বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী এখনও প্রবল প্রতাপে চলছে। সাত মাসের অধিক সময় ধরে চলমান এ আগ্রাসনের শেষ কবে হবে তা এখনো অজানা। প্রথম আক্রান্তের সাড়ে ৬ মাস পরে এসে আমরা যদি শুধু জুলাই মাসের হিসেব করি অর্থাৎ ১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ৩১ জুলাই সকাল ১০টা পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী ৩০ দিনে বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৫০ জন করে।
৩০ দিনে মোট মৃত্যু ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৩০ জনের যা প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ৪২৭ জন করে।এর মানে হলো বিশ্বব্যাপী করোনার আগ্রাসন একটুও কমেনি।এর গত প্রকৃতি বুঝে ওঠা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
তবে এই একমাসে করোনার থাবা কোন কোন দেশে বেড়েছে আশংকাজনকহারে। এতে করে জুলাইয়ের প্রথমদিন আক্রান্তের ক্রমানুসারে প্রথম বিশটি দেশ জুলাইয়ের শেষ দিনে এসে অনেকটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। যেমন জুলাইয়ের প্রথমদিনে প্রথম ২০টি দেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, স্পেন, পেরু, চিলি, ইতালী, ইরান, মেক্সিকো, পাকিস্তান, তুরস্ক, জার্মানি, সৌদি আরব, ফ্রান্স, সাউথ আফ্রিকা, বাংলাদেশ ইত্যাদি।
কিন্তু মাসের শেষে অর্থাৎ ৩১ জুলাই এসে এচিত্রে বেশ রদবদল ঘটেছে।তালিকার সর্বোচ্চ দুটি স্থানে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল স্থির থাকলেও ৩য় অবস্থানে উঠে এসেছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। এরপর যথাক্রমে রাশিয়া, সাউথ আফিকা, মেক্সিকো পেরু, চিলি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইরান, কলম্বিয়া, পাকিস্তান, সৌদিআরব, ইতালী, বাংলাদেশ, তুরস্ক, জার্মানী, ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সাউথ আফিকার অবস্থান জুলাইয়ের ১ তারিখে ১৭ নম্বরে ছিল।সংক্রমণ এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে ৩১ জুলাইয়ে এসে সাউথ আফ্রিকার অবস্থান পঞ্চমে উঠে এসেছে। ৩০ দিনে এখানে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৬০ জন।যা প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার ৩২ জন করে। অপরদিকে শীর্ষ বিশে কলম্বিয়া ছিল না। কিন্তু আক্রমণ এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে,৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কলম্বিয়া উঠে এসেছে ১২তম স্থানে। ৩০ দিনে এখানে ২ লাখ ১ হাজার ৪০১জন আক্রান্ত হয়েছেন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৭১৩ জন করে।আবার ১ জুলাই ১১তম স্থানে থাকা মেক্সিকো উঠে এসেছে ৬ নম্বরে।মেক্সিকোতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৬০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৭৯ জন করে।
এবার যদি একনজরে ৩০দিনে আমাদের আলোচনার দেশগুলিতে করোনার আক্রমণের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৭ হাজার ১৩২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬৩ হাজার ৫৭১ জন করে।
৩০ দিনে ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৫ হাজার ২৯৪ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার ১৭৬ জন করে।
ভারতে ৩০ দিনে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার ৪৫২ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।
রাশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫০ জন।যা প্রতিন গড়ে ৬ হাজার ২২২ জন করে।
সাউথ আফ্রিকায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৬০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ৩২ জন।
মেক্সিকোতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৬০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৭৯ জন করে।
পেরুতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ২৭৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৭৬ জন করে।
চিলিতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ হাজার ১৪৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৪৭১ জন করে।
স্পেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ১৫৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২০৫ জন করে।
যুক্তরাজ্যে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৭৬৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮২৫ জন করে।
ইরানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৮৬৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৪৬২ জন করে।
কলম্বিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১ হাজার ৩৩১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৭১১ জন করে।
পাকিস্তানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৬৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ২৬৯ জন করে।
সৌদি আরবে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৩৯৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৭৮০ জন করে।
ইতালীতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৮০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২১৯ জন করে।
বাংলাদেশে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৪০৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৯৮০ জন করে।
তুরস্কে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৯৮৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৯৯৯ জন করে।
জার্মানিতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৮২১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪৬০ জন করে।
ফ্রান্সে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৭৭২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭২৬ জন করে।
আর্জেন্টিনায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৪০০ জন করে।
মোদ্দা কথা হল দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পরেও কিন্তু অনেকটাই চিনেবুঝে ওঠা যায়নি এই অভিন্ন নবাগত শত্রুকে। মোকাবেলার স্থায়ী পথতো দূরের কথা,কীভাবে এই সংক্রমণ থেকে নিজেদের দূরে রাখা সম্ভব, কোন পথে এর সংক্রমণ ছড়ায়, কীভাবে আটকানো যায় এর দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এসব নিয়েও হোঁচট খেতে খেতে এগোতে হচ্ছে। সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে মহামারি মানে এই নয় যে জীবন থেমে থাকবে। আমাদেরকে করোনাভাইরাসের সঙ্গেই বসবাস করা শিখতে হবে। আর এটা করতে হবে নিজেদের ও অন্যদের নিরাপদে রাখার মাধ্যমে। বিশেষ করে যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তাদের।
লেখকঃ সাংবাদিক,সমাজকর্মী।
০১৭১৬৪৯৩০৮৯
email: smazadh@yahoo.com
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন