English

29 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
- Advertisement -

রানা প্লাজা ট্রাজেডির একযুগ: এখনো পোড়ে পোশাক শ্রমিকের বুক

- Advertisements -

এস এম আজাদ হোসেন: ২৪ এপ্রিল ২০১৩। সকালটা শুরু হয়েছিল এক রোদেলা আশ্বাস নিয়ে। কিন্তু সাভারের রানাপ্লাজা ভবনের নিচে চাপা পড়ে সে দিনই নিঃশেষ হয়ে যায় হাজারো শ্রমিকের জীবনের রোদ। ৯ তলা ভবনটি ভেঙে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে, ধুলোর স্রোতে ঢাকা পড়ে যায় হাজারো আর্তনাদ। আজ, একযুগ পরও সেই ধুলো এখনও জমে আছে বাংলাদেশের পোশাক খাতের বিবেকের ওপর।

রানা প্লাজার ধস কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। এটি ছিল এক নির্মম অবহেলার ফলাফল। ভবনের ফাটল উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ, জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং সিস্টেমের নিষ্ক্রিয়তা-সব মিলিয়ে এটি এক প্রলয়। মারা যান ১ হাজার ১৩৪ জন, আহত হন আরও ২ হাজারের বেশি। এটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে পোশাক কারখানার সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রাজেডি।

ফিচারটি লিখতে গিয়ে বারবার চোখে ভাসে সেই দৃশ্য-একজন মা তার মেয়ের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে, জানে না সে বেঁচে আছে কিনা। উদ্ধারকর্মীরা দিনের পর দিন কাজ করছেন, নিখোঁজদের খুঁজছেন। আর বিশ্বের চোখ তখন সাভারে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সত্যিকারের চিত্র তখন উন্মোচিত হয়।

এ ট্রাজেডির পরে অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছে। তৈরি পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ভবন পরিদর্শন, আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক মূল্যায়ন ইত্যাদি। কিছু উন্নয়ন হয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে-পরিবর্তনটা কতটা টেকসই? কতটা মানবিক?

রানা প্লাজার ট্র্যাজেডি কেবল একটি ভবন ধস নয়, এটি ছিল রাষ্ট্রের কাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতীক। এটি তুলে ধরেছিল এক শ্রেণির মালিকের লোভ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং শ্রমিকের জীবনের অসহায় বাস্তবতা। যাদের ঘাম আর রক্তে গড়ে ওঠে শিল্প, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কি কেবল প্রতিশ্রুতির বিষয়?

এখনো যে প্রশ্নগুলো বিদ্ধ করে:
ট্র্যাজেডির মূল দায়ীদের বিচার কি সম্পূর্ণ হয়েছে?
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কি পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পেয়েছে?
পোশাক শিল্পে কি শ্রমিকদের মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে?

একযুগ পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। পোশাক খাত এখনও দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু উন্নয়নের গল্পের ফাঁকে পড়ে থাকে অসংখ্য নামহীন শ্রমিকের কান্না। রানা প্লাজার ছায়া এখনো বিস্তৃত। নতুন ভবন হয়েছে, নতুন কারখানা হয়েছে, কিন্তু সেই ১১৩৪ প্রাণের মূল্য কি পরিশোধ হয়েছে?
আজকের বাংলাদেশ যখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, তখন রানা প্লাজার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে নিশ্চয়তাও জরুরি। শুধু স্মরণ করলেই হবে না, রানা প্লাজা যেন হয় শিক্ষা ও শপথের প্রতীক। শ্রমিক যেন শুধু উৎপাদনের উপাদান না হয়ে, হয় একজন মানুষ হিসেবে বিবেচিত।
শেষে বলি, রানা প্লাজা আমাদের লজ্জা, কিন্তু তা হতে পারে আমাদের জাগরণও-যদি আমরা তা থেকে শিখি, বদলাই এবং এগিয়ে যাই।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন