English

21 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

নিসচা’র ইতিহাস বদলে ফেলার অপচেষ্টার প্রতিবাদে বড়লেখা ইউএনও বরাবর নিসচা’র স্মারকলিপি প্রদান

- Advertisements -

তাহমীদ ইশাদ রিপন, বড়লেখা প্রতিনিধিঃ নিরাপদ সড়ক চাই-এর ইতিহাস বদলে ফেলার অপচেষ্টার প্রতিবাদে বড়লেখায় নিরাপদ সড়ক চাই উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। নিসচা বড়লেখা উপজেলা সভাপতি তাহমীদ ইশাদ রিপন এর নেতৃত্বে একটি টিম আজ দুপুর ১২ টায় বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইউএনও নাজরাতুন নাঈন ও নবাগত ইউএনও তাহমিনা আক্তার মহোদয়ের হাতে এই স্বারকলিপি প্রদান করেন।

এসময় নিসচার পক্ষ থেকে নিসচা চেয়ারম্যান এর প্রতি বৈষম্যমুলক আচরণ ও নিসচার ইতিহাসকে বদলে ফেলার বিষয়গুলো ইউএনও মহাদয়ের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং স্বারকলিপিটি প্রধান উপদেষ্টার নিকট পৌছে দিয়ে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম সারওয়ার, নিসচা সিনিয়র সহ সভাপতি মার্জানুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম, মাসব্যাপী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব জমির উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক এনাম উদ্দিন, কার্যকরী সদস্য অসিম কর।

স্মারকলিপির মুল বিষয়বস্তু হুবহু তুলে ধরা হলো:

নিরাপদ সড়ক চাই-এর ইতিহাস বদলে ফেলার অপচেষ্টার প্রতিবাদে স্মারকলিপি

১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুুবরণ করেন জাহানারা কাঞ্চন। স্ত্রীর মৃত্যুুর শোককে
শক্তিতে পরিণত করে স্বামী চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দেশবাসীকে সড়কে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার ব্রত
নিয়ে শুরু করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলন। ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ নিছক নিয়তি নয়। এটা
মানবসৃষ্ট একটি ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে এই সামাজিক
আন্দোলনের জন্ম হয়েছে ১৯৯৩ সালের ১লা ডিসেম্বর। পরবর্তীতে সারাদেশের মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত
হয় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’।

সারাবিশ্বে যখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কোন মুভমেন্ট ছিলোনা। তখন বাংলাদেশের মতো একটি অঞ্চল থেকে
আওয়াজ তোলেন হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালা যার নাম ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি এ আওয়াজ তুলে বাংলাদেশের
মানুষসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুঝাতে সক্ষম হন যে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে
সচেতনতা বৃদ্ধি করে যে সুচনা করেছিলেন তা সত্যিকার অর্থে জনমানুষের কল্যাণ বয়ে আনছে এবং সড়কে মৃত্যুর
হাত থেকে পরিত্রাণের একটি বড় ভূমিকা রাখছে এই আন্দোলন।

এরই ধারাবাহিকতায় একটা সময়ে এসে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সারাদেশের নিসচা যোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয়
নিরাপদ সড়ক দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দিবসটি প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি ইলিয়াস
কাঞ্চনকে। একটা সময় সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছিলো ইলিয়াস কাঞ্চনকে। অনেক চড়াই-উৎরাই ও
সংগ্রামের পর যখন এই দিবসটি অর্জন করা হলো তখন এই দিবসটি নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে পরিবহন
মাফিয়ারা। যে মাফিয়ারা এই আন্দোলনটির শুরু থেকে ইলিয়াস কাঞ্চনকে দাবিয়ে রাখতে অপচেষ্টা চালিয়েছিলো।
ইলিয়াস কাঞ্চনকে হেয় করতে তাঁর ছবিতে জুতার মালা, কালি লেপনসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে থাকে। এমনকি
তাঁর চরিত্রকে কলুষিত তথা চরিত্রকে হরণ করতে চেয়েছিলো সেই মাফিয়া চক্র। এই মাফিয়া চক্র একটি নীল
নকশা করেছিলো বিদায়ী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে। কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চনের দৃঢ় মনবল ও তাঁর নেতৃত্বের
গুণাবলি এবং সর্বোপরি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সড়ক যোদ্ধাদের
অদম্য মনবলে এই পরিবহন মাফিয়ারা সেসময় সফল হতে পারেনি।

এ বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের বিদায়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের ভুমিকা ছিল
সর্বজনবিদিত। জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরশাসকের বিদায়ে মানুষ যখন হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলো তখন
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের আকাশে কালোমেঘের ঘনঘটা দেখা দিবে তা কখনোই সড়ক যোদ্ধা তথা নিসচা
কর্মিরা কল্পনাও করতে পারেনি।

