সৈয়দ মোঃ আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত মাননীয় মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এম.পি. গত ১১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ভূমিমন্ত্রী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর আওতায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত স্মার্ট ভূমিসেবাসহ বিবিধ ভূমি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের নেতৃত্বদান করছেন তিনি।
জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনা-০৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভূমি ব্যবস্থাপনায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন, বিদ্যমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দুর্নীতি নির্মূলের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, স্মার্ট ভূমিসেবা কার্যক্রম প্রচলিত ম্যানুয়াল সেবা প্রদানের ধারা ও রীতিকে অপরিবর্তিত রেখে কেবল ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় রূপান্তর নয়; বরং ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশনের সময় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যুগপৎভাবে সেবা প্রদানের ধারা ও রীতি পরিবর্তন করা হয় এবং সেবা চালু হওয়ার পর চলমান থাকে সেবার ক্রমাগত উন্নয়ন।
এজন্য বিধি-বিধান ও নীতিমালা সংস্কার করা হচ্ছে নিয়মিত; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন সংশোধন এবং ক্ষেত্র-বিশেষে নতুন আইন প্রণয়নেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কয়েকশ বছরের পুরনো এবং অপ্রতিসম ভূমিসেবা ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারের অবিরত এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপের পরিপূর্ণতা আনার কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক জীবন ও জনসেবা:
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে জাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কল্যাণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তাগিদ থেকে জাতীয় জীবনে নিজেকে সম্পৃক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৬৭ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত তিনি। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, কাউন্সিলের মাধ্যমে ১৯৮৪ হতে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা নারায়ন চন্দ্র চন্দ আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সদস্য।
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদের জনগণ তাঁর নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি ও আস্থা রেখে তাকে টানা ছয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে।
২০০০ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনে বিজয়ী হয়ে নারায়ন চন্দ্র চন্দ জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ (নবম সংসদ), ২০১৪ (দশম সংসদ), ২০১৮ (একাদশ সংসদ) এবং অতি সম্প্রতি ২০২৩ সালে (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) – খুলনার ডুমুরিয়া-ফুলতলাবাসী তাঁর উপর অবিচল আস্থা রেখে পঞ্চমবারের মতো জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তাঁকে নির্বাচিত করেন। জাতীয় সংসদে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটি, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২রা জানুয়ারি হতে ২০১৯ সালের কিছু সময় পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্বকালে বাংলাদেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশীয় মৎস্য উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করা এবং গবাদি পশু ও গরুর দুধ উৎপাদনে সফল প্রচেষ্টা। কোরবানির সময় পশু সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে তাঁর বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি ১১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
প্রারম্ভিক কর্মজীবন ও পেশা:
স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশের পূর্বেই জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ ১৯৬৭ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ১৯৭৩ সালে ডুমুরিয়া নিত্য গোপাল চৌধুরী ও নবীন চন্দ্র কুণ্ডু (এনজিসি অ্যান্ড এনসিকে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৪ সালে তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ডুমুরিয়ায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হয়। এর আগে খুলনা শহরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হত। শিক্ষকতা কালীন সময়ে ১৯৭২-৭৩ সালে তিনি বিএড পাস করেন। তিনি ২০০৫ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৬৮ সালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’ এবং এই সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত দুই দশক ধরে তিনি শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনহিতৈষী ও সামাজিক কর্মকাণ্ড:
জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। শিক্ষানুরাগী, শিক্ষা উদ্যোক্তা ও শিক্ষা সংস্কারক নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনার ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়ার জাবড়ায় ‘পল্লী জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এবং উলায় ‘উলা-মৈখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। উপরন্তু তিনি আরও দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে সরকারীকরণ হয়েছে। তাছাড়া, ডুমুরিয়া মহাবিদ্যালয় ও ডুমুরিয়া শহিদ স্মৃতি মহিলা মহাবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তাঁর ছিল অনবদ্য ভূমিকা। প্রধান শিক্ষক হিসেবে একনিষ্ঠভাবে ডুমুরিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এনজিসি অ্যান্ড এনসিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তাঁর ভূমিকা সমাজে শিক্ষা প্রসারে এক অবিচল নিষ্ঠার প্রতিফলন।
ব্যক্তিগত জীবন:
স্বর্গীয় কালীপদ চন্দ ও স্বর্গীয়া রেণুকা বালা চন্দের মেজো পুত্র নারায়ন চন্দ্র চন্দ ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উলা গ্রামের পাঠশালায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর বান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে, তিনি ডুমুরিয়া এনজিসি অ্যান্ড এনসিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং সরকারি বিএল কলেজ খুলনা থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। নারায়ন চন্দ্র চন্দের সহধর্মীনি ঊষা রানী চন্দ একজন স্কুল শিক্ষক। চন্দ দম্পত্তি এক কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের গর্বিত মাতা-পিতা।