বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা অফিশিয়াল সেটা বলি নাই। আমাদের যোগাযোগের একটা মাধ্যম তো আছে। যখন যোগাযোগ হবে, তখন আপনারা দেখতে পাবেন, জানতে পাবেন। এখানে কোনও রাখঢাকের বিষয় নেই।’
শনিবার (৩ আগস্ট) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় রবিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচি সামনে রেখে ওই দিন ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের জমায়েত কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা। কাজেই বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতে পারে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন তার দরজা খোলা, তিনি আলোচনা করবেন। তাহলে নিচের দিকে আর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার কোনও ব্যাপার না। আমাদের যোগাযোগের দরজা খোলা।’
আন্দোলনকারীরা আলোচনায় না বসলে আওয়ামী লীগ কী করবে, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আমার পজিটিভ বিষয়টা বললাম। নেগেটিভে যাবো কেন? দরজা খোলা রাখছি।’
বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে কি না, ঘটলে আওয়ামী লীগ কী করবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’
রবিবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি বলে দিয়েছি। এ জন্য আমরা জমায়েত করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতির অভিভাবক। ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনি বসতে চান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংঘাত এড়াতে পক্ষ-বিপক্ষ হতে পারে, পাল্টাপাল্টি হতে পারে, এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলছি। বিবেক নয়, আমরা ঐক্যে বিশ্বাসী। যারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও প্রগতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আমরা চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রবিবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জমায়েত
আওয়ামী লীগের নতুন করে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর মধ্যে রয়েছে রবিবার রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং জেলা ও মহানগরে জমায়েত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহত এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সোমবার বিকাল ৩টা থেকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোক মিছিল করবে দলটি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অন্যদিকে আমরা কোনও রকম মুখোমুখি অবস্থানে জড়াতে চাই না। সে কারণে আমরা সংঘাত হতে পারে, এ ধরনের প্রোগ্রাম আমরা এড়িয়ে চলেছি। গতকাল (শুক্রবার) এবং আজকেও (শনিবার) আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল।’
আওয়ামী লীগের নতুন কর্মসূচির কথা জানিয়ে কাদের বলেন, ‘রবিবার ঢাকা সিটির সব ওয়ার্ডে জমায়েত এবং বাংলাদেশের সব জেলা ও মহানগরীতে জমায়েত। আর ৫ তারিখে (সোমবার) বিকাল ৩টা আমরা আমাদের সেই কর্মসূচি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোক মিছিল করবো।’
বিএনপি লাশের রাজনীতি করছে
ইউনিসেফকে অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘এখানে আমরা একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, অবুঝ শিশুরা কোনও রাজনৈতিক বিবেচনায় পড়ে না। অবুঝ শিশুর তাজা প্রাণ ঝরিয়ে আমাদের সরকারি দলের কোনও লাভ নেই। লাভ তাদের, যারা এ শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তারপরও আমরা ইউনিসেফকে অনুরোধ করবো যে ৩২ জন শিশু হত্যার কথা তারা বলছেন, আমরা সেই শিশুদের নাম-ঠিকানাসহ জানতে চাই। এটা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। সত্য খুঁজে বের করুন।’
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারই ফিরিয়ে এনেছে। আজ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের অপচেষ্টা চালাচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রতিভূ বিএনপি-জামায়াত। তারা বারবার জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ। তাই যেকোনও আন্দোলন দেখলে সেটাকে সরকারবিরোধী রূপ দিতে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছে।’
বিএনপি-জামায়াত লাশের রাজনীতি করছে বলে দাবি করে কাদের বলেন, ‘গত শুক্রবার তাদের ষড়যন্ত্র ও উসকানির মাধ্যমে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার বাহিনী সহিংসতা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছে। ফলে দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেলো। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই আহত। এ ছাড়া অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ সদস্য হত্যার দায় কার তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চান কাদের।’
সাইবার সন্ত্রাসীরা গুজব-অপপ্রচার চালাচ্ছে
শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সহিংসতা হয়েছে, তার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয়ে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটা মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে। চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের হাতে; যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়। এ অশুভ শক্তির অশুভ তৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না। আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট শতভাগ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। তারা আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। দেশটি আমাদের। কোনও পক্ষকে বাদ দিয়ে নয়। বরং সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
সরকার গঠিত তদন্তে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের কাছে সরকার আবেদন করেছে কি না, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এটা তার বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করেছেন। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলার পর জাতিসংঘ একটা প্রস্তাব দিয়েছে। এটা তো চিঠি দিয়ে বলেনি। আমরাও সেটাতে সায় দিয়েছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।