যার একটি জলজ্যান্তপ্রমাণ মিললো ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৪ এর সরকারি অনুষ্ঠানে।
দিবসটির প্রস্তুতি সভায় সেখানে নিরাপদ সড়ক চাই-এর ভূমিকাকে গৌণ করে রেখেছিল। প্রস্তুতি সভাগুলোতে না
পারার মতো আমন্ত্রণ এবং উপস্থিতি সদস্য সংখার তালিকা ছোট করে নামকাওয়াস্তে আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা খ্যান্ত
থাকেননি গত সাত বছরের রীতি রেওয়াজ যেগুলো সাধারণত অতিত কর্মকান্ড পরিচালনায় কনভেনশন আকারে
চিহ্নিত হয়ে থাকে সেটারও ব্যত্যয় ঘটানো হয়। বিশেষ করে বিশেষ দিনগুলোতে সেরকম কারো অবদানে
প্রেক্ষাপট রচিত হলে তাঁকে নানা আয়োজনে সম্মান জানানো হয়, অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। যেহেতু ২২
অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ইলিয়াস কাঞ্চন এবং নিরাপদ সড়ক চাই-এর দাবি ও নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসে
এসেছিলো সেকারণে বিগত দিনে যে সরকারই ক্ষমতায় ছিলো এই দিবসে ইলিয়াস কাঞ্চনকে একটা সম্মান
জানানো হতো। ইলিয়াস কাঞ্চন সেদিন রোড সেফটির উপরে এবং সড়ক নিরাপত্তায় বিষয়ে নানা তথ্য তুলে
ধরতেন। কিন্তু ব্যাতিক্রম ঘটে এইবারের সরকারি অনুষ্ঠানে। ইলিয়াস কাঞ্চনকে অনুষ্ঠানের সম্মুখ সারিতে বসিয়ে
রাখা ছাড়া আর কোন সম্মান দেয়া হয়নি। এবং অনুষ্ঠানে নিসচাকে খাটো করে কতিপয় শিক্ষার্থীদের সম্মুখসারিতে
তুলে এনে সেখানে তারা নিয়ে আসে ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের কথা। আমরা নিসচা কর্মিরা মনে করছি
এই শিক্ষার্থীদেরকে সরকারের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর ও পরিবহন সেক্টরকে যারা লুটেপুটে
খেতে চায় তাদের একট পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। এবং তাদের চাপের মুখে ইলিয়াস কাঞ্চনকে সেখানে কোন বক্তব্য
প্রদানের সুযোগ পর্যন্তদেয়া হয়নি। এতকিছুর পরও ইলিয়াস কাঞ্চনসহ সড়ক যোদ্ধারা কষ্ট হলেও মেনে নিয়ে
অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করছিলো। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে যখন নিরাপদ সড়ক চাই-এর অস্তিত্বের ওপর আঘাত
হানে এই মর্মে যে, ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সূচনা হয় এই কথা
জোরালোভাবে তুলে ধরা হয় এই অনুষ্ঠানে। বলা হয় এদেশের মানুষের স্বপ্ন দেখা এবং সড়ক নিরাপদ করার
পরিকল্পনার কথাগুলো উঠে আসে ২০১৮ সালের পর থেকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল
পর্যন্ত ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রয়াস এবং কোটি কোটি জনতার আবেগের প্রেক্ষাপট কোথায় হারিয়ে গেল? নাকি
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক চাই ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় একটি স্বার্থন্বেসী মহল?
আমরা মনে করি এই ইতিহাসকে তারা চাপা দিতে চেয়েছিলো। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইলিয়াস কাঞ্চন তার সড়ক
যোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

আমরা এই ঘটনার তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে চাই
নিরাপদ সড়ক চাই এই আন্দোলনটি ইলিয়াস কাঞ্চন- এর একার হলেও এটা এখন ১৮কোটি মানুষের প্রাণের
দাবীতে পরিণত হয়েছে। এখন এটা সর্বজনবিদিত।

স্বার্থন্বেসী মহলটি এখানেই থেমে থাকে নি তারা ইলিয়াস কাঞ্চনকে রাজনৈতিক আবরণে মুড়িয়ে এই কৃতিত্বকে
ম্লান করে নিরাপদ সড়ক চাই এর ইতিহাসকে বদলে দিতে চায়। যা আমরা সড়ক যোদ্ধারা কখনোই মেনে নেবো
না।

এই প্রতিবাদে আমরা, নিরাপদ সড়ক চাই-এর ইতিহাস বদলে ফেলা, নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রেক্ষাপটকে
উপেক্ষা করা এবং ইলিয়াস কাঞ্চনকে অসম্মান করায় প্রতিটি সড়ক যোদ্ধার মর্মমূলে আঘাত হেনেছে। এই মর্মে
আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি এবারের এই অনুষ্ঠানে কেন এই অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা ঘটেছে মাননীয় প্রধান
উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন কার্যকর তদন্ত করে যথাযথা ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। নতুবা সারাদেশের
সড়কযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে আসবে নিজেদের অধিকার সংরক্ষিত রাখার জন্য। আমরা কারো রক্তচক্ষুকে ভয়
পাইনি, কোন হুমকিতে মাথা নত করিনি, আগামীতেও করবো না।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন