English

19 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে নিসচার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

- Advertisements -

জনগনের প্রত্যাশিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে নিসচার সংবাদ সম্মেলন আজ ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবে সকাল ১১ টায় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। একই সাথে দেশব্যাপী নিসচার সকল শাখা সমূহও একই দাবীতে একই সময়ে নিজ নিজ এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে।
নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য পাঠ করেন নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এবং সেই সাথে সারা দেশে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উক্ত শাখা সংগঠন সমূহের সভাপতি/ সাধারন সম্পাদক।
নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয়, শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, নির্বাহী সদস্য লায়ন গনি মিয়া বাবুল, স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব সাদেক হোসেন বাবুল । এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, মহাসচিব সৈয়দ এহসান -উল হক কামাল। উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন, নির্বাহী নাসিম রুমি, একে আযাদ, আলাল উদ্দিন, সদস্য সাফায়েত সাকিব, কামাল হােসেন খান, মো: মহসিন, আলী আকবর সহ অন্যান্য সাধারন সদস্য।
নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সুষ্পষ্টভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি, বিভিন্ন রকম দাবি, আবদার এবং করোনা সমস্ত কিছু মিলিয়ে গত বছরের ১নভেম্বর থেকে এ বছরের ১নভেম্বর পর্যন্ত ১২মাস পার হয়ে গেছে এবং আগামী ১জানুয়ারী পর্যন্ত  আরো ২মাস অর্থাৎ ১৪মাস চলে যাচ্ছে । এই ১৪ মাসের পরে ১জানুয়ারী থেকে যেন এই সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনটি পুরোপুরি ভাবে কার্যকর করা হয়। কোন ভাবেই যেন এর ব্যত্যয় না ঘটে। কারণ এই আইনটি ছিলো জনগনের প্রত্যাশিত আইন। জনগনের প্রত্যাশিত আইনের কোন রকম ব্যত্যয় ঘটুক তা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন মেনে নেবে না। আমরা চাই আগামী ০১ জানুয়ারি ২০২১ সাল হতে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সর্বমোট যানবাহনের সংখ্যা ৪৫,৬৪,২৮৪ (পঁয়তাল্লিশ লাখ চৌষট্টি হাজার দুইশত চুরাশি) এর ভেতর ভারী যানবাহন- এর সংখ্যা ৩,১৯,১৪৭ (তিন লাখ ঊনিশ হাজার একশত সাতচল্লিশ)। বিআরটিএর তথ্যমতে। নতুন সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনে শাস্তির যে কথা বলা হয়েছে তা শুধু তাদের একার জন্য করা হয়নি। এটি সর্ব মহলের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু কিছু মহল আজ আমার নামে বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলিনা, আমি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলি। যারাই অনিয়ম করেন তাদের বিপক্ষে কথা বলি। কোনো কোনো চালক ধরে নেন তাদের বিপক্ষে কথা বলছি, এটা দুঃখজনক কিংবা ভুল বোঝাবুঝি।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রয়োগে যখনই উদ্যোগ নেয় তখনই পরিবহন সেক্টরের চক্র বাঁধা সৃষ্টি করে। তারা নতুন করে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। এমনকি আমাকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়। আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। যা সত্যিই দুঃখজনক। আমি বলবো নতুন আইনের বিষয়ে তারা কোনও প্রস্তুতি ইচ্ছে করেই নেয়নি এবং নিচ্ছে না। তারা শুধু দোষারোপ করে গেছে তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য। সময় থাকতে গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সংশোধনে তারা মনোযোগ দেয়নি। এসব ত্রুটি- বিচ্যুতি যদি তারা নতুন আইন প্রয়োগের আগেই সমাধান করতেন তা হলে নতুন করে আইনের কয়েকটি বিষয় ছাড়ের সময়সীমা আর বাড়ানোর প্রয়োজন হতোনা।
সেইসাথে বলবো এই আইন বাস্তবায়নে সরকারের যে সব স্টেকহোল্ডার রয়েছে সেখানেও এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করছি। এই আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব যেমন আছে তেমনি সরকারের সেইসব মহলেরও নানা পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি।
