বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার দমনের এক তুঘলকীয় নীতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আগামীতে সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী এবং ঢাকার সমাবেশকে ব্যর্থ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ মতো সহিংস আক্রমণ করছে বিএনপি’র নেতা-নেত্রী ও সাধারণ জনগণের ওপর।
বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণদাবির ভিত্তিতে বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি অপ্রত্যাশিতভাবে সফল হওয়ায় আওয়ামী সরকারের গা জ্বালা করছে। কিন্তু সকল বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে সমাবেশ স্থলের দিকে জনগণের এগিয়ে আসাকে সরকার কোনোমতেই সহ্য করতে পারছে না। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে মানুষকে এক ঘোর অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেকে টিকিয়ে রাখার কোনো উপায় না পেয়ে বিএনপিকে দমন করতে নির্বিচারে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করছে।
রিজভী বলেন, আকাশচুম্বি রিজার্ভের পরিমাণ, বিদ্যুতের বন্যা বইয়ে দেয়া, জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের ফাঁকিঝুঁকি, গরমিল দিয়ে ভুয়া পরিসংখ্যান তৈরী করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হয়ে আসছে। কিন্তু দেশের মানুষ সেগুলি কখনোই বিশ্বাস করেনি। এখন আন্তর্জাতিক চোখেও উন্মোচিত হয়েছে-এরা কত ধাপ্পাবাজ। কিন্তু মানুষ নিজেদের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছেন-কি ভয়াবহ দুঃসহ পরিস্থিতি তারা অতিক্রম করছেন। দেশের অধিকাংশ মানুষের এখন ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’।
তিনি বলেন, প্রায় দেড় দশক ধরে বর্তমান রক্তপায়ী ফ্যাসিস্ট সরকার বেপরোয়া লুটপাট, সীমাহীন দুর্নীতি ও অসহনীয় দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিস্ট হচ্ছে সারাজাতি। দেশ এখন গভীর সংকটে নিপতিত। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস এবং অজস্র রক্তধারার বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রের কবর রচনা করে শুধু পুলিশী শক্তির ওপর ভর করে টিকে থাকা সরকার গোটা জাতিকেই পরাধীন করেছে। গুম-খুন-নারী নির্যাতন-অপহরণের দানবীয় নীতি প্রয়োগ করে এক কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের ওপর। মূলত: সারাজাতি আওয়ামী কুশাসনের ঘেরাটোপে বন্দী।
রিজভী বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভার অংশ হিসেবে গতকাল নরসিংদীতে বিএনপি কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। কার্যালয়ের মধ্যে জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ নেতাদেরকে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখার পরে পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে অবরুদ্ধ নেতাদের হয়রানি ও নাজেহাল করে। তারপর তাদের চিরচেনা চক্রান্তের অংশ হিসেবে সাজানো কাহিনী তৈরী করে। লাইসেন্স করা বিএনপি নেতার অস্ত্রকে তারা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল, বিএনপি নেতা আব্দুল বাতেন, জামাল মিয়া, মনিরুল ইসলাম মনির, জেলা কৃষকদল নেতা কামাল উদ্দিন কমল, ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, ১৯ নভেম্বর সিলেটে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সহিংস সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। গুম হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা এর গাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে। তিনি গণসমাবেশে লিফলেট বিতরণকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায়। এতে গাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় এবং লুনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। অথচ পুলিশ ওসমানী নগর উপজেলা ছাত্রদলের ফয়সাল আহমেদ, নুরুল ইসলাম ও শাহেদ আহমেদকে গ্রেফতার করে। নরসিংদীতে পুলিশ কর্তৃক বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা, গ্রেফতার এবং সিলেটে লিফলেট বিতরণকালে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান রিজভী।
এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মুনির হোসেন, মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, সাইয়েদুল আলম বাবুল, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।