পেশাদার সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আইন ও নিয়ম-নীতি দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
আজ রবিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তর কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সাথে কি আলাপ হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মূল ধারার গণমাধ্যমে অপতথ্যের বিস্তার কিভাবে মোকাবিলা করা হয় সেটা নিয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা হয়েছে। ফ্রান্সে বেশ কিছু আইন আছে, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ বিষয়গুলো দেখভাল করে।
রাষ্ট্রদূত এমনও বলেছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি ফ্রান্সের মধ্যে ফ্রান্সের সরকারের বিপক্ষে কোন অপতথ্য প্রচার করে এবং সে ক্ষেত্রে তার পেছনে যদি কোন বিদেশি শক্তিও থাকে তাদেরকে রীতিমতো জেরা করার জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে তারা কোন ছাড় দেয় না। তাদের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আছে যারা অপতথ্য খুঁজে বের করে সরকারের কাছে পেশ করে।
প্রতিমন্ত্রী এ সময় আরো জানান, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রেগুলেশন যেমন গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করতে পারে, আবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য নিয়ম-নীতি দরকার। আমিও এ বিষয়ে একমত। পেশাদার সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আইন ও নিয়ম-নীতি দরকার।
আইনের প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটি হচ্ছে বিষয়। কিন্তু নিয়ম-নীতির বাইরে পৃথিবীর কোন দেশ নেই। সব দেশে আইন আছে। অপতথ্যের ব্যাপারে কারও কোন ছাড় নেই।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ইউরোপ বা পাশ্চাত্যের দেশগুলো বা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ কিভাবে এই অপতথ্যকে মোকাবিলা করে সে অভিজ্ঞতা জানা ও বোঝা এবং আমাদের এখানে কাজে লাগানোর বিষয়গুলো নিয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সাথে আলাপ হয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সরকারের প্রতি এবং মানুষের প্রতি ফ্রান্সের আস্থা আছে এবং তারা গভীরভাবে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সাথে কাজ করতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। অপতথ্য মোকাবিলার ক্ষেত্রে ফ্রান্স বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে।
ফ্রান্সের সরকারি ভর্তুকিতে চলা টেলিভিশন চ্যানেল ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরের সাথে বাংলাদেশ টেলিভিশনের যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের সাথে আলাপ হয়েছে বলে এ সময় জানান প্রতিমন্ত্রী।
ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর সাম্প্রতিক ধর্মঘট ডাকার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী কোয়াবের সদস্যদের এ ধরনের ধর্মঘট ডাকা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোয়াব নেতৃবৃন্দের সাথে বসেছি, কথা বলেছি। তারা তাদের সমস্যার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। তখন আমি তাদের একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলেছি, আইনের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করতে পারবেনা।
ওটিটি প্লাটফর্ম সবগুলো চ্যানেলকে প্যাকেজ করে যা করছে এটা বেআইনি। এগুলো দেখার জন্য আমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কোয়াব, অ্যাটকো, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন এবং ডিটিএস থেকে দুজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে । তাদের নিয়ে কোলাবরেশন সেল তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের নিয়ে সভা করা হবে।
সেখান থেকে সবগুলো সমস্যা সমাধানের পথে আমরা এগুবো। মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। সেজন্য মাঝপথে এসে এ ধরনের ধর্মঘটে যাওয়া ঠিক হবে না। আইনের মধ্যে থেকে সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শেরপুরের নকলা উপজেলার একজন সাংবাদিককে সাজা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। একটি হচ্ছে তথ্য চাওয়ার অপরাধে তাকে সাজা প্রদান করা হয়েছে, অপরটি হচ্ছে অসদাচরণের দায়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। দুটি তথ্য পরস্পর বিরোধী।
কোনটি সত্য সেটি এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। আমি চাই এটার একটা তদন্ত হোক এবং তদন্ত করে সত্যটা বের হোক। সে উদ্যোগ ইতোমধ্যে তথ্য কমিশন নিয়েছে। আমি প্রধান তথ্য কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। তারা বিস্তারিত তদন্ত করবে এবং তদন্তের পরে যেটা সঠিক সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আইনের প্রয়োগ মানেই ক্ষমতার অপব্যবহার এটা আমি মনে করি না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অপব্যবহারের সুযোগও থাকে। দুটোই আছে। কাজেই পুরো বিষয়টি না জেনে কোন উপসংহারে যাওয়া ঠিক হবে না।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে চাই বিষয়টি আমি পর্যবেক্ষণ করছি, তদন্ত সাপেক্ষে যেন সঠিক তথ্য বের হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক,শিল্পী বা সাহিত্যিক যেই হোক কেউ যেন কোন কারণে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ভিকটিম না হয়, এটা আমরা নিশ্চিত করব।