বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীদের হঠাৎ করে বক্তব্য রহস্য ঘেরা। সরকারি তথ্যমতেও তো আমরা দেখছি প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে। করোনা টেস্ট অর্ধেকে নামিয়ে দিয়েছে সরকার। অফিস-আদালতসহ সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় সরকারের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে- কোথাও কিছু ঘটছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
শেক্সপিয়ারের রচিত হ্যামলেট নাটকের একটি বিখ্যাত উক্তির তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ফেরাতে চায়। দেশজুড়ে বড় কিছু ঘটনা আড়াল করতেই করোনা ধেয়ে আসার জিগির তোলা হচ্ছে। মিথ্যা, অসত্য, অবৈধ সত্ত্বার পতন অবশ্যম্ভাবী।
রিজভী আহমেদ বলেন, গত দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে, প্রস্তুতি নিন। এর পরদিন তথ্যমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ চলছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যকে খণ্ডন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে বলতে হলে কমপক্ষে ১৫ দিনের ডাটা থাকবে, যেখানে গত ১৫ দিন ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এমন তথ্য নির্দেশ করবে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর দৈনিক করোনার যে তথ্য দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কমছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য থেকে ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ এখনো শুরু হয়নি। আবার তারা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ যে আসবেই, ধরাবাঁধা এমন কোনো কিছু নেই। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর নির্ভর করবে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ আসবে কি না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গতকাল বুধবার করোনা সন্দেহে পরীক্ষিত মোট নমুনার ১১.৭৭ শতাংশ করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষিত মোট নমুনার ১০.৯৯ শতাংশ করোনা শনাক্ত হয়েছে। আবার ২১ সেপ্টেম্বর মোট নমুনার ১৩.৬ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ছিল। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, এপিডেমিওলজিস্ট অথবা ভাইরোলজিস্টরা হিসাব মেলাতে পারছেন না যে, বাংলাদেশে গত ১ থেকে ২ সপ্তাহ করোনা সংক্রমণের হার কম-বেশি ১২ শতাংশের মতো। সেখানে মন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ চলছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার কড়া সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, গতকাল সিইসি বলেছেন, দেশে কখনও রাতের বেলা কোনো ভোট হয়নি। পাবনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে, রাতে ভোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার বলেছেন উপ-নির্বাচনে রাতে ভোট হওয়ার সুযোগ নেই।
রিজভী আহমেদ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বীকার করে নিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতের ভোটের কথা। তার নেতৃত্বেই জাতির চরম সর্বনাশ করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের সমাধি হয়েছে। সেটার সম্পূর্ণ দায় সিইসির। অগণতান্ত্রিক নাৎসীবাদী সরকারের প্রধান সঙ্গী আপনি। সরকারের সাথে লেজুড়বৃত্তি করে আপনারা (কে এম নুরুল হুদা গং) নির্বাচন কমিশনকে এখন এক হাস্যকর তামাশার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। নির্বাচন কমিশন সরকারের ঢোল-তবলায় পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচন যে আসলে ২৯ তারিখ দিবাগত রাতেই হয়ে গিয়েছিল, সেটি এখন আর কারও কাছে গোপন নেই। দেশ-বিদেশে কোথাও সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নির্বাচন কমিশন নামের ঠুঁটো জগন্নাথ প্রতিষ্ঠান এখন কুম্ভকর্ণের ঘুম দিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে জেগে সুষ্ঠু ভোট হবে বলে বক্তব্য বিবৃতি দিলেও জনগণ তা বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রধান কারিগর হিসেবে আপনার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন