ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন জেলাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ করে নাগরিকগণকে ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য প্রাইভেট এজেন্টশীপ নীতিমালাও প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’ এবং ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক উদ্যোগ ও নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই কথা বলেন। ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ মুখ্য বক্তা হিসেবে এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরো বলেন, আমাদের দেশের বাস্তবতায় ডিজিটাল সাক্ষরতা এখনও শতভাগ নয়। এজন্য সবার পক্ষে অনলাইনে ডিজিটাল সার্ভিস গ্রহণ সম্ভব নয়। এজন্য সবদিক বিবেচনা করে, সবার কথা মাথায় রেখে আমরা ভূমি সেবা এজেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মন্ত্রী আরো জানান, ভূমি ভবনে একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। কলসেন্টার ছাড়াও এসব সেবা কেন্দ্রে নাগরিকরা সরাসরি গিয়ে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া, প্রাইভেট এজেন্ট কার্যক্রম মনিটরের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক নাগরিক কমিটি করার কথাও বিবেচনায় রয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা ভূমিসেবা সিস্টেম এমনভাবে উন্নয়ন করছি যেন দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। এ প্রেক্ষিতে তিনি উন্নত দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সিস্টেমের করণে ওখানে অনেকের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকেনা। মন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ের ভূমি অফিসের কাজ নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। কোন উপজেলায়, কোন সার্কেলে কতদিনে ফাইল নিষ্পত্তি হচ্ছে – আমরা তা দেখছি এবং ফিডব্যাক নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে মনিটরিং কার্যক্রম অধিক নিবিড় করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমি মনে ভূমি মন্ত্রণালয় অন্যতম ‘পারফর্মিং মিনিস্ট্রি’। ‘স্মার্ট মিনিস্ট্রির’ কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। মানুষ ভূমি সেবা ডিজিটালাইজেশনের সুফল পাওয়া শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানের মুখ্য বক্তা ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ অনুষ্ঠানে ভূমি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়ে একটি সচিত্র উপস্থাপন করেন। তিনি এসময় জানান, সমগ্র বাংলাদেশের ১ লক্ষ ৩৮হাজার ম্যাপ ডিজিটাইজ করাসহ স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হচ্ছে। এই ম্যাপের উপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লট-ভিত্তিক জমির শ্রেণীর একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। প্রায় ১০ হাজার ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ ই-নামজারি সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। নামজারির সাথে-সাথে এই ডিজিটাল ম্যাপ ও খতিয়ান স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হতে থাকবে। ভূমি সেবা অ্যাপ থেকে নাগরিকগণ তাদের জমির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, অবস্থান ও পরিমাপ তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাবেন।
সচিব আরও জানান অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর, ই-নামজারি, খতিয়ান ও ম্যাপসহ অন্যান্য খাত থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মাত্র ৮ মাসে ডিজিটাল ভূমিসেবা সিস্টেম থেকে সরকারি কোষাগারে প্রেরণ করা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর চালু হবার পর গত ২০২১-এর সেপ্টেম্বর থেকে এই পর্যন্ত শুধু অনলাইনে রাজস্ব সংগ্রহের হার প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ এ আদায়ের অগ্রগতি ৩২৬%। গত ২০ ফেব্রুয়ারি, এক দিনেই আদায় হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব। ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ই-নামজারি ফি আদায় হয়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন গড়ে আদায় হচ্ছে ১ কোটি টাকা।
এসময়, অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন ভূমি ব্যবস্থাপনায় সংস্কার কার্যক্রম আমাদের ধারনার চেয়ে বেশি হয়েছে। তিনি একে ‘ইন্সপায়ারিং ইনিশিয়েটিভ’ (অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোগ) হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, আরও সামনের দিকে অগ্রসর হবার সময় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার না করতে পারে।
আজকের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এর সভাপতি’ এবং ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ ফেলো’ ড দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগে বর্ষা ফলক (স্পিয়ার হেড) হিসেবে কাজ করতে পারে ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রম। তিনি মনে করেন এই কার্যক্রমে নাগরিক সম্প্রদায়কে সহযোগী হিসেবে থাকা প্রয়োজন।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা সংক্রান্ত নতুন উদ্যোগসমূহ সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বাংলাদেশের অসুবিধাগ্রস্ত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যেতে এই সংলাপ আয়োজন করা হয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এটুআই এর ন্যাশনাল পোর্টাল ইমপ্লিমেন্টেশন স্পেশালিষ্ট উপসচিব মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজ বিন ইউসুফ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এর প্রধান সমন্বয়ক রফিক আহমেদ সিরাজী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সরাসরি ও অনলাইনে উপস্থিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক অনুষ্ঠানে তাঁদের কথা জানান এবং প্রশ্ন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ওঁরাও, বাঙ্গালীসহ দেশের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।