অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগ সম্বলিত চিঠি পেয়ে হতবাক হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। বিএনপি পক্ষ থেকে দেওয়া শোকজ নোটিশের জবাব পাঠিয়ে আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগ সম্বলিত কারণ দর্শনের নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়েছি। আমি বিগত ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব (আদিষ্ট না হয়েও) এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যাত্যয় ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে যোগদানের পূর্বেই আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলাম। আমি বিগদ ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তার সঙ্গে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে, তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।’
শোকজ নোটিশের অভিযোগের জবাবে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই পত্রে বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে আমার নিম্নরূপ বক্তব্য পেশ করছি। আমাকে কখনো বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর ২ মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা ৪ এর অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের পূর্বেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে, এ কারণেই বরিশাল যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’
দলীয় সভায় যোগ দেন না এমন অভিযোগ খন্ডন করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে জড়িত স্মরণীয় দিবসসমূহে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো, গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজনবোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কোনঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। বিগত এক বছরে আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ছয়টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি, আয়োজক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল দুটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি দুটি, বিএনপি ঘরানাভুক্ত সংগঠন একটি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এই সভাসমূহে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’
অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এমন আভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই অসত্য ঢালাও মন্তব্য। বিগত ১২ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমানবাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমি দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কোন বক্তব্য দেইনি।’
‘মিডিয়া তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয় অভিযোগ করে হাফিজ বলেন, বর্তমানে সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, এখানে আমাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রায়শ বিকৃত এবং খন্ডিতভাবে প্রচার করা হয়। আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনো কারও বিরুদ্ধে এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেকবার বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি।’
‘আমি দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নই, তবুও আমার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার জন্য গত ৬ বছরে চারবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছি। আমাকে বাসা থেকে নয়, রাজপথ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল,’ যোগ করেন মেজর হাফিজ।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে বিএনপির ঢাকা ঘেরাও কার্যক্রমে সন্ধ্যার পর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকে না পাওয়ায় আমাকেই নেত্রীর নির্দেশে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে। সেখানেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। দুই মাস নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলাম। দেশনেত্রীকে যেদিন কারাগারে নেওয়া হয় আদালত চত্বরে আইনজীবী ব্যাতীত কেবলমাত্র তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং আমি উপস্থিত ছিলাম, টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মূখর হয়েছিলাম। অথচ আজ আমার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।’
‘বেগম জিয়া জনপ্রিয়তার শিখরে অবস্থানকারী সংগ্রামী নেত্রী, তাকে অসম্মান করার প্রশ্নই আসে না। জিয়া পরিবারের কোন সদস্যের প্রতি কখনোই কটূক্তি করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। রাজনীতি ছেড়ে দিলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ হৃদয়ে লালন করব। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকব। আমি দেশের বৃহৎ, জনপ্রিয় দলের বর্ষীয়ান সদস্য, কোন মূক ও বধির স্কুলের ছাত্র নই’, যোগ করেন মেজর হাফিজ।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন