English

23 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নিসচার মানববন্ধন

- Advertisements -

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারাদেশ উত্তাল। আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও তার সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে দেখা গেছে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে। আজ তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

মানববন্ধনে তিনি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এই আন্দোলনে সকল নিহতের ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিচার দাবি করেন এবং ছাত্রদের হয়রানি বন্ধ করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার করে ও সমস্ত স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি খুলে দিয়ে পড়ালেখার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান।

এর আগে ১৭ জুলাই ইলিয়াস কাঞ্চন তার ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেখানে কোটা আন্দোলন নিয়ে নানা কথা বলেন তিনি। তার ফেসবুকে পোষ্ট করা ভিডিও বার্তা তুলে ধরা হলো–

প্রিয় দেশবাসী সকলের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইলো এবং বিশেষ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। যাদের রক্ত এবং বীরত্বের মাধ্যমে আমাদের এই দেশটি অর্জন করেছি। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রেখে আজকে আমি বলতে চাচ্ছি যে, এই কয়েকদিন ধরে যে ঘটনাগুলো আমি পর্যবেক্ষণ করছি কোটা নিয়ে যে ছাত্রদের আন্দোলন যেখানে আজকে সারাদেশে পাঁচজন আমাদের সন্তান মৃত্যু বরণ করেছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। সেই জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে যে আর চুপ থাকা আসলে ঠিক না। সেই কারণের জন্যই আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

দেশ স্বাধীন হয়েছে বাহান্ন বছর হয়ে গেছে এই বাহান্ন বছরে আমাদের যে মুক্তিযোদ্ধারা ছিল তারা কোটার মাধ্যমে চাকরি অনেকে করেছেন অনেকেই এখন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এমনকি তাদের সন্তানরা যারা ছিল আমি মনে করি তাদেরও প্রায় বেশিরভাগই কিন্তু এই কোটার মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন যারা আছে মূলত তারা হলো পেরের প্রজন্ম।

এই মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের জন্য এখন এই কোটা এই বাহান্ন বছর স্বাধীনতার পর আমার মনে হয় যে এটি যৌক্তিক নয়। তার কারণ হলো, আমরা এরই মধ্যে কিন্তু অনেক মেধাবী সন্তানদেরকে হারিয়েছি কিন্তু যারা এই দেশের সুযোগ না পেয়ে বিদেশে চলে গেছে এবং বিদেশে গিয়ে সে সমস্ত দেশের উন্নয়নে কিন্তু তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়েছে।

যাই হোক শুরুর দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা যে কাজটি করেছি সেটি ঠিক আছে কিন্তু এখন এই প্রজন্মর জায়গাতে এসে যদি তাদের জন্যও কিছু করতে হয় তাহলে আমি সরকারকে বলবো যে তাদের আর্থিক ভাবে কিংবা অন্যভাবে তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক। কিন্তু এই যে মেধার যে বিষয়টি আছে চাকরীর এবং অন্যান্য জায়গার যে সুযোগ গুলো আছে সেই জায়গায় যদি আমার যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি আমাদের সন্তানরা উঠে আসে তাহলে দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে।

দেশ অনেক বেশি উপকৃত হবে। এবং আমি আরেকটি জিনিস যেটি মনে করি, আমাদের এই যে আজকের এই আন্দোলনের মধ্যে যে জিনিসটি তৈরি হয়েছে তাতে আমার মনে হয়েছে এই বৈষম্য যদি থাকে তাহলে কিন্তু দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার একটা তারতম্য ঘটবে। কাজেই আমাদের এই প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক বানাতে গেলে এবং দেশপ্রেম দেশের মানুষের প্রতি প্রেম যদি শেখােতে হয় এবং দেশের উন্নয়নের কাজে যদি লাগাতে হয় তাহলে আমি মনে করি আমাদের সন্তানরা যে কোঠা বৈষম্যের আন্দোলনটি করছে সেইটি যৌক্তিক। এবং যৌক্তিক মনে করে আজকে আমি কথাগুলো বলছি। আমাদের এই সন্তানদের এই দাবিটা মেনে নেওয়া হোক।

আর যেন কোন জীবন এই আন্দোলনের জন্য চলে না যায়। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। আর কেউ যেন আহত না হয় এবং এই রাস্তার মধ্যে আমাদের সন্তানরা এইভাবে আন্দোলন করুক এইটিও আমি আসলে চাই না।

আমি এই সরকারের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা এই দাবীটুকু মেনে নেন। এটি দেশের জন্য উপকৃত হবে। কারণ এই যে বৈষম্যের যে বিষয়টি, দেশপ্রেমের মধ্যে এটি কিন্তু দূর হবে। আমি আশা করি সরকার জিনিসগুলো বুঝবেন, দেশবাসী আপনারাও বুঝবেন এবং আমি বিশ্বাস করি আর যেন কোন জীবন কোটা আন্দোলনের জন্য এরকম ভাবে কোন মায়ের বুক যেন খাঁলি না হয়।

