ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জন,পুরো বছরে ১৮ লাখ ১২ হাজার ১০৮ জন।
আক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলা বিশ্বব্যাপী প্রবল প্রতাপে চলছে।চলমান এ আগ্রাসনের শেষ কবে হবে তা এখনো অজানা। প্রথম আক্রান্তের ১ বছর পরে এসে আমরা যদি শুধু ডিসেম্বর ২০২০ মাসের হিসেব করি অর্থাৎ ১ ডিসেম্বর’২০ সকাল ১০টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর’২০ সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩০ দিনে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৯৪ লাখ ৬২ হাজার ১৭৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৯ জন করে।যেখানে নভেম্বর মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১ কোটি ৭২ লাখ ২৭ হাজার ৭৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৩৬ জন করে। অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে প্রায় ২২ লাখ ৩৫ হাজার ১০৩ মানুষ বেশী আক্রান্ত হয়েছে।
ডিসেম্বরে ৩০ দিনে মোট মৃত্যু ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জনের বা প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার ২৮৫ জন করে। যেখানে নভেম্বর মাসে মোট মৃত্যু ছিল ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৫ জনের বা গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু ছিল ৯ হাজার ৮৩৭ জন করে। অর্থাৎ নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয় সংখ্যা বেড়েছে।
আমরা যদি গত ৩০ দিনে করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যাটা দেখি তাহলে দেখা যায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭৩৭ জন বা দিনে গড়ে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৫৮ জন করে। ডিসেম্বরে পূর্বের মাস থেকে সুস্থতার সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ৪২ লাখ ১৭ হাজার।
এখানে উল্লেখ্য,ডিসেম্বরে করোনার থাবা কোন কোন দেশে বেড়েছে আশংকাজনকহারে।আবার কোন কোন দেশে কমেছেও।ডিসেম্বর এর প্রথমদিন আক্রান্তের ক্রমানুসারে প্রথম বিশটি দেশ ডিসেম্বর এর শেষ দিনে এসে অনেকটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। যেমন ডিসেম্বর এর প্রথমদিনে প্রথম ২০টি দেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র,ভারত,ব্রাজিল, রাশিয়া,ফ্রান্স,স্পেন,যুক্তরাজ্য,ইতালী,আর্জেন্টিনা,কলোম্বিয়া,মেক্সিকো,জার্মানী,পোলান্ড, পেরু,ইরান,সাউথ আফিকা,ইউক্রেন,তুরস্ক,বেলজিয়াম ও ইরাক।
কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর এসে এচিত্রে বেশ রদবদল ঘটেছে।তালিকার সর্বোচ্চ ৫টি স্থানে যুক্তরাষ্ট্র,ভারত,ব্রাজিল,রাশিয়া ও ফ্রান্স স্থির থাকলেও অন্যান্য অবস্থানে রদবদল হয়েছে।এরপর যথাক্রমে আছে যুক্তরাজ্য, ইতালী,তুরস্ক,স্পেন,জার্মানী,কলোম্বিয়া,আর্জেন্টিনা,মেক্সিকো,পোলান্ড,ইরান,ইউক্রেন, সাউথ আফিকা,পেরু,নেদারল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে,ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্ক সংক্রমণ তালিকার ১৮তম স্থানে থাকলেও করোনা সংক্রমন এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে ডিসেম্বরের শেষে এসে তালিকার ৭ নম্বরে উঠে এসেছে। এছাড়া পুরো ইউরোপ জুড়ে নতুন করে করোনা সংক্রমন আগের মাসের চেয়ে বেড়েছে।এদিকে নভেম্বরে শীর্ষ বিশে না থাকলেও ডিসেম্বরে নেদারল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া এ তালিকায় উঠে এসেছে।
এবার যদি একনজরে ৩০দিনে শীর্ষ ২০টি দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৯ হাজার ৮৯৮ জন করে।নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৫ জন।
ভারতে ৩০ দিনে ৮ লাখ ৪ হাজার ২৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২৬ হাজার ৮০১ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ভারতে।
ব্রাজিলে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৯২ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৪২ হাজার ৭৯০ জন করে।নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে।
রাশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬ জন।যা প্রতিন গড়ে ২৭ হাজার ৮৬৩ জন করে।নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
ফ্রান্সে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার ৬০০ জন করে।গত এক মাসে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
যুক্তরাজ্যে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৩ হাজার ২৩১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২৬ হাজার ৭৭৪ জন করে।গত এক মাসে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ বেড়েছে।
তুরস্কে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫১ হাজার ৮৪৮ জন করে।তুরস্ক নভেম্বরে ১৮তম স্থানে ছিল,সংক্রমণ একমাসে প্রায় সাড়ে ৬গুণ বেড়েছে এবং তালিকার ৭ম স্থানে উঠে এসেছে।
ইতালীতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ১৩৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১৬ হাজার ৭১ জন করে।গত এক মাসে ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
স্পেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৫৪৯ জন করে।গত একমাসে স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
জার্মানিতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৪১ হাজার ২২৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২১ হাজার ৩৭৪ জন করে।গত একমাসে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ লাখ।
কলম্বিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯ হাজার ৬৫৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ৩২২ জন করে।গত একমাসে কলোম্বিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
আর্জেন্টিনায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৩১৩ জন করে।গত একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
মেক্সিকোতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৯ হাজার ৮১৫ জন করে।গত একমাসে মেক্সিকোতেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখের অধিক।
পোলান্ডে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৯ হাজার ৬৮৭ জন করে।
ইরানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৮৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৫৫৬ জন করে।গত একমাসে ইরানে সংক্রমণ কমেছে।
ইউক্রেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার ৭২৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ৪২৪ জন করে।
সাউথ আফ্রিকায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ৩০৫ জন করে। গত একমাসে প্রায় ৪গুণ সংক্রমণ বেড়েছে।
পেরুতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৯ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৬৬৪ জন করে।গত একমাসে পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।
নেদারল্যান্ডে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার ৬০১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার ২০ জন করে।নেদারল্যান্ডে ডিসেম্বরে সংক্রমণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৭৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার ৮৩ জন করে।ইন্দোনেশিয়ায় এ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩গুণ বেড়েছে।
এদিকে করোনার নতুন রুপ ধরা পড়েছে।এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হানস ক্লুগ জানিয়েছেন, ইউরোপের ৮টি দেশে ভিওসি-২০২০১২ নামে বিবর্তিত নতুন ধরণের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
টুইটারে এক পোস্টে ক্লুগ লিখেছেন, ‘হু ইউরোপিয়ান অঞ্চলের ৮টি দেশে কোভিড ১৯’র নতুন ভ্যারাইটি ভিওসি-২০২০১২/০১ শনাক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভ্যারাইটি কোভিড ১৯’র চেয়ে দ্রুত ছড়ায় এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের সংক্রমিত করে। এর প্রভাব নিরুপনে গবেষণা চলমান রয়েছে, এ সময়ে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলাসহ বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের আহবান জানিয়েছেন।
শেষ কথা হল,কোনো দেশই আগাম এমনটা বলতে পারে না মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হয়ে গেছে।
লেখকঃ সাংবাদিক,সমাজকর্মী
০১৭১৬৪৯৩০৮৯
email: smazadh@yahoo.com