বিশেষ করে এই আইনটি প্রয়োগে মাঠে সক্রিয় থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের পূর্ণ প্রস্তুত করতে প্রথমেই আসে যে মেশিন দ্বারা তারা জরিমানা করে সেটার আপডেট করা (বর্তমান আইন অনুযায়ী), তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করা, গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সংশোধনে বিআরটিএকে সক্ষম ও আধুনিকায়ন করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটার সিস্টেম আপগ্রেড করা, জনগণকে এই আইন সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ক্যাম্পেইনের অভাব দূর করা (কারণ এই আইনে যাত্রী পথচারীদেরও আওতায় আনা হয়েছে), সর্বোপরি এই আইনের অস্পষ্টতা দূর করতে বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি দাবি করবো এই আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে এই বিষয়গুলোর দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করছি।
আর তা না হলে আমরা মনে করি, নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা বা শৈথিল্য এবং মহল বিশেষের চাপের মুখে ব্যাহত হয় এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয় তাহলে আমরা দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র্যবিমোচন ও এসডিজি বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখছি তা আর পূরণ হবে না। পূর্বে যেখানে ছিলাম অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল আর অসহায় পরিবারের কান্না চলতেই থাকবে। তাই আমরা মনে করি, এই আইনের সঠিক প্রয়োগে ও বাস্তবায়নে যদি কোন মহলের চাপের মুখে সরকার মনোভাব পরিবর্তন করে তাহলে হেরে যাবে ১৮কোটি জনতা। সেইসঙ্গে হেরে যাবে বাংলাদেশ।’

নিম্নে নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো:

০১ জানুয়ারি ২০২১ হতে জনগণের প্রত্যাশিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮- এর পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই

সুপ্রিয় সাংবাদিক সমাবেশ
আসসালা মুআলাইকুম।
শুভ সকাল। সকলের সুস্বাস্থ্য ও সড়কে নিরাপদ জীবন কামনা করে আজকের সংবাদ সম্মেলন শুরু করছি।
প্রথমে নিরাপদ সড়ক চাই’র মাধ্যমে সারাদেশে মানুষের কল্যাণে সড়কে থেকে কল্যাণমুখি কাজ করতে পারছি বলে আমি মহান আল্লাহর দরবারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।  সেইসাথে করোনার এই সংকটকালীন সময়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি- আমরা সবাই সুস্থ আছি।  সেইসাথে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও নানা অসুস্থতায় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে গণমাধ্যমসহ যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
করোনার কারণে অনেকটা সময় আমরা পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। কিন্তু কর্ম আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখেনি। বিশেষ করে আপনারা গণমাধ্যম নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। ভাল থাকবেন সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থণা করি।
সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আপনারা জানেন ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’-এ স্লোগানে সামাজিক আন্দোলন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র জন্ম আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর।  এদিন সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারিয়ে আমি এ আন্দোলন গড়ে তুলি।  স্ত্রীকে আর ফিরে পাবো না এটা জানি, কিন্তু আর কারও স্ত্রী, বোন, ভাই, বাবা-মা এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিক তা চাইনি।  এ কারণে নিজের চলচ্চিত্র জগতের ক্যারিয়ার ছেড়ে দেশের মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
দীর্ঘ এ আন্দোলনে নিসচার পালকে অনেক অর্জন এসেছে।  নিঃসন্দেহে এসব সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তবে কোনো প্রাপ্তিতেই আমরা থেমে থাকিনি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা শুরু থেকে একটি সময়োপযোগী আইনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। পাশাপাশি আইন করলে হবে না সড়কে আইন মানতে মানুষকে সচেতন করার ওপর জোর দিই। এজন্য ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাই। আমাদের লক্ষ্য ছিল, নিরাপদ সড়কের জন্য একটি দিবসকে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা যায় তা হলে জনগণের মাঝে এ বিষয়ে একটি সচেতনতা তৈরি হবে।  সরকার আমাদের দাবিকে সম্মান জানিয়ে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটির জাতীয় স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের আরেকটি দাবি, সময়োযোগী সড়ক আইন, সেটিও পূরণ হয়েছে। এখন দরকার এ আইনের সঠিক প্রয়োগ।

সুপ্রিয় সাংবাদিক সমাবেশ
কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর প্রয়োগের দিন থেকেই আইনটি হোঁচট খেল। আইনটির যথাযথ প্রয়োগে বারবার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবহন সেক্টরের একটি অশুভ শক্তি। যদিও জনগণের প্রত্যাশিত সড়ক পরিবহন আইনের সংস্কার আমাদের দাবি ছিল। সরকারও বিভিন্ন সময় ১৯৮৩ সালে প্রণীত আইনটিকে সময়োযোগী করার উদ্যোগও নেয়।  অনেকটা সময় পেরিয়ে সড়কের বিশৃঙ্খল অবস্থার বাস্তবচিত্র এবং ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ এবং দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো রাজীবের মর্মান্তিক মৃত্যুসহ বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন এ আইনটি পাসের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। অবশেষে কোনও চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে সরকার এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করে ২০১৮ সালে। এর প্রায় ১৫ মাস পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর শুরু করে সরকার। প্রথম ১৪ দিন সহনীয় মাত্রায় এর প্রয়োগ ছিল। পরবর্তীতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিতে আইনের কয়েকটি বিষয় পরবর্তী ছয়মাস পর্যন্ত কনসিডারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।  পরবর্তীতে করোনার কারণে এই আইন যথাযথ প্রয়োগের সময়সীমা বৃদ্ধি করে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
একটা কথা বলতে দ্বিধা নেই সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রয়োগে যখনই উদ্যোগ নেয় তখনই পরিবহন সেক্টরের সেইচক্রটি বাঁধা সৃষ্টি করে। তারা নতুন করে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। এমনকি আমাকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়। আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। যা সত্যিই দুঃখজনক।  আমি বলবো নতুন আইনের বিষয়ে তারা কোনও প্রস্তুতি ইচ্ছে করেই নেয়নি এবং নিচ্ছে না। তারা শুধু দোষারোপ করে গেছে তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য। সময় থাকতে গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সংশোধনে তারা মনোযোগ দেয়নি। এসব ত্রুটি- বিচ্যুতি যদি তারা নতুন আইন প্রয়োগের আগেই সমাধান করতেন তা হলে নতুন করে আইনের কয়েকটি বিষয় ছাড়ের সময়সীমা আর বাড়ানোর প্রয়োজন হতোনা।
সেইসাথে বলবো এই আইন বাস্তবায়নে সরকারের যে সব স্টেকহোল্ডার রয়েছে সেখানেও এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করছি। এই আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব যেমন আছে তেমনি সরকারের সেইসব মহলেরও নানা পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। বিশেষ করে এই আইনটি প্রয়োগে মাঠে সক্রিয় থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের পূর্ণ প্রস্তুত করতে প্রথমেই আসে যে মেশিন দ্বারা তারা জরিমানা করে সেটার আপডেট করা (বর্তমান আইন অনুযায়ী), তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করা, গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সংশোধনে বিআরটিএকে সক্ষম ও আধুনিকায়ন করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটার সিস্টেম আপগ্রেড করা, জনগণকে এই আইন সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ক্যাম্পেইনের অভাব দূর করা (কারণ এই আইনে যাত্রী পথচারীদেরও আওতায় আনা হয়েছে), সর্বোপরি এই আইনের অস্পষ্টতা দূর করতে বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি দাবি করবো এই আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে এই বিষয়গুলোর দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করছি।
আর তা না হলে আমরা মনে করি, নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা বা শৈথিল্য এবং মহল বিশেষের চাপের মুখে ব্যাহত হয় এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয় তাহলে আমরা দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র্যবিমোচন ও এসডিজি বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখছি তা আর পূরণ হবে না। পূর্বে যেখানে ছিলাম অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল আর অসহায় পরিবারের কান্না চলতেই থাকবে। তাই আমরা মনে করি, এই আইনের সঠিক প্রয়োগে ও বাস্তবায়নে যদি কোন মহলের চাপের মুখে সরকার মনোভাব পরিবর্তন করে তাহলে হেরে যাবে ১৮কোটি জনতা। সেইসঙ্গে হেরে যাবে বাংলাদেশ।’
সুপ্রিয় সাংবাদিক সমাবেশ
আমি কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই।  আমি আপামর মানুষের স্বার্থে কথা বলি। আজকের সড়ক পরিবহন আইনটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। আইনের খসড়া সরকার ওয়েব সাইটে উন্মুক্ত রাখে দীর্ঘদিন। অংশীজনদের এ আইনে সম্পৃক্ত করা হয়। জনগণের মতামত দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যেসব সংগঠন কাজ করে তাদের প্রতিনিধিরাও মতামত দিয়েছেন। গণপরিবহন সেক্টরের চালক, মালিক শ্রমিকদের মতামত ও দাবি-দাওয়া শুনেছে সরকার। সকলের মতামতের ভিত্তিতে ৩৫ বছরের পুরানো আইনকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা করে সরকার। আমিও অন্যান্যদের মত নিসচার পক্ষ থেকে দেশের সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষে আইনের বিষয়ে আমাদের মতামত তুলে ধরেছিলাম।  