আপনারা সকলে মিলে দেশকে দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের ভালোর জন্য, দেশের ভালবাসার জন্য, দেশের জনগণের জন্য এই কোটা আন্দোলনটি মেনে নেবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন ১আগষ্ট আরেকটি ভিডিও বার্তা তার পেইজে পোষ্ট করেন। সেখেনে তিনি বলেন, দেশে বৈষম্য দূর করার জন্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এতগুলো সন্তান এভাবে মরে যাবে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়।

প্রিয় দেশবাসী ইন্টারনেট এবং ফেসবুক না থাকাতে এতদিন এই যন্ত্রণাগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারিনি। আমার শুধু বারবার একটা জিনিস মনে পড়ছে। উনিশশো আটষট্টি সালের কথা। তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। এই ছাত্রদের দেখে আমার সে পিছনের কথাগুলো মনে পড়ছে। সিক্সের ছাত্র ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে পড়তাম স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্যে, মিছিলে যোগদান করার জন্য।

সিক্সটি এইট সিক্সটি নাইন সেভেনটি এবং সেভেন্টি ওয়ান এই সময়গুলোতে আমরা স্কুল থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আমরা কিন্তু রাস্তায় নেমে পড়তাম। স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেই সময় কিন্তু আমাদেরকে রোল করতো অন্য একটি দেশ। অন্ন দেশের পুলিশ, অন্য দেশের সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু সেই সময় আমি গুলি খাই নাই। আমার কোন সহপাঠীও মৃত্যু মুখে পতিত হয় নাই।

আর এই স্বাধীন দেশে যে দেশ এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, যে স্বপ্ন নিয়ে দেশটি স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশে এতগুলো সন্তান যেভাবে গুলিবিদ্ধ হবে মারা যাবে কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি ।


এখনো আমি ভাবতে পারছি না যে আসলে কি হলো এটা, কি করে সম্ভব। এই মুহূর্তে আমার যেটি মনে পড়ছে সেটি হল যে আমরা ইতিহাস পড়ি কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না।

পলাশীর সময় মীরজাফর একটি নাম সেই নামটি বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য কিন্তু সেই নাম বাংলার মানুষ আর কোনো সন্তানের নাম রাখে না সেটি একটি গালি হয়ে গেছে। একাত্তরের সময়ও কিন্তু রাধাকার যে শব্দটি, এটি আরবি শব্দ সেটিকেও কিন্তু এই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা যে কর্মকাণ্ড করেছে সেটিও কিন্তু আমাদের কাছে গালি হয়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে হয়তো বা আরো কোনো নাম এরকম গালি হয়ে যাবে।

যদি সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে হয়তো সেটিও দেখে যেতে পারবেন। প্রথম বিডিওতে আমি বলেছিলাম যে বৈষম্য থাকলে কিন্তু দেশপ্রেমী কিন্তু তৈরি করা যায় না।

যুদ্ধ যখন করেছিলাম যুদ্ধে যারা গিয়েছিল তারা কিন্তু কোন কিছু পাওয়ার আশায় যায়নি। জীবন দিতে গিয়েছিল দেশকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল।

সেই যুদ্ধে ঘর পুড়েছে আমার দুটো বোন গুলির আঘাতের একটি পঙ্গু হয়েছে আর একটি অগ্নিদগ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু কোনোদিনই আমরা কিন্তু কোনো সাহায্যের কাছে যাইনি। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য যাইনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেছি সেখানেও কিন্তু কখনো বলিনি যে আমি অমুক, আমার এই সুযোগ দরকার, সুবিধা দরকার। নিজের যোগ্যতায় সেখানে চেষ্টা করেছি।

আমি আসলে ভাবতে পারছি না আমার জন্মদিন হয় সেটিও আমি মানুষের জন্য করি। আমার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হয় সেখানেও মানুষের জন্য করি। একদিন আমার এক শিল্পী বলেছিল এ দেশ আমাকে কি দিলো, আমি তাকে বলেছিলাম এই কথা বলবেন না। বলেন আপনি কি দিয়েছেন দেশকে। এই দেশ আপনাকে স্বাধীনতা দিয়েছে। আপনাকে কর্ম করার মতো সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ছে। আপনার উচিত দেশকে দেওয়া। তো সেই দেশের বৈষম্য দূর করার জন্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ই করার জন্য এতগুলো সন্তান এভাবে জীবন হারাবে। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

আশা করি এটি আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের মাধ্যমে পূর্ণ তদন্ত হয়ে বিচার যেন হয়।

আজকের ভিডিও লিংক….

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন