মিজানুর রহমান: সড়ক-মহাসড়কে হরহামেশাই দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছে অগণিত মানুষ। শুধু মহাসড়কে নয়, আঞ্চলিক মহাসড়ক, সড়ক, এমনকি গ্রামীণ সড়কেও মারাত্মক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির খবর আমত প্রায়ই পেয়ে থাকি। আবার কখনও কখনও নিজেরাও প্রত্যক্ষ করি। এসব দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ আহত হয়ে ধুকে ধুকে ভুগে মরছেন। আবার অনেকে আপনজন হারানোর বেদনার বোঝা কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি কিংবা অঙ্গহানি-এর কোনটি আমাদের কাম্য নয়। আমরা এসব দেখতে বা শুনতে চাই না। আমরা এসব দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির অবসান চাই। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, নিরাপদ জীবন চাই। কিন্তু চাইলেই কি সেটা সম্ভব? না। এসবের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তার জন্য শ্রম দিতে হবে, কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেই কাজটি করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি।
একটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের ঐ দেশের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগের অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভোগের অধিকার রয়েছে। একই সাথে অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, অধিকার বা সুযোগ সুবিধা ভোগের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকের বেশ কিছু দায়িত্বও রয়েছে।
সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা, যানজট সহ নানা ধরণের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে মূল কারণ বা সব কারণের ভিত্তি হলো চালক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্য বোধের অভাব। নৈতিক শিক্ষা এমন একটি শিক্ষা যা মানুষকে বিবেকবান করে এবং নীতিগত জীবন যাপন করতে শেখায়। মূল্যবোধ এমন একটি চেতনা বা অনুভূতি যা মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে সঠিক জীবন যাপন করতে তাড়িত করে। একজন চালক নিয়ম মেনে স্বাধীন ভাবে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সুযোগ পাবেন- এটা তার অধিকার। কিন্তু যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে অন্যের পথ রোধ করা, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা নীতিনৈতিকতা বিরোধী এবং স্বেচ্ছাচারিতা। চালকদের এই নীতি নৈতিকতা বিরোধী চিন্তা, কর্মকান্ড এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। অন্য দিকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ি যানবাহনের বেপরোয়া গতি, অনর্থক প্রতিযোগিতা, ওভার লোড, মাদকাসক্তি, উল্টোপথে চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানা ইত্যাদি। কিন্তু একজন চালকের মধ্যে যদি নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ থাকে অবশ্যই তিনি এসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন। কাজেই দুর্ঘটনা প্রশমনের জন্য চালক ও সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়া/করা প্রয়োজন।
এই সচেতনতার জন্য প্রয়োজন তাদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা বিস্তার ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। তাহলে একজন চালক নিজের এবং অন্যের জীবনের মূল্য দিতে শিখবে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের অনিয়মের কথা শোনা যায়। তার জন্যও দায়ি তাদের অনৈতিকত এবং মানবিক মূল্যবোধের অভাব। অনেক সময় পথচারীদের খামখেয়ালী বা অসতর্কতার জন্য দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনা জনিত প্রাণহানি ঘটে থাকে।
সর্বোপরি বলা যায় যে, যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনা জনিত প্রাণহানি সহ অন্যান্য অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো চালকদের প্রথমে নিজের জীবনের মূল্য দিতে শেখা। এজন্য দরকার তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য দরকার তাদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
এই কাজটি করার দায় শুধু সরকারের নয়, আমাদের সকলের। আপনারা জ্ঞাত আছেন যে, ইলিয়াস কাঞ্চন নিজে একজন ভূক্তভোগী। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি তার স্ত্রী (জাহানারা কাঞ্চন)কে হারাবার পর থেকে তিনি সাংগঠণিক ভাবে সহকর্মী/সহযোদ্ধা, সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেশ জুড়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এমন কি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে আসছেন। নিরাপদ সড়কের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। আসুন আমরা নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। সবাই মিলে সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘না’ বলি। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকে সফল করি।
লেখক: মিজানুর রহমান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট