দেশের উন্নয়ন করা যায় এটাই হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নের মূল কথা। মানবসম্পদ হচ্ছে একটি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী পুঁজি।
প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের চেয়েও দামি সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। আল্লাহপাক দয়া করে আমাদের এই মানবসম্পদ দিয়েছেন। এই মানুষগুলোকে সোনার মানুষ বানাতে হবে। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। তাই মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। যথাযথভাবে তাদের গড়তে হবে।’
রসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনী থেকে মানবসম্পদ ব্যবহারের উদাহরণ টেনে আজহারী বলেন, ‘আমরা যদি মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে দিতে পারবো। প্রতিটি মানুষ অনন্য। যত্ন নিলে, যথাযথ পরিচর্যা করলে মানুষ বিশ্বজয় করতে পারে।
আমাদের হাফেজ, ক্রিকেটার, তৈরি পোশাক শিল্প অনেক কিছু সেরা। আমাদের আরও অনেক কিছু সেরা আছে, কিন্তু আমরা তাদের পরিচর্যা করতে পারি নাই। মানুষের অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি ইউনূস সরকারকে বলবো অল্প সময়ের জন্য আপনারা এসেছেন। সংস্কারও করতে হবে আবার নির্বাচন করতে হবে। সব সংস্কার হয়ত করতে পারবেন না।
যতটুকু পারবেন এর মধ্যে আমাদের যে হিউজ ম্যান পাওয়ার, মানবসম্পদ এটাকে ডেভেলপমেন্ট করে যেতে হবে। আপনারা যেটা পারবেন না সেটাকে পরবর্তী নির্বাচিত গভর্মেন্টের কাছে রেখে যেতে হবে।’
প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে আজহারী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করে। তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের শ্রমের দাম সবচেয়ে কম। তারা অ্যাম্বাসিতে গুরুত্ব পায় না, এয়ারপোর্টে গুরুত্ব পায় না।
এই সরকার অবশ্য তাদেরকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের অদক্ষ শ্রমিককে যখন দুবাই পাঠায় অল্প বেতন পায়। ইন্ডিয়ানরা দক্ষ শ্রমিক পাঠায় বলে তারা তিন গুণ বেতন পায়। আমরা আমাদের শ্রমিককে আর অদক্ষভাবে পাঠাতে চাই না। দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে রেমিটেন্সের বন্যা বইয়ে দিতে চাই।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় সচল থাকে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা। তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা পেয়েছিলাম ফ্রিডম ফাইটার মুক্তিযোদ্ধা আর আমার প্রবাসী ভাইয়েরা হচ্ছে রেমিটেন্স ফাইটার।
আমাদের এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকার ও অভিভাবককে সন্তানদেরকে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের এই জনসংখ্যা জনসম্পদের রূপান্তরিত হবে। আমাদের সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৮ কোটি জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হোক এটাই আমরা চাই।’
এদিকে যশোরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ, অনেকে হেঁটে যশোরে শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারীর তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে যোগদান করেন।
শহরের পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ মাঠে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রথম দিন বুধবার (১ জানুয়ারি) আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হামজা।
এ মাহফিলে চার দিনব্যাপী ইসলামী বইমেলা ও প্রদর্শনী করা হচ্ছে। মেলায় ২২টি স্টল রয়েছে। একই সঙ্গে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করা হয়েছে।