দমন পীড়ন করে বিএনপিকে দমানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সোমবার থেকে আমাদের আবার নতুন করে গ্রাম পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের প্রতিবাদে এই আন্দোলন। মানুষ এখন রাস্তায় বেরিয়ে আসছে।
প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলাতে কিন্তু বড় বড় মিছিল হয়েছে। এর মধ্যেও তারা কেউ থেমে নেই। গতকাল লক্ষ্মীপুরে শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল নেতাদের ঘর থেকে ধরে এনে মারদোর করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে।
তিনি আরো বলেন, এত নির্যাতন, এত নিপীড়ন, এত হত্যা, এত গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে- এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় তাদের রাগের কারণ, ভয়ের কারণ।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। বিরোধিতা করে। কেন? যদি তিনি বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান সাহেব যদি দেশে আসেন তাহলে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে-এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না। আর আমরা যারা দেশে আছি আমরাও তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে কিন্তু এখন জেগে উঠছি। জেগে উঠতে হবে- বিকল্প নেই আমাদের কাছে। এই জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই দানবকে উপড়ে ফেলে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার পরিবারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যদি এই সরকারকে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, একটা সত্যিকারের জনগণের পার্লামেন্ট আনতে পারি তাহলে আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের পুনর্বাসনের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, ভিক্টম হয়েছেন তাদের অবশ্যই তাদের সকল প্রকার রাষ্ট্রের সিষ্টেমের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এতটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আমরা নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তারা যেন বাকি জীবনটা চালাতে পারে তারজন্য সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব।
অনুষ্ঠানে ভোলা, ফেনী, নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের ১৪ জন নেতাকর্মীর পরিবারকে এককালীন ও শিক্ষাবৃত্তির আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ৯ বছরে সারা দেশে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী হেল্প লাইন।
টর্চার সেল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, নেত্র নিউজে যে খবর বেরিয়েছে- তাদের সেই টর্চার সেল আছে। তার নাম দিয়েছে আয়নাঘর। সেই আয়নাঘরে নিয়ে যায়। যাদের মেরে ফেলতে হয় তাদের মেরে ফেলে, যাদের রেখে দিতে হয় তাদের রাখে, টর্চার করে, বছরের পর বছর তাদেরকে রাখে। যারা কয়েকজন সৌভাগ্যক্রমে বেরিয়ে যেতে পেরেছিল তারা বিদেশে চলে গেছেন, গিয়ে সেখান থেকে বলছেন যে, এই ধরনের একটা সেলে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল।
‘‘তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, আমি নিজে একজন ভিকটিম। তাকে যখন ১/১১ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় সেই সময় তাকে রিমান্ডের নাম করে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এমন টর্চার করা হয়েছিল যে, তার কোমড় ভেঙে গিয়েছিল। আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা কল্পনাও করিনি এই বাংলাদেশ দেখবে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, উন্নয়ন নিয়ে এরা বড়াই করছে। দেশকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিয়েছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিয়েছে। মানুষের পার কেপিটাল ইনকাম নাকি ২৮০০ টাকা হয়ে গেছে। আর এদিকে চা শ্রমিকেরা ১২০ টাকা প্রতিদিন পায়। তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে। শতকরা ৪২ জন মানুষের জীবন দারিদ্য সীমার নিচে চলে গেছে, দুই বেলা খেতে পায় না। কিছুক্ষণ আগে মোবাইলে দেখলাম একজন চা শ্রমিকের নেতা বক্তৃতায় তাদের খাবারের হিসাব দিচ্ছেন। সকালে একটা রুটি চা দিয়ে ডুবিয়ে, দুপুরে রুটি এবং রাত্রে একটু ভাত আর ডাল অথবা একটু সবজি। এখনো এই ৫০ বছর স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশে শ্রমিকদের এই অবস্থা।
জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে এবং হেল্পসেলের সদস্য মামুন খান, ফয়সাল আহমেদ ও নাসির উদ্দিন শাওনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পারভেজ রেজা কাকন, হেল্প সেলের সুমন আহসান, ওবায়দুর রহমান, কাজী এমদাদুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম রাসেল, এমদাদুল হক লিমন বক্তব্য রাখেন।