উল্টো পথে আসা গাড়ি থামিয়ে সঠিক পথে যেতে বলায় নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই শাখার সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেনকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় সারাদেশে নিসচা কর্মিদের প্রতিবাদে অবশেষে ক্ষমা চাইলেন প্রতীক সিরামিকের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ক্ষমা প্রার্থনা করে নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের বরাবর লিখিত পত্র পাঠান তারা।
পত্রে তারা সড়ককে নিরাপদ করতে নিসচা কমিটির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তারা উল্লেখ করেন আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইছি এবং ভবিষ্যতে ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তা চলাচলের অঙ্গীকার করছি। সেই সাথে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আপনার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। কিন্তু তার আগে আমাদের দ্বারা সংঘটিত এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আপনার কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করি আপনি আমাদেরক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে যুক্ত করে নিবেন।
এদিকে গত ১৩জুন অনাকাঙ্খিত সেই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশের নিসচা শাখা সংগঠনকে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে মানববন্ধন করার জন্য। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশের পর সারা দেশে প্রায় ৫০টি শাখা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। এছাড়া প্রতিটি শাখা প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন। প্রতিবাদের তোপের মুখে পড়ে গতকাল ১৮জুন নিসচা ধামরাই শাখার নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের উদ্যোগে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতীক সিরামিকের কর্মকর্তারা নিজেদের ভুল স্বীকারপূর্বক নিঃশর্ত এই ক্ষমা চান এবং হামলার শিকার ইমরানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া দশ হাজার টাকা ফেরত প্রদান করেন এবং সড়ককে নিরাপদ করতে নিসচা কমিটির সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন।
মিমাংসার পর ভুক্তভোগী ইমরান হোসেন নিরাপদ নিউজকে বলেন, আমি নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দীর্ঘ অর্ধযুগ ধরে সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এই ক্জা করতে গিয়ে প্রতীক সিরামিকের কর্মকর্তারা আমাকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে হেনস্তা করে যা স¤পূর্ণভাবে আইন বিরোধী একটি কাজ। পরবর্তীতে তাঁরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সড়কে আইন মেনে চলার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে নিসচার সকল নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করে তাদেরকে ক্ষমা করেছেন।
ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিসচা’র পক্ষ থেকে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েনে প্রতীক সিরামিকস লিঃ এর নিকট দাবী উত্থাপন করেছি। আমি আশা করি তাঁরা তাদের প্রতিশ্রতি অনুযায়ী নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার এই মহতী উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে আন্তরিকতভাবে সহযোগিতা করবেন।
এ বিষয়ে নিসচা ধামরাই শাখার সভাপতি এম নাহিদ মিয়া জানান, উল্টোপথের গাড়ি বাঁধা প্রদানে তোপের মুখে পড়েন নিসচা কর্মী ইমরান হোসেন, সড়কে অনিয়মের প্রতিবাদে এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্যোসাল মিডিয়াসহ মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয় এবং তারা (প্রতীক সিরামিকের কর্মকর্তারা) তাদের ভুল বুঝতে পেরে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা করেছেন। নিসচা যোদ্ধারা সড়ককে নিরাপদ করার কাজে একাত্মতা ঘোষণা করায় বিষয়টি স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের মহতী উদ্যোগে সুন্দর সমাধান হওয়ায় আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি এবং ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও নিসচা যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
উল্লেখ্য, গত ১৩জুন ঢাকার ধামরাইয়ে উল্টোপথে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতীক সিরামিক লিমিটেডের মাইক্রোবাসকে বাধা দেওয়ায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র এক কর্মীকে লাঞ্ছিত করেন প্রতীক সিরামিক লিমিটেডের কয়েকজন কর্মি। এ ঘটনায় নিসচার উপজেলা কমিটির সভাপতি এম নাহিদ মিয়া বাদী হয়ে সোমবার দুপুরে ধামরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে ধামরাইয়ের ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট নিরসনে কাজ করার সময় প্রতীক সিরামিকের একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-৩৪৬৮) উল্টোপথে আসছিল। এতে যানজট আরো চরমে উঠে যায়। এসময় ওই নিসচা কর্মী গাড়িটির পথরোধ করে সঠিক নিয়মে গাড়ি চালাতে অনুরোধ করে। এতে মাইক্রোবাস আরোহী ৫-৬ জন ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে তাকে এলোপাথাড়ি তার ওপর চড়াও হয় এবং তাকে টানা হেচড়া করে জোর গাড়িতে উঠিয়ে ডাউটিয়া এলাকার প্রতীক সিরামিকস লিমিটেডের ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে তার সংগঠনের আইডি কার্ড, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তার নিকট থেকে জোর করে কার্ড দিয়ে ১০ হাজার টাকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ঘটনা কাউকে জানালে তাকে দেখে নেয়া হবে এমন হুমকিও দেয়। এ ঘটনার ভিডিও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে সকলের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং সবাই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান। ভুক্তভোগী নিসচা কর্মী ইমরান হোসেন ধামরাইয়ের পৌর এলাকার লাকুড়িয়াপাড়া এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ঘটনাটি ঘটার পর থেকেই সম্পূর্ণ বিষয় মনিটরিং করে নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ।
এদিকে প্রতীক সিরামিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থণার পর নিসচা প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন নিসচা যোদ্ধা লাঞ্ছিতের ঘটনায় দেশের সকল শাখা সংগঠনের প্রতিবাদ ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করায় সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং সকলের প্রতি আহবান জানান যেন বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি ধামরাই এলাকার সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গেও সমর্থণ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমানকে ধন্যবাদ জানান বিষয়টির একটি সুন্দর সুরাহা করে দেয়ার জন্য।
সেই সাথে নিসচার সকল স্তরের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সহযোদ্ধা ইমরানের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে যেভাবে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই একতা যেন সামনের দিনেও সকলের মাঝে বজায় থাকে।