এস.এম. হাফিজুর রহমান: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বেগারীতলা বাজার এখন রীতিমতো সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়েছে। সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে সড়কেই পথচারী আক্রান্ত হয় কিন্তু বেগারীতলা বাজার এই চরিত্রের ব্যতিক্রম। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদে থাকা দোকানী ও খরিদ্দার কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের হাত থেকে।
গেল বছর ৩ ডিসেম্বর ২০২২, যশোর দিক থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের হেলপার এক কাকডাকা ভোরে প্রচন্ড ঘুমভরা চোখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্দয়ভাবে দোকান মালিক ও খরিদ্দারসহ পাঁচটি তরতাজা জীবন কেড়ে নেয়।
বেগারীতলা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মারুফ হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, চার থেকে পাঁচ মাসের ভিতরে ছোট বড় সাত থেকে আটবার চালক নয়, হেলপার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকানের ভিতরেই গাড়ী ঢুকিয়ে দিয়েছে।
সর্বশেষ ২৩ মে মঙ্গলবার নীরব নিস্তব্ধ প্রকৃতি কেবল অন্ধকারাচ্ছন্ন মাড়িয়ে আলোর পথে হাঠছে, ঠিক এই সময়ে দোকানীরা দুই একজন দোকান খুলতে শুরু করেছে, ঠিক এমন সময় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা খুলনার ভু্ট্টা বোঝাই ট্রাক, ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে গতি হারিয়ে ৯ টি দোকানের সম্মুখপানে আচমকা আঘাত করে। সরেজমিনে দেখা গেল ৯টি দোকানের সামনের অংশ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাঁরা নিদারুন এক আতঙ্ককে সঙ্গী করে হতাশায় ভুগছেন। পান ও ঝাঁল মুড়ির দোকানদার শাহজাহান আলী এক বিষন্ন হৃদয়ে বলেন- কয় দিন আগেও আমার দোকান কাভার্ড ভ্যানের আঘাতে আক্রান্ত হয়েছিল, সৌভাগ্যক্রমে আমি প্রাণে বেঁচে যাই।
বেগারীতলা বাজারের ব্যবসায়ীদের ভয়ংকর আতঙ্কের নাম “বেপরোয়া গাড়ী দুর্ঘটনা” !
দোকানের সেই ক্ষতি কেটে না উঠতেই আবার ট্রাকের আঘাতেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। একদিকে জীবনের ঝুঁকি অন্যদিকে ব্যবসার ক্ষয়ক্ষতি কেটে উঠতে চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছি। ভুক্তভোগী দোকানদাররা বলেন এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করবে, ভয়ে সাধারণ মানুষ বাজারমুখি কম হবে, ফলে এ বাজার অস্তিত্ব সংকটে ভুগবে।
“নিরাপদ সড়ক চাই” মণিরামপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে সরাসরি এ সকল দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে # ঘুমন্ত চোখে গাড়ি চালানো # মূল চালক গাড়ি না চালিয়ে হেলপার দিয়ে গাড়ী চালানো # প্রচন্ড ক্লান্ত শরীরে ড্রাইভিং করা # গতি নিয়ন্ত্রণে না থাকা # লং ড্রাইভ চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার বিশ্রাম না নেওয়া # নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ি চালানো # সড়কে গতিরোধক না থাকা # সড়ক আইন মেনে না চলা # কুয়াদা ও বেগারীতলা বাজারের মধ্যস্থান ফাঁকা হওয়ায় গাড়ীর গতি অতিরিক্ত থাকায় বাজারের নিকটবর্তী অবস্থানকালে নিয়ন্ত্রণ না থাকা # সড়কের গা ঘেঁষে দোকানপাট নির্মাণ # রিফ্লেক্টিভ সাইন পোস্ট না থাকা # বাজারের প্রাণকেন্দ্রে রাতে পর্যাপ্ত আলো না থাকা # বাজারের দক্ষিণ প্রবেশমুখে সড়কের দুই পাশে বিপদজনক বাঁশের হাট বসিয়ে ঝুকিপূর্ণ করে তোলা # সড়কে সামান্য বাঁক রয়েছে, যা গতি না কমিয়ে ক্রসিং করা # সর্বশেষ যে বিষয়টি আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সেটা হলো হেলপার দিয়ে গাড়ী চালানো।
সড়কে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিরসনে নিসচার উপজেলা সদস্য সচিব হিসেবে বেগারীতলা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে সরাসরি আলোচনায় ক্ষুদ্র পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছি-
১। অতিদ্রুত রাস্তার দুই পাশের প্রবেশমুখে ভাইব্রেশন বিট স্থাপন করা ২। ডিসি মহোদয় বরাবর সকল ঘটনার ডকুমেন্ট জমা ও সমাধানকল্পে আবেদনপত্রের মাধ্যমে অবহিতকরণ ৩। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশকৃত ডকুমেন্ট কর্তৃৃপক্ষের দপ্তরে হস্তান্তর করা ৪। গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে লিখিত ডকুমেন্ট উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির হাতে হস্তান্তর করা ৫। সকল ব্যবসায়ী ও স্থানীয় নাগরিকদের নিয়ে মানববন্ধন ও ইউএনও মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা ৬। পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক চিহ্ন স্থাপন করা ৭। দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান বিবেচনা করে অতিদ্রুত যৌক্তিক সমাধান করা ৮। একটি সরকারি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার মূল অনুসন্ধান করে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেণ প্রহণ করা। অতিদ্রুত সবকিছু আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সদস্য সচিব, নিরাপদ সড়ক চাই
মণিরামপুর উপজেলা শাখা ও
কেন্দ্রীয় সদস্য।