সরকার অব্যাহতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত ও কলঙ্কিত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গত এক যুগ ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করে জনগণকে ও নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং ঘৃণার রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁচাতে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমই হচ্ছে সত্যিকারের চলমান নির্ভরযোগ্য ইতিহাস।
তিনি বলেন, আজকে এই মিডিয়ার মাধ্যমে নেতৃবৃন্দের সামনে আমি আহবান জানাতে চাই যে, আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। সেজন্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তাই এই সরকাকে হাটানো ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইস্যুতে আমরা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না?
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র উদ্যোগে “ইতিহাস বিকৃতি, ঘৃণার চাষ ও গণমাধ্যমের ভ‚মিকা” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএফইউজে’র চার যুগপূূর্তি উপলক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতিক, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহবায়ক আবদুস সালাম, বিশিষ্ট কলামিস্ট, সাবেক ভিসি আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান, বিএফইউজে’র সহসভাপতি রাশিদুল ইসলাম, ডিইউজে’র সহসভাপতি বাছির জামাল।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, কোষাধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, নির্বাহী সদস্য একেএম মহসীন, আবদুস সেলিম, জাকির হোসেন, ডিইউজে’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, ডিইউজে’র দফতর সম্পাদক ডিএম আমিরুল ইসলাম অমর, প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, নির্বাহী সদস্য জেসমিন জুঁই প্রমুখ।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ করতে পারি। যদি ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ আপাতত করা সম্ভব না হয় যুগপৎ আন্দোলন করতে পারি। এই ইস্যুর (সরকার হটানো) ওপরে যদি আমরা সকলে একমত হই তাহলে আসুন সম্ভব হলে ঐক্যবদ্ধ একটি মঞ্চ গঠন করি। আর সম্ভব না হলে যুগপত আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পতন ঘটাই এবং এটাই এখন সময়ের দাবি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভ্ন্নি পথ আছে, মত আছে। কিন্তু আমি আহবান জানাব, এটা জনগনের দাবি, এটা বিএনপির দাবি নয় যে, এই শেখ হাসিনার সরকার থেকে রেহাই দিতে হবে জনগনকে অথবা এই সরকারকে হটাতে হবে। এই ইস্যুতে এবং গণতন্ত্র পুররুদ্ধারে ইস্যুতে আমার মনে হয় কোনো দলের কোনো দ্বিমত নেই।
মেজর জেনারেল অব. ইব্রাহীম বলেন, ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে এক যুগ ধরে। আমরা কি করতে পারছি? আজ জাতীয়ভাবে নেতৃত্বের সংকট চলছে। আমাদের নেত্রী বন্দী, আরেক নেতাকে বিদেশে আটকে রাখা হয়েছে। বিরোধী দলকে নেতৃত্বহীন করতে এ চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা আছেন। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চেয়ে দলীয় আনুগত্য বেশী করায় ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে কথা বলেন না।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২৫ মার্চ পাক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা ছিল না। এটা সত্য। তখন জিয়াউর রহমানের ঘোষণা মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উৎসাহ যুগিয়েছে। এ সত্য ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।
শওকত মাহমুদ গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে এ সরকারকে গঠাতে হবে বলে মন্তব্য করে বলেন, বিএনপি বিপ্লবী রাজনীতি করে না, কিন্তু শহীদ রাষ্ট্রপতি যখন বিএনপি গঠন করেছেন তার আগে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতায় এসে দল গঠন করেছেন। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা যখন থাকে না তখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার কোন বিকল্প নেই।
নুরুল হক নুর বলেন, সরকার প্রধান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে লাগামহীন বক্তব্য দিয়ে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই।
তিনি বলেন, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে ভেদাভেদ ভুলে সব দল ও মতের লোককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়ে বাকশাল করেছিলেন, তাঁর কন্যা অঘোষিতভাবে বাকশাল চালু করেছে। আগামী নির্বাচন তারা পার করতে পারলে দেশে রাজতন্ত্র কায়েম হবে বলে মন্তব্য করেন ভিপি নুর।
আবদুস সালাম বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। জনগণকে নিয়ে গণঅভ্যূত্থান সৃষ্টি করে এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ দরজা দিয়ে ঢুকলে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জানালা দিয়ে পালায়। তারা যতবার ক্ষমতায় গেছে ততবারই তা প্রমান করেছে।