৫ আগস্ট ২০২৪ রাজনৈতিক সরকারের পতনের পর থেকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমান সরকারের মেয়াদ এখনও এক মাস পূরণ হয়নি। কতদিন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করবে তাও নির্দিষ্ট নয়। কিন্তু এর মধ্যে একটি বিষয় নির্দিষ্ট হয়ে আছে এবং তা হলো সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার সব ক্ষেত্রে সংস্কার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথ যাতে মসৃণ হয় এই স্থিরতা সাপেক্ষে পরবর্তী সরকার গঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া অর্থাৎ নির্বাচনপর্ব সম্পন্ন হবে। কিন্তু এখন যা দেখছি, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত আন্দোলন পর্ব এটি বর্তমান সরকার এর কাজকেই শুধু বাধাগ্রস্ত করছেনা দেশ সংস্কারের যে উদ্যোগ সেটিতেও দারুন ভাবে আঘাত করা হচ্ছে।
এক ভিডিও বার্তায় নির্বাচন ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সংস্কারের ব্যাপারে তারা তাদের অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে। তাই আমি বলব এটা পরিবর্তনের সরকার। দেশের পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে আমাদের উচিত এই সরকারকে সহযোগিতা করা কিন্তু দু:খের বিষয় অনেকে সহযোগিতা না করে বরং নানা ভাবে অসহযোগীতা করছে। রাজনৈতীক দলগুলোও বারবার নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমাদের উচিত দেশ সংস্কার করে এরপর নির্বাচন চাওয়া।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন,দেশের এই প্রেক্ষাপটে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের প্রায় প্রতিদিন আন্দোলন কর্মসূচির কোনো যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাই না। তাদের অবস্থান-বিক্ষোভের কারণে সচিবালয়সহ প্রত্যেকটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে যানজট, বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
আমাদের একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আমলে রাখতে হবে, জনবিড়ম্বনা এবং সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে পরিস্থিতি বৈরিতার গণ্ডিতেই থেকে যায়। আমরা চাই, সরকার এবং নাগরিক সমাজের স্বাভাবিক কাজকর্মের পথ মসৃণ থাকুক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কবে নির্বাচন দেবে, তারা কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, তা নিয়ে কিছু মানুষ ও বড় রাজনৈতিক দলগুলো মহা চিন্তিত। নির্বাচন ও নতুন কোনো দল ক্ষমতায় এলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! আসলেই কি তা সম্ভব? অতীতে কি আমরা এমনটা দেখেছি কোন দল কি রাষ্ট্র্র-প্রশাসনের কোনোরকম সংস্কার করেছেন? দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে নিয়েছিলেন কি কোনো পদক্ষেপ? তাহলে কেন এত অস্থিরতা!
শিক্ষার্থীদের ৩৬ দিনব্যাপী কঠিন আন্দোলন, অনেক জীবনহানি এবং শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্টের মধ্য দিয়ে বিগত সরকারের পতন হয়েছে। একটি দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির শপথ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অঙ্গীকার রাষ্ট্র সংস্কারের। এই সংস্কার এর কাজটি বাস্তবায়ন হোকনা আগে। এরপর নির্বাচন দিলে সমস্যা কোথায়?
শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন ও ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে যে ঐতিহাসিক অর্জন, তা নস্যাৎ করতে অনেকে উঠে পড়ে নেমেছে। কিন্তু কেন? এতগুলো সন্তান যে জীবন দিলো ছাত্ররা যে ভাইকে হারিয়েছে তারা তার ভাইয়ের হত্যার বিচার চায়। আপনারা কি চাইছেন না এই ছাত্র হত্যার সঠিক বিচার হোক? ছাত্ররা হয়তো ভোটার না অনেকে এজন্য তাদের এই চাওয়া পুরনে কিছু যায় আসেনা আপনাদের। কিন্তু এই ছাত্ররা একদিন ভোটার হবে আজ সঠিক বিচার না পেয়ে তাদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হবে এই ক্ষত কিন্তু সারাজীবন তাদের মনে থেকে যাবে এবং এর একটা বড় ইফেক্ট কিন্তু পরবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এ কাজটি ঠিকমতো শুরুই করতে পারল না সরকার অথচ শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনের তাগাদা! প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করেই কেবল নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন। আগে পরিবর্তন পরে ইলেকসন। সিস্টেমের পরিবর্তন ছাড়া শুধুই নির্বাচন কোনো সমাধান নয়। সুতরাং প্রকৃত অর্থেই যদি রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের জন্য কিছু করতে চায়, তাহলে উচিত এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়ে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজগুলো করতে তাদের সহযোগিতা করা।