মৌলভীবাজার জেলায় কমলগঞ্জ উপজেলায় গত বছরের ২০ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন জয়নাল আবেদীন মহোদয়। যোগদানের পর থেকে তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নে রাত-দিন কাজ করেছেন।
বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক চাই কমলগঞ্জ উপজেলা শাখাকে উনি যোগদানের পর থেকে সার্বিক সহযোগিতা সব সময় করেছেন এবং নিসচা কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার বিভিন্ন সচেতনতা মূল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন এবং অনেক উৎসাহিত করেছেন নিসচা কমলগঞ্জ উপজেলা শাখাকে উনি নিসচা সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন।
এবং সাধারণ মানুষের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তিনি তাৎক্ষণিক ভূমিকা রেখেছেন। শান্তপ্রিয় কমলগঞ্জ উপজেলাকে দীর্ঘ ১৬ মাস সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালনা করেছেন। নিজের সততা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে তিনি সবার মন জয় করে নিয়েছেন। যার ফলে সবার কাছে তিনি জনবান্ধব ইউএনও হিসাবে পরিচিতও লাভ করেছেন।
জয়নাল আবেদীন প্রায় ১৬ মাস কমলগঞ্জে দায়িত্ব পালন শেষে বদলিজনিত কারণে বিদায় নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তাঁর শেষ কর্মদিবসে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি কমলগঞ্জের মানুষের সহযোগিতা আর আন্তরিকতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে ওঠেন। এসময় সরকারি কমকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাজির হয়েছিলেন। ইউএনওর কথা শুনে তাদের চোখও অশ্রুশিক্ত হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জয়নাল আবেদীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সিলেট ওসমানীনগর উপজেলায় যোগাদান করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২০ আগস্ট ইউএনও হিসাবে প্রথম কমলগঞ্জে উপজেলায় যোগদান করেন ৩৫ তম বিসিএস ক্যাডার জয়নাল আবেদীন। এখানে যোগদানের পর তিনি ধীরে ধীরে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। উপজেলার অসহায় মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের কাজের পাশাপাশি দিনরাত ছুটে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। প্রায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস এই উপজেলায়।
সরকারী সেবা পৌছাঁতে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ছুটে গেছেন। সরকারি খাসজমি উদ্ধার, নিজ অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন, শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণসহ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা থাকায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। সম্প্রতি উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মাধবপুর লেইকে “আই লাভ কমলগঞ্জ ” নামে একটি দৃষ্টিনন্দন বোর্ড স্থাপন করছেন যা এই লেইকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বই মেলা ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করে বাঙালি সংস্কৃতি মেলে ধরেছেন। ২০২৪ সালে ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খেলাধুলার প্রসারে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করছেন। উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের নারসামা রেলী নামে একজনকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন।
ইউএনও জয়নাল আবেদীনের পৃষ্ঠপোষকতায় লোকসংস্কৃতি বিষয়ক সংকলনগ্রন্থ আরণ্যক নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ভূমিকা রেখেছেন। উপজেলায় শিক্ষা, সংস্কৃতি বিস্তার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পথচলা সহজ করতে সময় সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উপজেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দূর্যোগ সময়ে সরকারি সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন জনবান্ধব ইউএনও জয়নাল আবেদীন।
কমলগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষজন বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সবসময় পাশে পেয়েছি। যেকোনো দুর্যোগ সময়ে দিনরাত সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন। সততা, আদর্শ ও কর্মদক্ষতায় মানুষের মন জয় করেছে তিনি। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যারাই তাঁর কাছে এসেছেন, তাদের সমস্যা শুনে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন।
যে কোনো কাজে যতবারই ফোন করেছে, ততবার ফোন রিসিভ করেছেন। উনার দরজা সাধারণ মানুষের জন্য সবসময় খোলা ছিলো। উনার চলে যাওয়া শুনে উপজেলার সাধারণ মানুষ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছে।
আজকের নিরাপদ সড়ক চাই কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন নিসচা কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সম্মানিত সভাপতি সাংবাদিক মোঃ আব্দুস সালাম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাসেল হাসান বক্ত,নিসচা পৃষ্ঠপুষক এ কে এম আব্দুস সালাম, নিসচা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোতাহার আলী, কার্যনির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম সজিব,আব্দুল গনি,আদিবুর রহমান,শুভাকাঙ্ক্ষী আমির হোসেন সহ অন্য সদস্য বৃন্দ।