ফেব্রুয়ারীতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত জানুয়ারী থেকে ৮১ লাখ ৬০ হাজার ৮৪৭ জন কম হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলা সামগ্রীকভাবে কমে আসছে।গত দুই মাসের হিসেবে অন্তত তাই প্রতিয়মান হয়।আমরা যদি শুধু জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারী মাসের তুলনা করি অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টা থেকে ১ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৮ দিনে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৩০ জন করে।
যেখানে জানুয়ারী মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১ কোটি ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৩০২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৭ জন করে। অর্থাৎ জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারীতে ৮১ লাখ ৬০ হাজার ৮৪৭ মানুষ কম আক্রান্ত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারীর ২৮ দিনে মোট মৃত্যু ৩ লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ জনের বা প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার ৯১৩ জন করে। যেখানে জানুয়ারীতে মোট মৃত্যু ছিল ৪ লাখ ১ হাজার ৬৭৬ জনের বা গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু ছিল ১৩ হাজার ৩৮৯ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে মৃত্যু কমেছে ৯৬ হাজার ১১২ জন। অর্থাৎ জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুটোই উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
আমরা যদি গত ২৮ দিনে করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যাটা দেখি তাহলে দেখা যায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৫১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ জন বা দিনে গড়ে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৬১ জন করে। জানুয়ারীতে সুস্থ হয়েছিলেন প্রতিদিন গড়ে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪২৩ জন করে।অর্থাৎ ফেব্রুয়ারীতে সুস্থতার হারও বেড়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, বিশ্ব ক্রমশ করোনা থেকে সুস্থতার দিকে গেলেও কিছু দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে।এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ফ্রান্স,যুক্তরাজ্য,তুরস্ক,ইতালী,স্পেন,জার্মানী,মেক্সিকো,পোলান্ড,ইরান,ইউক্রেন ও চেসনিয়া উল্লেখযোগ্য।এসব দেশে করোনা আক্রমন ও মৃত্যু কমলেও সহনীয় পর্যায়ে পৌছেনি।
এবার যদি একনজরে ফেব্রুয়ারী মাসে শীর্ষ ২০টি দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারী মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮৮ হাজার ৮৫৭ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৪ জন।
ভারতে ফেব্রুয়ারী মাসে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার ৬২৩ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭১ জন।
ব্রাজিলে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫২৮ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৪৮ হাজার ৯০ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৭৭ জন।
রাশিয়ায় ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪০ জন।যা প্রতিন গড়ে ১০ হাজার ৮৮৯ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৯০ জন।
যুক্তরাজ্যে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার ৮৩৫ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৩ হাজার ৮১৪ জন কম হয়েছে।
ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৯ হাজার ৯৫৯ জন করে।গত এক মাসে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা কিঞ্চিত কমেছে।
স্পেনে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার ৭৮৮ জন করে।গত একমাসে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৮৮ জন কম হয়েছে।
ইতালীতে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৩৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার ২৯৪ জন করে। জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৮৬১ জন কম হয়েছে।
তুরস্কে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ১২৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৪ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে তুরস্কে আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ১০৪ জন কম হয়েছে।
জার্মানিতে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৬৩৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ২৩ জন করে।গত একমাসে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমেছে।
কলম্বিয়ায় ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ৬০০ জন করে।গত একমাসে কলোম্বিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ৫০৯ জন কম হয়েছে।
আর্জেন্টিনায় ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ১২৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৪৩৩ জন করে।গত একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ২১০ জন কম হয়েছে।
মেক্সিকোতে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৯৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ১০৩ জন করে।গত একমাসে মেক্সিকোতেও আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৬ জন কম হয়েছে।
পোলান্ডে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬০১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৯১৪ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে পোলান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
ইরানে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার ৬১৩ জন করে।গত একমাসে ইরানে সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে।
সাউথ আফ্রিকায় ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ২৩২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ১৫১ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে সাউথ আফ্রিকায় আক্রান্তের ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৩ জন কম হয়েছে।
ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫৮৫ জন করে। জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে ইউক্রেনে আক্রান্তের ৪২ হাজার ৫৩৬ জন কম হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩২০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৯ হাজার ১৫৪ জন করে।ইন্দোনেশিয়ায় এক মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ৮৬৯ জন কম হয়েছে।
পেরুতে ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৬৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৮৪২ জন করে।জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে পেরুতে আক্রান্তের ৭১ হাজার ১৫৮ জন বেড়েছে।
চেসনিয়ায় ফেব্রুয়ারী মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৭০৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৯৫৪ জন করে। জানুয়ারী মাস থেকে ফেব্রুয়ারীতে চেসনিয়ায় আক্রান্তের ১৩ হাজার ১৯০ জন বেড়েছে।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বর্তমান পৃথিবীর মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তাতে করে সম্পর্কে চিড় ধরা ও ভঙ্গুর এক পৃথিবীকে দেখছে সবাই। যা মহামারির চেয়েও ভয়ঙ্কর।
মিউনিখে নিরাপত্তা পরিষদের কনফারেন্সে গুতেরেস বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ গোটা পৃথিবীতে এক্স-রে করে দিয়েছে। আর তাতে করে পৃথিবীর প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এসেছে। মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে বর্তমান পৃথিবীর। যে পৃথিবীতে সম্পর্কের চিড় ধরা ও ভঙ্গুরতা প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো আরও বড় হচ্ছে, জটিল হচ্ছে।’
অন্যদিকে এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে ঐক্য ও বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা নেই উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বৈশ্বিক সহায়তার ভঙ্গুরতা স্পষ্ট। সহযোগিতার যোগান অপর্যাপ্ত। আর এই চিড় ধরা ও ভঙ্গুরতার ভয়াবহতা মহামারিকেও ছাড়িয়ে যাবে।’
সভায় জাতিসংঘের মহাসচিবসহ অন্যান্য নেতারা আরও একবার বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। বর্ণনা করেন মহামারি মোকাবিলায় ঐক্যের গুরুত্ব।
মহাসচিব গুতেরেস এরপর করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি আবারও টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সমতা ও পর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করেন। বিশ্বের শতাধিক দেশে এখনো করোনার টিকা না পৌঁছানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি সমালোচনা করেন বিশ্বের মাত্র ১০টি দেশের হাতে ৭৫ শতাংশ করোনার টিকা থাকার বিষয়টিরও। শেষ কথা হল,কোনো দেশই আগাম এমনটা বলতে পারে না মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হয়ে গেছে।
লেখকঃ
সাংবাদিক,সমাজকর্মী।
email: smazadh@yahoo.com