জানুয়ারীতে বিশ্বব্যাপী করোনায় সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ৭০৩ জন বা দিনে গড়ে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪২৩ জন করে।
মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলা থেমে নেই।চলমান এ আগ্রাসনের শেষ কবে হবে তা এখনো অজানা। প্রথম আক্রান্তের ১ বছর ১মাস পরে এসে আমরা যদি শুধু জানুয়ারী ২০২১ মাসের হিসেব করি অর্থাৎ ১ জানুয়ারী’২১ সকাল ১০টা থেকে ৩১ জানুয়ারী’২১ সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩০ দিনে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৩০২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৭ জন করে।যেখানে ডিসেম্বর মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১ কোটি ৯৪ লাখ ৬২ হাজার ১৭৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৯ জন করে। অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৬ মানুষ কম আক্রান্ত হয়েছে।
জানুয়ারীতে ৩০ দিনে মোট মৃত্যু ৪ লাখ ১ হাজার ৬৭৬ জনের বা প্রতিদিন গড়ে ১৩ হাজার ৩৮৯ জন করে। যেখানে ডিসেম্বর মাসে মোট মৃত্যু ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জনের বা গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু ছিল ১১ হাজার ২৮৫ জন করে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস থেকে জানুয়ারী মাসে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত কিছুটা কমলেও মৃত্যু বেড়েছে ৬৩ হাজার ১২৬ জন।
আমরা যদি গত ৩০ দিনে করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যাটা দেখি তাহলে দেখা যায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ৭০৩ জন বা দিনে গড়ে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪২৩ জন করে। জানুয়ারীতে পূর্বের মাস থেকে সুস্থতার সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ৬ লাখ ৩১ হাজার ৯৬৬ জন।
এখানে উল্লেখ্য,জানুয়ারীতে করোনার থাবা কোন কোন দেশে বেড়েছে আশংকাজনকহারে।আবার কোন কোন দেশে কমেছেও।জানুয়ারীর প্রথমদিন আক্রান্তের ক্রমানুসারে প্রথম বিশটি দেশ জানুয়ারীর শেষ দিনে এসে অনেকটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। যেমন জানুয়ারীর প্রথমদিনে আক্রান্তের দিক দিয়ে প্রথম ২০টি দেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র,ভারত,ব্রাজিল, রাশিয়া,ফ্রান্স,যুক্তরাজ্য,তুরস্ক,ইতালী,স্পেন,জার্মানী,কলোম্বিয়া,আর্জেন্টিনা,মেক্সিকো,পোলান্ড,ইরান,ইউক্রেন,সাউথ আফিকা,পেরু,নেদারল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া।
কিন্তু ৩১ জানুয়ারী এসে এ চিত্রে বেশ রদবদল ঘটেছে।তালিকার সর্বোচ্চ ৪টি স্থানে যুক্তরাষ্ট্র,ভারত,ব্রাজিল,রাশিয়া স্থির থাকলেও অন্যান্য অবস্থানে রদবদল হয়েছে।এরপর যথাক্রমে আছে- যুক্তরাজ্য,ফ্রান্স,স্পেন,ইতালী,তুরস্ক,জার্মানী,কলোম্বিয়া,আর্জেন্টিনা,মেক্সিকো,পোলান্ড,সাউথ আফিকা,ইরান,ইউক্রেন, পেরু, ইন্দোনেশিয়া ও চেসনিয়া।
এবার যদি একনজরে ৩০দিনে শীর্ষ ২০টি দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ১৪ হাজার ৬২৫ জন করে।ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৬ জন।
ভারতে ৩০ দিনে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৯৯৪ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ভারতে।
ব্রাজিলে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৫ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৫১ হাজার ৯০০ জন করে।ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে।
রাশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৫৩০ জন।যা প্রতিন গড়ে ২৩ হাজার ৩৫১ জন করে।ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
যুক্তরাজ্যে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৯২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪৫ হাজার ৪৪০ জন করে।গত এক মাসে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ দ্বিগুণ বেড়েছে।
ফ্রান্সে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৯ হাজার ২৪৬ জন করে।গত এক মাসে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।
স্পেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৯ হাজার ৩৬৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার ৩১২ জন করে।গত একমাসে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩গুণেরও বেশী বেড়েছে।
ইতালীতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার ২৭০ জন করে।গত এক মাসে ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কমেছে।
তুরস্কে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬২৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৯ হাজার ২২১ জন করে।
জার্মানিতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৬ হাজার ২৪২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৬ হাজার ৮৭৫ জন করে।গত একমাসে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
কলম্বিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৩৪৪ জন করে।গত একমাসে কলোম্বিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দেড়গুণ।
আর্জেন্টিনায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮ হাজার ৩৩৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ২৭৮ জন করে।গত একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
মেক্সিকোতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৪ হাজার ৬৭৯ জন করে।গত একমাসে মেক্সিকোতেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ।
পোলান্ডে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার ৫৭৫ জন করে।
সাউথ আফ্রিকায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার ৬৬৯ জন করে। গত একমাসে প্রায় ২গুণ সংক্রমণ বেড়েছে।
ইরানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৪৩৩ জন করে।গত একমাসে ইরানে সংক্রমণ কমেছে।
ইউক্রেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ৬৯৮ জন করে।
পেরুতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৪০৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ১৪ জন করে।গত একমাসে পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩১ হাজার ১৮৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ৪০ জন করে।ইন্দোনেশিয়ায় এ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২গুণ বেড়েছে।
চেসনিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫১৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার ৯১৭ জন করে।
এদিকে বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিওএইচও)র সহকারী মহাসচিব মারিয়েঙ্গালা সিমাও।তিনি আরো বলেন, কারোরই আতংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনি ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছেন।
ডব্লিওএইচও’র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লাইভে তিনি আরো বলেন, বিশ্বের সকল দেশের সকল জনগণ যাতে ভ্যাকসিন পায় সে লক্ষ্যে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
সিমাও বলেন, বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ৪০ টিরও বেশি উচ্চ আয়ের দেশ।
ডব্লিওএইচও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্যে তারা ৫টি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানীর সাথে ২শ কোটি ডোজ পাওয়ার চুক্তি করেছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের ২০ শতাংশ লোককে তারা ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসবে।
সিমাও বলেন, আমরা আশা করছি ফেব্রয়ারির শেষ নাগাদ দেশগুলোতে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সরবরাহ সম্ভব হবে।
শেষ কথা হল, কোনো দেশই আগাম এমনটা বলতে পারে না মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হয়ে গেছে।
লেখকঃ
সাংবাদিক,সমাজকর্মী।
০১৭১৬৪৯৩০৮৯
email: smazadh@yahoo.com