নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমাদের শ্রমিকদের এখন অধিকার আদায়ের জন্য ইউএনও অফিস ঘেরাও করতে হয় না। আগে দেখতাম শ্রমিকরা রাজপথ দখল করে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতেন। ডিসি অফিস-ইউএনও অফিস ঘেরাও করতেন। এখন আর তা করতে হয় না, কারণ আমাদের সরকার শ্রমিকবান্ধব। রোববার (১ মে) দিনাজপুরের বিরল বাজারের বকুলতলা মোড়ে শ্রমিক সংগঠনের আয়োজনে মহান আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। পৃথিবীর বড় বড় জাহাজগুলো আগামী তিন চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মাতারবাড়ীতে নোঙ্গর করবে। আমাদের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, যেখানে হাজার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। গাইবান্ধায় গোবিন্দগঞ্জের পথে আমাদের শুধুমাত্র একটি সুগার মিল ছিল, সেখানে পৃথিবীর বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলমান। সেখানে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সেখানে শুধু হাজার হাজার নয়, লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং আমাদের এ অঞ্চলের অর্থনীতি বিকশিত হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলে এ সব উন্নয়ন হচ্ছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী উন্নয়নশীল দেশগুলো কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মত দেশ ধনী থেকে গরীব হয়ে যাচ্ছে। অথচ শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জীবন এবং জীবিকা একসঙ্গে চলবে। পৃথিবীর কোনো সরকার প্রধান বা রাষ্ট্র প্রধান জীবন এবং জীবিকা এই ধরনের জীবন দর্শন দিতে পারেন নাই। আমাদের শ্রমিকরা এবং আমরা সেদিন আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনার আহ্বানে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখেছি। জীবন এবং জীবিকার কথা চিন্তা করেই সারা বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক সেদিন শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারিতে আমাদের প্রায় ২৯ হাজার মানুষ হারিয়ে গেছে। অনেক বরণ্যে ব্যক্তিত্বকেও আমরা ধরে রাখতে পারিনি। অনেক শ্রমিক মারা গেছেন। কিন্তু আমরা দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়েছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সংগ্রাম করেছে, ৩০ লাখ মানুষ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, যেভাবে আমাদের মা ও বোনেরা আত্মত্যাগ স্বীকার করেছে, একইভাবে বাংলার মানুষ দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই কোভিডকালীন দেশমাতৃকার জন্য বিলিয়ে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজকে সেই অর্থনীতি ধরে রাখতে পেরেছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই এনালগ বাংলাদেশকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এই বাংলাদেশকে আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং এটা ধরে রাখার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনেক রাজনীতি হবে, গুজব রটানো হবে, কিন্তু দিন শেষে আমাদের ভাবতে হবে, আমি ভালো আছি কি-না, আমার পরিবার ভালো আছে কি-না, বাংলাদেশ ভালো আছে কি-না! এই সংগ্রাম অবশ্যই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ধরে রাখতে পারব।
উপজেলা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিকের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি হাসান ফরিদ বিদ্যুৎ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব সবুজার সিদ্দিক সাগর, সাধারণ সম্পাদক রমাকান্ত রায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. আফছানা কাওছার এবং জেলা ও উপজেলার শ্রমিক নেতারা।