সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ জ্যাকসন হাইটস ইউনিট কমিটি-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর কায়সারকে।
তিনি গত ১২ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপের পর তার সেই অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকুর রহমানের একটি লিখিত আদেশে মো. তানভীর কায়সারকে বহিষ্কার করা হয়। উক্ত বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয় বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও তানভীর কায়সার দলের নীতি, আদর্শ, চেতনা ও মূল্যবোধ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তাকে দলীয় সিদ্ধান্তে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রফিকুর রহমান জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপের পর তানভীর কায়সার সেই অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেয় করেছেন। একজন দলীয় কর্মী হয়ে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি দলে থাকার কোন অধিকার নেই। তাই গত সোমবার নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে তানভীরের ফেসবুক একাউন্টের প্রোফাইল বন্ধ রয়েছে। ফোনালাপে তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই নেতাদের সঙ্গে তিনি আন্দোলন করবেন। কিন্তু তিনি নিজেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের হাতে ‘নির্যাতিত’ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তানভীর কায়সার ২০১৯ সালের ৪ জুন লস অ্যাঞ্জেলস হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন। তার ভিসাটি ছিল ভ্রমণ ভিসা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কিছুদিন পরই দাবি করেন যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে নির্যাতন করেছে। এজন্য তিনি নিজের নিরাপত্তা চান। পরে ২০২০ সালের ৭ মে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলেও জানা গেছে।
ফোনালাপ ফাঁসে ভাইরাল হওয়া তানভীরের জন্ম ১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। তার বাবা সোলেমান কায়সার এবং মা নিলুফার ইয়াসমিন। তার স্ত্রীর নাম রুকাইয়া আযাদ। তবে এই তানভীর আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্বে আছেন, কোন সূত্রে শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন, সেটি এখনো জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে অনেকেরই কথোপকথনের অডিও ফাঁস হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বিষয়টিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করছেন। তবে এসব কল রেকর্ড কীভাবে ফাঁস হচ্ছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীরের ফোনালাপ কীভাবে ফাঁস হলো এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ প্রবাসীদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।