English

19 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

‘একটি অসভ্য গান ও কিছু কথা’

- Advertisements -

‘নাম আমার দোলা, আমি আগুনেরই গোলা, তুই কোন বাপের পোলা, সামনে পড়িস না’ কথাগুলো আমার না। কথাগুলো একটি গানের। হালের আলোচিত একটি সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে এটি প্রকাশিত হবে।

ইতোমধ্যে গানটির প্রমো নাকি প্রকাশ করা হয়েছে। গানটি গেয়েছেন এ প্রজন্মের এক শিল্পী। শিল্পীর নামটি গানের প্রথম লাইনেই রয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, গানটির ভিডিও নির্মিত হয়েছে, বলিউডের এক তারকা কোরিওগ্রাফার ও নির্মাতাকে দিয়ে। গানটির কথাও লিখেছেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম মালিক। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বাংলা গান এবং সংস্কৃতিকে বিশ্বময় পরিচয় ও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

একজন শ্রোতা হিসেবে আমার মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে, গানের এ ধরনের কথা কি আমাদের সংস্কৃতির সভ্যতাকে প্রতিনিধিত্ব করে? এ ধরনের কথার গান বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়ে কি এটাই প্রমাণ করতে চাইছি, আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সভ্যতা এরকমই? যারা গানের সমঝদার শ্রোতা ও বোদ্ধা, তারা নিশ্চয়ই তা মনে করেন না।

তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবেন না, এ ধরনের অভব্য, অরুচিকর ও সভ্যতা বিবর্জিত কথার গান আমাদের সমৃদ্ধ সঙ্গীতের পরিচায়ক। অস্বীকার করার উপায় নেই, এখন বেশিরভাগ মানুষ ‘ভাইরাল মিডিয়া’র প্রতি ঝুঁকেছে। তাদের এই ঝুঁকে পড়াকে পুঁজি করার জন্যই একশ্রেণীর অপসংস্কৃতির ধারক-বাহক যতভাবে পারা যায়, ভাইরাল হওয়ার জন্য আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কনটেন্ট বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বলা অনাবশ্যক, বেশিরভাগ মানুষের সাধারণ প্রবণতা এই যে, নেতিবাচক বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ প্রবল।

আমাদের সমাজে শুধু নয়, বিশ্বের সব সমাজেই অনেক কুৎসিৎ, কদাকার ও অকল্পনীয় নেতিবাচক ঘটনা ও কথাবার্তা হয়ে থাকে। এগুলোকে সভ্য ও সচেতন মানুষ তাদের সুকুমারবৃত্তি ও সুকর্মের মাধ্যমে প্রতিহত করে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ওটা নয়, এটা। দুঃখের বিষয়, আমাদের সেই সচেতন শ্রেণীরই একটি অংশ আজ সমাজের কুৎসিৎ বিষয়গুলোই বেশি করে তুলে ধরছে, শুধু মাত্র সস্তা আলোচনায় আসার জন্য। একদিকে নিজেদের সুশীল ভাবছে, অন্যদিকে আমাদের সংস্কৃতিকে বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেয়ার নামে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। তারা আমাদের সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং মাধুর্যকে ধারণ করতে না পেরে, সৃষ্টিশীল ধারাবাহিকতা ধরতে ব্যর্থ হয়ে, বিকৃত ও অশ্লীল কথার মাধ্যমে সঙ্গীতকে বিশ্বায়নের কথা বলছে।

এই অসভ্য ও ইতর শ্রেণীকে যদি সচেতন শ্রেণীর মানুষ এখনই প্রতিহত না করে, তাহলে আমাদের সমাদৃত সঙ্গীত ও সংস্কৃতি বিশ্বে ব্যাপক বদনামের শিকার হবে। আমাদের সংস্কৃতি ‘অসভ্য’ হিসেবে গণ্য হবে।

লেখক: কামরুল হাসান দর্পণ
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন