সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সরকারি উদ্যোগে প্রকাশের দাবি জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, তা না হলে নানা পরিসংখ্যানে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নিজের সংগঠনের পরিসংখ্যান তুলে ধরার সময় একথা বলেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের এই নেতা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত দুই বছর অনেকটা সময় গাড়ি চলাচল সীমিত থাকলেও সড়কে দুর্ঘটনা ছিল বেশি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশের সড়ক দুর্ঘটনা গত বছর বিগত দুই বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০২১ সালটিও ছিল করোনাভাইরাসের মহামারীর বছর, প্রায় ছয় মাস জরুরি যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা আরও কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এ বছর সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনা পরিসংখ্যানে।
সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলন শুরু করেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, গড়ে তোলে সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’।
সেই সংগঠনের পরিসংখ্যান দেওয়ার পর তিনি বলেন, ইতোপূর্বে সরকার অথবা অন্য কোনো পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হত না। ২০১২ সাল থেকে আমাদের সংগঠন নিয়মিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আসছে। বারবার বলা সত্ত্বেও দেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ডাটা সেন্টার করা হচ্ছে না। তাই সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারছে না। তবু আমরা তৈরি করছি।
তিনি বলেন, আমরা দাবি করে আসছি, সরকারি উদ্যোগে এই পরিসংখ্যান প্রকাশের ব্যবস্থা করা হলে জনগণ সড়কের প্রকৃত অবস্থান জানতে পারতো। ইদানিং অনেকেই নিজেদের মতো করে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরছে। যেখানে তথ্য উপাত্তে নানা মত প্রকাশ পায়। এতে করে জনমনে নানা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
গত দুই বছরে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার জন্য নিসচা যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, টাস্কফোর্সের ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাব, দৈনিক চুক্তিভিক্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি, মহাসড়কে নির্মাণ ত্রুটি ইত্যাদি।
পরিবহন খাতের নেতৃত্বে পরিবর্তন না হলে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র বদলাবে না বলেও মন্তব্য করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনা বাড়াতে প্রচার চালাতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি। স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিও জানান তিনি। তিনি বলেন, ঢাকা রুট ফ্রাঞ্চাইজির যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন জরুরি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন নিসচা’র যুগ্ম মহাসচিব লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। আরো বক্তব্য রাখেন, নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হক কামাল, বেলায়েত হোসেন নান্টু, মহাসচিব সাদেক হোসেন বাবুল, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ, দুর্ঘটনা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুব তালুকদার।