আমি বিভিন্ন সময় একটি কথা প্রায়ই বলে থাকি, ‘যদি আমি ইলিয়াস কাঞ্চন সড়কে কোনো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকি তাহলে এই আইনে আমারও সাজা হবে। আমি ভুল করলে বা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হলে আইন অনুযায়ী আমারও বিচার হবে।  কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সড়কে সবাইকে আইন মানতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। শুধু ভারী যান চালক নয় সকল চালকদের জন্যই এই আইন।’ সড়কে ভারী যান বলতে যেটা বোঝায় (বিআরটিএ’র তথ্যমতে-সেপ্টেম্বর ২০২০) যেমন বাস, ট্রাক, কার্গো ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্কার ও বিশেষ ভারী বাহন- এর সংখ্যা ৩,১৯,১৪৭ (তিন লাখ ঊনিশ হাজার একশত সাতচল্লিশ)। অথচ সর্বমোট যানবাহনের সংখ্যা ৪৫,৬৪,২৮৪ (পঁয়তাল্লিশ লাখ চৌষট্টি হাজার দুইশত চুরাশি। যার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ৬৮৯০, অটো রিক্সা ৩১২৭৭৮, অটো টেম্পু ২০৮৫৫, বাস ৫১৯২৬, কার্গো ভ্যান ৯৭০৩, কাভার্ড ভ্যান ৩৫৫৬৫, ডেলিভারী ভ্যান ৩১৬৭৭, হিউম্যান হুইলার ১৯০৬২, জীপ (ভারী/হাল্কা) ৬৭৬৬১, মাইক্রোবাস ১০৬৬০৮, মিনি-বাস ২৯৬২৭, মোটরসাইকেল ৩০৬৭৩০৩, পিক-আপ (ডাবল/সিঙ্গেল কেবিন) ১৩৪২৩৮,প্রাইভেট কার ৩৭৩৯৬৬, স্পেশাল যান ১২৩১৭, ট্যাঙ্কার ৬০৪২, ট্যাক্সি ক্যাব ৪৫৩৭৯, ট্রাক্টর ৪৭৩৫৬, ট্রাক ১৫৬২৩৮ ও অন্যান্য ২৯০৯৩। আমি শুধু বাস-ট্রাক চালকদের নয়, সকল চালকদের সচেতন হওয়ার কথা বলি- যা প্রত্যেকের বলা উচিত।
আমি মনে করি যদি বাস ও ট্রাকচালক, যাত্রী, রিকশা চালক, পথচারী, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক বা মালিক সবাই সড়কে আইন মেনে চলে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবে না। একজনের জন্য অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমিতো এটাই চেয়ে আসছি। আমরা সবাইকে সচেতন, দক্ষ চালক তৈরি, পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের আরও দক্ষ ও মানবিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি।  আমাদের প্রতিষ্ঠিত নিসচা মেকানিক্যাল ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাদের সচেতনতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষ চালক তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও আমার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলিনা, আমি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলি। যারাই অনিয়ম করেন তাদের বিপক্ষে কথা বলি। কোনো কোনো চালক ধরে নেন তাদের বিপক্ষে কথা বলছি, এটা দুঃখজনক কিংবা ভুল বোঝাবুঝি।

সুপ্রিয় সাংবাদিক সমাবেশ
আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি সড়কে যদি শৃঙ্খলা না ফিরে আসে তাহলে কোন অবস্থাতেই সড়ক নিরাপদ হবে না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই করোনায় খালি সড়কেও যে হারে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা কেন? কারণ মানসিকতা। এই মানসিকতার পরিবর্তন এবং নিয়ম মেনে গাড়ি না চালানো অভ্যাস সর্বোপরি মানবিক সত্ত্বার অভাব।  প্রশ্ন রাখতে চাই- যারা আজ পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করে যারা বারবার ফায়দা লুটতে চাইছেন, তারাই প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন বিভিন্ন নামে- এই টাকার কত অংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে? করোনাকালীন সময়ে পরিবহন শ্রমিকদের হাহাকারে এই প্রশ্ন এখন জোরালো আকার ধারন করেছে।  প্রশ্ন হচ্ছে শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য এই টাকা কি কখনও ব্যয় করা হয়েছে? শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোন ইনস্টিটিউশন গড়ে তুলেছেন? তাদের জন্য একটি হাসপাতালও কি গড়েছেন? কোন শ্রমিক পল্লী গড়ে তুলেছেন? যেমন বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা, গোষ্ঠী, কম্যুনিটি বেইজড আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে এমন কোন নজির তারা শ্রমিকদের জন্য তৈরি করতে পেরেছেন কি? যদি তাই হতো তাহলে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১০০০ শ্রমিক (চালক-হেলপার) মারা যেত না।
আরেকটি কথা নতুন সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনে শাস্তির যে কথা বলা হয়েছে তা কি শুধু তাদের একার জন্য (আমরা তাদের একার বলতে বাস, ট্রাক, কার্গো ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্কার ও বিশেষ ভারী বাহন- এর সংখ্যা ৩,১৯,১৪৭ বোঝাতে চাইছি)? যদি সাজা কমানো হয়, জামিনযোগ্য করা হয় তাহলে কি এই যে প্রতিবছর যে পরিবহন শ্রমিক মারা যায় তাদের রক্ষা করা যাবে নাকি তাদের সুরক্ষা দেয়া যাবে?
সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আমাদের কথা হচ্ছে যুক্তির জায়গায় থেকে আস্থা অর্জনে এগিয়ে যেতে হয়। ভয় কিংবা জিম্মি করে নয়। আমরা কোন সমস্যা মাঠে টিকে থাকুক তাও চাই না।  আমি তাদের বলবো একটু ধৈর্য্য ধরে আইনের ভেতরে গিয়ে পর্যালোচনা করুন- দেখবেন এই আইনটিতে কাউকে এককভাবে দায়ী বা টার্গেট করা হয়নি। বিশেষ করে চালকশ্রেনীকেতো নয়ই। বরং তাদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, কর্মঘন্টা নির্ধারণ, নিয়োগপত্রসহ গাড়ি চালনায় সঠিক পরিবেশ তৈরির কথাও রয়েছে। তবুও কেন এই বিরোধিতা, কেন এই আইনকে মেনে না নিতে পারার মানসিকতা? আশা করি তারা নিজেদের ভুলগুলো বুঝে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। সেই সাথে আমি জনসাধারণের প্রতি আহবান জানাই। আপনারা শুরু থেকে এই আইনের প্রতি স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমর্থন দিয়ে গেছেন। আপনারা ধৈর্য্যহারা হবেন না। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছবই।
সুপ্রিয় সাংবাদিক সমাবেশ
আরেকটি কথা না বললেই নয়- এবারের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে অনেক পরিবহন শ্রমিক নেতাকে দেখা যায়নি। কেন? শুনেছি এবং গণমাধ্যমে দেখেছি আমার উপস্থিতির জন্য তারা সেখানে যান নি।  প্রশ্ন হচ্ছে আমার উপস্থিতি তাদের চলার পথে কেন বাধা মনে করছেন। আমি তো জনগণের কথা বলি।  তারা বলেছে আমি নাকি চালকদের বিপক্ষে কথা বলি- বিদ্যমান আইনে সাজা বাড়ানোর কথা বলি- অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। সরকার সকল মত ও পক্ষকে আস্থায় এনে এই আইনটি প্রণয়ন করেছেন। যেখানে মত প্রকাশে আমি একজন স্টেকহোল্ডার মাত্র। আরও অনেক স্টেকহোল্ডার ছিলেন। তাদের ব্যাপারে তাহলে এই গোষ্ঠী কথা বলেন না কেন? আমি বলবো আসলে বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আমাদের চূড়ান্ত প্রত্যাশা- দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন এটি পূরণ না হবে ততদিন আমিও নিরাপদ সড়ক চাই এর কর্মীরা সড়কে আছি, থাকবো। আইন প্রয়োগ নিয়ে চলমান সংকট উত্তরণে আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদার এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কমিটি যে ১১১টি সুপারিশ করেছে, তাতে বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ রয়েছে। পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ আইন ভঙ্গ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শঙ্কা অমূলক। যারা অন্যায় করবেন, তাদেরই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পরিবহন মালিক হোক বা শ্রমিক হোক—কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করা যাবে না। আইনের বাস্তবায়ন আটকে রাখা যাবে না। মানুষকে জিম্মি করে, সরকারকে বিব্রত করে যদি কেউ এই আইনের বাস্তবায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই এখন আমাদের দাবি।
যদিও প্রত্যাশার জায়গা বারবার হোচট খেলে হতাশ হতে হয়। কিন্তু আমরা আশাবাদী। সেইসাথে দাবি জানাচ্ছি এখনও দুইমাস সময় আছে। আপনাদের মাধ্যমে আবেদন করছি এরমধ্যে প্রত্যেক সেক্টরকে তাদের দুর্বলতার জায়গাগুলো সংশোধন করে এই আইন প্রয়োগে এগিয়ে আসবেন এবং সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আগামী ০১ জানুয়ারি ২০২১ সাল হতে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন যেন করা হয়। এরপর যেন আর কোন সময় বৃদ্ধি না করা হয়।
মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।
পথ যেন হয় শান্তির, মত্যুর নয়।
ইলিয়াস কাঞ্চন
চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন