বর্তমান সরকার পতনের পর তিন মাস মেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে জাতীয় নির্বাচন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, আজ হোক কাল হোক এই সরকার যাবেই। এরপর যে সরকার আসবে অর্থাৎ কেয়ারটেকার সরকার হতে পারে। তিন মাস তারা ক্ষমতায় থাকবে, তারপর তারা নির্বাচন দেবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, মানুষ রাজপথে নেমেছে। ওমিক্রন বিধিনিধিষের আগে বিএনপি রাজপথে নেমেছিল। হাজার হাজার মানুষ তখন জনসভায় যোগ দিচ্ছিল। তখন কোথাও কোথাও ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা ভেঙে সভা হয়েছে। এখন বিধিনিষেধ নাই। তারপরে আমরা রাজপথে আসছি। এইবার ১৪৪ ধারা দেন, আমরাও ভেঙে ফেলে দেখিয়ে দেবো। কোনো বিধিনিষেধের সামনে মাথা নত করবো না। অতীতেও বাংলাদেশের জনগণ মাথ নত করেনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ দল নয়। বরং আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করে। সরকারকে বলবো, হামলা মামলা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বা নিপুণ রায়দের দমন করা যাবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, সারাদেশে এই সরকারের ওসি-এসপি-ডিসিরা যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, ওরাই আবার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবে? না। ওদেরও বদলানো হবে। তিন মাসে প্রশাসনও বদলাবে। সচিবালয়ে যারা আছেন, তাদের বদলাতে হবে। সারাদেশ থেকে লুট করে বাংলাদেশকে যারা নিঃস্ব করে ফেলেছে তাদের বিচার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বলেন, আওয়ামী লীগ এত বড় সংগঠন; নতুন সরকার গড়লে আওয়ামী লীগকে রাখবেন না? আমি বলি আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগের কিছুই ওই সরকারে থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রাগ নেই। কিন্তু যে চোর, তার চুরির বিচার হবে না? যে অন্যায়ভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে, গুম করেছে, খুন করেছে তাদের বিচার হবে না? এদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য এই আন্দোলন করছি না।
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মান্না বলেন, কারা খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখেও বিদেশে চিকিৎসা করতে দিল না? ওরা এমনি এমনি পার পেয়ে যাবে? না। এই আন্দোলন কেবল আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন নয়, আমরা দেশটার ভালো করতে চাই। দেশে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দুদকের একজন কর্মকর্তা যিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মামলা দিয়েছেন, সেই কর্মকতাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই দুদক কর্মকর্তার পক্ষে সরকার কেন কোনো কথা বলছে না? কারণ, এই সরকার দুর্নীতি করে।
তিনি বলেন, এই সরকার একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। আজ এর পক্ষে বলবে, কাল ওর বিপক্ষে বলবে। চট্টগ্রামে চীন নাকি একটি শহর বানিয়ে দেবে। আমার একটাই বক্তব্য, আমার দেশের জমি কাউকে দেওয়া যাবে না। এই সরকার নানাভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। এদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
আমি দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাবো, আপনারা আন্দোলনের জন্য তৈরি হোন, ঐক্যবদ্ধ হোন। সামনে স্বাধীনতার মাস, এই মাসে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে। যেন স্বৈরাচারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যোগ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। বিএনপির যুববিষয়ক সহ সম্পাদক নেওয়াজ আলী নেওয়াজের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, সাইফুল আলম নিরব, ডা. রফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম খান রবি, মশিউর রহমান বিপ্লব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম প্রমুখ।