তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথায় মনে হচ্ছে আইন-আদালত কোন কিছুরই দরকার নেই, সরকার চাইলেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে পারে। আসলে নিজেরাতো কোন আইন আদালত মানেননা, সেই কারণেই তারা এধরণের লাগামহীন ও দায়িত্বহীন কথা বলতে পারেন। তাহলে সরকারকে জজকোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের ভুমিকাও পালন করতে হবে কিনা এমন প্রশ্ন রাখেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দূর্গা পুজার সময় যারা দেশে বিবেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছে এরা স্বাধীনতার শত্রু, এদের পূর্ব পুরুষ আমাদের স্বাধীনতা চাইনি, এরা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেননা। এরা এখনো পাকিস্তানি ভাবধারা মনে ধারন করে, এরা দেশের শত্রু, এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই।
২০ নভেম্বর ২০২১ শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শঙ্করমঠ ও মিশনের শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার পঞ্চমদিনের যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সরকার চাইলে বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ নিতে পারবেন বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শ্রীমৎ তপনানন্দ গিরি মহারাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শ্রীমৎ পরমানন্দ মহারাজ। বক্তব্য রাখেন বিমল কান্তি দাশ, কাউন্সিলর শফিউল আলম মুরাদ, দুলাল দে প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার একটি অসুখ হলেই বিদেশ কেন নিয়ে যেতে হবে এমন প্রশ্ন রেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, দেশে লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি মানুষের চিকিৎসা হয়, দেশে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক ভালো প্রাইভেট হাসপাতালগুলো আছে, যেখানে অনেক ভাল চিকিৎসা হয়, এবং অন্যদেশ থেকেও এখানে অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে আসে। বেগম খালেদা জিয়ার পেটে-হাঁটুতে বা অন্যকোন সমস্যা হলেই বিদেশ নিয়ে যাবার জন্য তারা জিকির তোলেন কেন সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। আইনমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, আইনানুযায়ি খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর কোন সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, এভাবে বিদেশ নিয়ে যাবার ধোঁয়া তোলার মাধ্যমে তারা আমাদের চিকিৎসক এবং আমাদের হাসপাতাল গুলোকে অবজ্ঞা করছেন। বিশেষ করে চিকিৎসকদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছেন। আর মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে মনে হচ্ছে আইন আদালত কোন কিছু দরকার নাই, সরকারকে হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সুপ্রীমকোর্ট সবকিছুর ভুমিকা পালন করতে হবে। যেটি কখনো সম্ভব নয় এবং সমীচিন নয়।
এরআগে যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম আমরা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনা করার জন্য। দেশ বিভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে, মুসলমানদের জন্য একটি রাষ্ট্র, হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র। আমরা যখন পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ছিলাম তখন আমরা অনুধাবন করেছি, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা বাঙালিদের জন্য নয়। কারণ আমরা বাঙালিরা মনে করি, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় আমরা কে কোন ধর্মাবলম্বি। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্মীয় পরিচয়কে মুখ্য করে নেয়া হয়েছিল। সেটির সাথে আমরা বাঙালিরা মানিয়ে নিতে পারিনি।
তিনি বলেন, আজকে যারা সাম্প্রদায়িক বিবেদ সৃষ্টি করতে চায়, ধর্মীয় বিভাজন তৈরী করে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে চান তারা শুধু সমাজের শত্রু নয় রাষ্ট্রের শত্রু। কারণ এই রাষ্ট্র রচিত হয়েছে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনা করার জন্য। ধর্ম যার যার এই রাষ্ট্র সবার, আমাদের দেশে যখন ঈদ উৎসব হয় সেই উৎসবের আনন্দ শুধুমাত্র মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। ঈদ উৎসবে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষও যান।
একইভাবে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলমানরা আনন্দ উৎসবে শামিল হন। এটিই আমাদের সংস্কৃতি। এই চেতনায় আবহমান বাঙালি, বাংলা এবং বাংলাদেশ ধারণ করে। তাই ছোটখাট বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের এই সম্প্রীতির বন্ধনে কখনো বিবেদ তৈরী করতে পারেনাই এবং পারবেনা।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন