নিরাপদ সড়ক চাই’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২২- এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’। সরকার দিবসটি ঘিরে এবারের এই প্রতিপাদ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের উপর জোর তাগিদ দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা মনে করি সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সঠিক ম্যানেজমেন্ট করতে হলে আইনের বিকল্প নেই। সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সরকার ও রাজনৈতিক মহলের সদিচ্ছা। যেমন সড়কে চলাচলে চালক, মালিক, যাত্রী, পথচারী সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। কারণ সড়কের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানার প্রক্রিয়া, নির্দেশনা ও করণীয় কি সঠিকভাবে তুলে ধরা না যায় এবং সম্পৃক্ত করতে না পারা যায় তা হলে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২২ উদযাপনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় ও শাখাসমূহের মাসব্যাপী এবং চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির উদ্যোগে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের সহযোগিতায় তিনমাস ধরে চট্টগ্রামের তিন শতাধিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সমাবেশ কর্মসূচির সফল সমাপ্তি উপলক্ষে সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’ প্রতিপাদ্যে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, স্মারকলিপি মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি- জাতিসংঘ ঘোষিত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম ৫টি পিলার যথাক্রমে, সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী, সড়ক দুর্ঘটনায় পরবর্তী করণীয়- বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেইসাথে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ৫টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়- গতি, হেলমেট, সিটবেল্ট, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালনা ও শিশু আসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু জাতিসংঘ চিহ্নিত এই ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন করতে হলে এবং সড়ক নিরাপদ করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য। কারণ কোন রাস্তায় যানবাহন ধরন ভেদে কোন গাড়ির কত গতি হবে সে সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই। মোটরসাইকেল চালকদের প্রতি হেলমেট মেইনটেইন ও পরিধানের কোন নির্দেশনা না থাকায় শুধুমাত্র আইনের হাত থেকে বাঁচতে নিম্নমানের হেলমেট অহরহ ব্যবহারিত হচ্ছে। শুধু চালককে সিটবেল্ট ব্যবহারে নির্দেশনা থাকায় যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধানের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় যাত্রীরা সিটবেল্ট ব্যবহার করছে না। এছাড়া ডোপ টেস্টের সঠিক ব্যবহার ও মনিটরিং না থাকায় এখনও অনেক চালক মদ্যপ ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ী চালনা করছে এবং আমাদের দেশে শিশুদের জীবন রক্ষার্থে শিশু আসনের কোন বিধান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে উল্লেখ নেই। যা বিধিমালায় অন্তর্ভূক্ত করে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করার দাবি যায়।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এস এম আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজীবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব লিটন এরশাদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক লায়ন হাকিম আলী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন গনি মিয়া বাবুল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান, অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান, সমাজ কল্যাণ সম্পাদকমোহসিন খান, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান রোকন, একে আজাদ, নুরুল হুদা, এম কাইয়ুম খান, আবদুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. টিপু শীল জয়দেব, সমাজ কল্যাণ ও ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম রিটন, যুব বিষয়ক সম্পাদক সনত তালুকদার, নির্বাহী সদস্য আরিচ আহমেদ শাহ, রেবা বড়–য়া, মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
সড়ক নিরাপত্তার প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের কর্মসূচি কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ে (দেশে ও বিদেশে) মোট ১১৩৭টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
অক্টোবর মাসব্যাপী কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজকের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। পালিত কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা জারির দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, চালক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ, অভিভাবক সমাবেশ, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সুধী সমাবেশ, গোলটেবিল আলোচনা, সেমিনার, ট্রাফিক ক্যাম্পেইন, র্যালী, বাস টার্মিনালে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমাবেশ ও সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ সহ সড়কে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে সতর্কতামূলক প্রচার কর্মসূচি। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের সহযোগিতায় তিনমাস ধরে চট্টগ্রামের তিন শতাধিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।