English

22 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
- Advertisement -

‘একজন ইলিয়াস কাঞ্চনের গল্প ও আমার অভিজ্ঞতা’

- Advertisements -

তখন তিনি নিজ হাতে বিস্কুট বানানো শিখেছেন, খুব ইচ্ছে ছিল প্রথমবারের মতো হাতে বানানো বিস্কুট খাইয়ে দিবেন ভালোবাসার মানুষটিকে, বানিয়েছিলেন, সাথে করে নিয়েও যাচ্ছিলেন কিন্তু গন্তব্যে আর পৌঁছানো হয়নি।
১৯৯৩ সনে ঢাকা থেকে বান্দরবন যাওয়ার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান জাহানারা কাঞ্চন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)!

তিনি তখন শুটিং এ ছিলেন! হোটেল থেকে ফোন আসে, বলে, ‘আপনি ঘাবড়াবেন না, আপনার স্ত্রীর আসার কথা ছিল, গাড়িটা অ্যাকসিডেন্ট করেছে, উনারা মোটামুটি ভালো, আপনি শুটিং প্যাক করে চলে আসুন।’
হোটেলে ফিরলেন, ইতিমধ্যে অন্যরা জেনে গেছে জাহানারা কাঞ্চন আর নেই কিন্তু ইলিয়াসকে জানানো হয়নি।

‘আমি হোটেলে ফিরে আসরের নামায পড়লাম, সবাই তাগাদা দিচ্ছিল তাড়াতাড়ি চলেন। হাসপাতাল যাওয়ার পথে রাস্তায় গাড়িটা দেখলাম, মনটা কেমন শূন্য হয়ে গেল। গিয়ে দেখলাম বাচ্চাদুটো কাঁদছে, আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।’

এ যাবতকালে দেশের ইতিহাসে সবচাইতে ব্যবসা সফল সিনেমা (২০ কোটি টাকা আয়, বারশ সিনেমা হল মাসের পর মাস হাউজফুল) যার টিকেট পেতে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়াত দর্শক, সেই বেদের মেয়ের জোছনার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রায় সাতাশ বছর ধরে স্ত্রীর ছবি বুকে নিয়ে তিনি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে রাস্তায়।

ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন, সুপার হিট নায়ক থেকে সড়ক পরিবহনের সন্ত্রাসীদের চোখে হয়েছেন ভিলেন, তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে, আজও প্রতিদিন পাচ্ছেন মৃত্যুর হুমকি!

কিন্তু তিনি রাজপথ ছাড়েননি, নিরাপদ সড়কের দাবীতে গত ২৮টি বছর ধরে তিনি ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে লড়ছেন!

ফোরলেন, ডিভাইডার, হাইওয়ে পুলিশ, একমুখী চলাচল, নিরাপদ সড়ক দিবস, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন একজন ইলিয়াস কাঞ্চনের সংগ্রামের ফসল!

নিজেদের মাটিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের অর্ধেক জীবনের সন্ধান পেলেও বলিউড হলিউড একের পর এক দুর্দান্ত অটোবায়োগ্রাফিক মুভি তৈরি করে হইচই ফেলে দিতো! রাষ্ট্র দিতো সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তা!

কুশপুত্তলিকা জ্বালানো, শ্লোগানে দুই গালে জুতার বাড়ি দেয়ার তীব্র ইচ্ছা, ব্যানার ঝুলিয়ে হত্যার হুমকি ও উৎসাহ প্রদান (হুমকিদাতাদের কখনোই কাউকে আটক বা শাস্তি দেয়া হয়নি)! এইসব ছোট বড় সংব্বর্ধনা ব্যাতিত আমরা তাকে কিছুই দিতে পারেনি, তিনি হয়তো আশাও করেন না।

কিন্তু, প্রতিটা সমাজ বাস্তব জীবনে এরকম একজন হিরো প্রত্যাশা করে! সৌভাগ্য আমাদের, একজন ইলিয়াস কাঞ্চন পেয়েছিলাম!

ছবিটা রাজমনি, কাকরাইল ক্রসিং এ তোলা! প্রায় প্রতি সপ্তাহের যে কোনো একদিন উনি এই ক্রসিং এ এসে আমাদের সাথে ট্রাফিক ডিউটি করেন এবং হ্যান্ডমাইক দিয়ে পথচারীদের সচেতন করেন! গত কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই উনার সাথে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে! খুবই কাছ থেকে উনাকে আমি দেখেই যাচ্ছি, কতোটা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন!

তারেকুল আলম সুমন
পুলিশ ইনেসপেক্টর, ঢাকা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন