দুশ্চিন্তায় আছেন অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অগ্রপথিক ইলিয়াস কাঞ্চন। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছিলেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। নয়তো বিপদে পড়তে হবে তাকে ও আরও অনেককে। আজ দুপুরে ফেসবুক লাইভে দেশের গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি নিয়ে নানা দুর্ভাবনা ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই অভিনেতা।
দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘মনটা ভালো নেই। কারণ, আমরা অধৈর্য জাতি। এর আগে আমরা অনেক মূল্যবান অর্জন নষ্ট করেছি। এবারও একই ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। এখন অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা নিজেরাই ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ করে দিচ্ছি। যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের কাজকে সহজ করে দিচ্ছি। যেন খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সরিয়ে দিতে পারে। ফলে তারা উঠেপড়ে লেগেছে, যেন আমাদের সব অর্জন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা শুরু হয়েছে, সেটা ভয়াবহ। আমরা যারা অনেক রিস্ক নিয়ে, অনেক কিছু ত্যাগ করে এই আন্দোলনে শরীক হয়েছিলাম, এই সরকার যদি ব্যর্থ, এই আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয়, তারা যদি আবার ফেরত আসে, তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে? আমাদের কী পরিণতি হবে, এটা কিন্তু আমরা কেউ ভেবে দেখছি না। এগুলো সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি এই কথাগুলো লাইভে এসে বলছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনের সারিতে যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের যদি আমরা এভাবে হিংসা করি, এভাবেই যদি আপনারা উত্তেজিত হন, তাহলে তো সমস্যা। যারা এমন করছেন তাদের উদ্দেশ্য বলছি, এই আন্দোলন কারো একক অংশগ্রহণে সফল হয়নি। এতে ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশ নিয়েছেন। তাদের সবাইকেই সরকারের উপদেষ্টা করা হবে? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সবারই মনের মধ্যে আশা, কেন আমাকে এই সরকারের অংশ করা হলো না। সেটা করা কি সম্ভব?’
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের হাতাহাতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমে যে ঘটনা ঘটেছে, আপনারা কি একবার ভেবে দেখেছেন, কী হলো এখানে? বাংলাদেশের ইতিহাসে বিগত ৫৪ বছরে আমাদের মসজিদগুলোতে কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেনি। এসব দেখে আপনারা বুঝতে পারছেন না যে, কী ধরণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে? অন্যদিকে আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলে কী ভয়ানক ষড়যন্ত্র হচ্ছে! এসব কেন বুঝতেছেন না আপনারা। আমরা কেন এত অধৈর্য হয়ে যাচ্ছি? আমাদের পাহাড়িদের মধ্যে যে মারামারি শুরু করে দিয়েছেন, তার পরিণতি বুঝতে পারছেন না? আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের মিডিয়াগুলোতে এই ইঙ্গিত আমাদের আগেই দিয়েছিল।’
আপনাদের অনুরোধ করে বলছি, ‘আল্লার ওয়াস্তে একটু বোঝার চেষ্টা করেন। একটু ধৈর্য ধরেন। মনে করেন আরও বিশ বছর ওরা যদি থাকতো, তাহলে কী হতো! আমরা রাজনৈতিক দল বলেন, সাধারণ মানুষ বলেন, সবাই যেন অস্থির হয়ে গেছি। আর ভাই, আপনাদের কতজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নেবে? হয়তো নেবে, কিন্তু তাদের সেই সময়টা দিতে হবে। আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে, এমন কোনো একটা জায়গা নেই যা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে না। যারা এই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, আমি তাদের কথা ভাবলে অবাক হয়ে যাই যে, তারা ঘুমায় কী করে? আমার তো মনে হচ্ছে, এদের ঘুম হচ্ছে না। চারদিক থেকে তাদের যে প্রেশার দিয়ে রাখা হয়েছে, তা কল্পনাও করা যায় না। আপনারা যদি এসব না বোঝেন, তাহলে চলবে না। আপনারা তো আনসারের ষড়যন্ত্র দেখেছেন, আপনারা গার্মেন্টেসের ষড়যন্ত্র দেখেছেন। প্রত্যেকটি জায়গার মধ্যেই এ রকম করছে। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তাদের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। বিচার ব্যবস্থারও একই অবস্থা। এতসব সমস্যার মধ্যে যদি আমরা সরকারকে সহযোগিতা না করি, তাহলে বড় সমস্যা দেখা দেবে।
ঢাকার সিনেমার নন্দিত অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমার মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালের জুন মাসে মুক্তি পায় ছবিটি। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন অঞ্জু ঘোষ। ১৯৯৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের জন্য সচেতনামূলক আন্দোলন শুরু করেন তিনি। পড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’।