নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর উদ্যোগে আজ ৩ মে বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় ‘তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া’ মিলনায়তনে ‘সড়ক ও যানবাহনের প্রকারভেদে গতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক করণীয় গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন নিসচা’র চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। বৈঠকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআরটিসি, দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সাংবাদিক, পরিবহন শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সংস্থার সড়ক বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখিত বিষয়ের উপর করণীয় আলোকে আলোচনায় অংশ নেন।
‘সড়ক ও যানবাহনের প্রকারভেদে গতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক করণীয় গোলটেবিল বৈঠকের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বুয়েট-এর সহযোগী অধ্যাপক এস.এম সোহেল মাহামুদ মূল প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেন।
প্রতিপাদ্যে তুলে ধরা হয় স্পিড ম্যানেজমেন্ট হলো গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করার এমন একটি পদ্ধতি যাতে অতিরিক্ত গতি এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার সহজ হয়। এটি দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং প্রভাব হ্রাস করে মারাত্মক এবং গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা কমিয়ে নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে সড়কপথে যানবাহন দ্রুত এবং নিরাপদ ভাবে চলাচলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। যদি উচ্চ গতিতে চলমান যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষ হয় তাতে গতিশক্তি অনেক বেশি থাকে; এবং তাতে ক্ষতির পরিমাণও অনেক গুরুতর হয়। এমনকি গাড়ির গতিকে খুব সামান্য বৃদ্ধিও মারাত্মক বা গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। ডব্লিউএইচও এর মতে, যদি কোন গাড়ির গতি বেশি থাকে, তাহলে জরুরি অবস্থার সময় চালকের জন্য প্রতিক্রিয়ার সময় কম থাকবে, গাড়ি থামাতে বেশি সময় লাগবে এবং থামাতে ব্যর্থ হলে আরো বেশি জোড়ে কোন কিছুতে আঘাত করবে এবং শেষ পর্যন্ত মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়বে।
একটি গাড়ির গতি যত বেশি হবে, একজন চালক থামতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে তত কম সময় পাবেন। ডব্লিউএইচও-বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী গড় গতি ১ কিমি/ঘন্টা বৃদ্ধির ফলে সাধারণত আঘাতজনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩% বেশি হয়, এর ফলে দুর্ঘটনাইয় প্রাণহানির ঘটনা ৪-৫% বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার তীব্রতায়ও অবদান রাখে। উদাহরণ স্বরূপ, দুর্ঘটনা ঘটলে একটি ৮০ কি/মি গতিতে চলা গাড়ির যাত্রীর ৩০ কি/মি ঘণ্টা গতিতে চলা একটি গাড়ির যাত্রীর তুলনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা ২০ গুন বেশি।
গতিসীমা নির্ধারণের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটির পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি । একটি প্রয়োকৃত গতি হিসেবে ৮৫ শতাংশ তম গতি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। একটি নিরাপদ গতি সীমা নির্ধারণের সবচেয়ে সামপ্রতিকৃতি রীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সেফ সিস্টেম পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে একটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিস্ক রেটিং যা এমন এক সড়ক ব্যবস্থা তৈরি করে যেখানে চালকের ত্রুটির কারণে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা কমে আসে। একটি আদর্শ সেফ সিস্টেম চালকের মানবিক ত্রুটি এবং যাত্রীদের শারীরিক সহনশীলতা বিবেচনা করে যাতে রাস্তা ব্যবহারকারীরা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে গুরুত্বের আঘাত বা মৃত্যু এড়াতে পারে।
গোলটেবির বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মাননীয় সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, স্পিড লিমিট গাইডলাইন সংক্রান্ত কাজ চলছে। দ্রুতই তৈরি হবে যা দেশের জন্য খুবই জরুরী। গতির ৩০ কিলোমিটার আলোচনায় আনার পর ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রতিবাদ, মানববন্ধন হয়েছে। স্পিড বাড়ানোর দাবি প্রতিনিয়ত আসছে তবে আমি স্পিড নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। প্রতিদিন আমি দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশের পক্ষে।
প্রত্যেকের নাম ঠিকানা আমার কাছে আছে। প্রোপার তথ্য চাই, বিভ্রান্ত চাই না। ডব্লিউএইচও তথ্যমতে বছরে ২৫ হাজার মৃত্যু প্রমাণ চাই। মৃত্যুর খবর এডভারটাইস করা যায় না। হসপিটাল এ সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মৃত্যু পুলিশে রিপোর্ট না করে লাশ দেবে না। সড়ক ব্যবহারকারীদের আচরণগত পরিবর্তন প্রয়োজন। চালক স্বামীকে তার স্ত্রী বলবে জীবন আগে, জীবিকা পরে,সুস্থভাবে ঘরে ফিরবেন। বছরে এক লক্ষ ৪১ হাজার মামলা ২০২৩ এবং ১০৭০০০। এক্সিডেন্টের ১০ মিনিটের মধ্যে ট্রিটমেন্ট শুরু করছি। বিআরটিএ ডেইলি দুপুর ১২:০০টায় সড়ক দুর্ঘটনা তথ্য দিচ্ছে। আজকের পরামর্শগুলো নিয়ে আমরা গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়নের পথে যাব।
সভাপতির বক্তব্যে নিসচা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, রাস্তায় সিস্টেম ব্রেক হচ্ছে এটাকে আগে ঠিক করতে হবে। রাস্তায় কিছু উৎপাত রয়েছে যেগুলো আমরা চাইলেই পরিবর্তন করতে পারি। সেই দিকটা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন ঢাকা শহরে হঠাৎ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বেড়ে গেছে এবং রাস্তার শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। পদ্মা ব্রিজে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে যাত্রী চলছে। আমরা চাইলেই এই ধরণের সমস্যাগুলি পরিবর্তন করতে পারি। মূল কথা সব কিছুই একটা সিস্টেমে আনতে হবে তাহলেই সাফল্য ধরা দিবে।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন খালেদ মাহমুদ, কো-অর্ডিনেটর, রোডস এন্ড হাইওয়ে, ব্রাক। আমিনুল ইসলাম সুজন, টেকনিক্যাল এডভাইজার ভাইটাল স্ট্রাটেজি। তানভীর সিদ্দিকী, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ। আবুল খায়ের, ট্রান্সপোর্ট অফিসার,ডিটিসিএ। আমজাদ হোসেন, উপসচিব, বিআরটিসি। মোঃ শহিদুজ্জামান, পরিচালক বিআরটিএ। নজরুল ইসলাম মিঠু, সাবেক সভাপতি, ডিআরইউ। সোহেল রানা, এডিসি, ডিএমপি ট্রাফিক। মামুনুর রশীদ, ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিষ্ট। শ্যামল কুমার মুখার্জী পিপিএম,এডিশনাল ডিআইজি,হাইওয়ে পুলিশ। ড. শরীফুল আলম, কান্ট্রি ডিরেক্টও, এঐঅও। খন্দকার গোলাম ফারুক, কমিশনার, ডিএমপি। আহমেদ নাজমুল হোসাইন, পরিচালক, প্রশাসন ও সড়ক নিরাপত্তা প্রোগ্রাম, ব্রাক। মোঃ মনিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক), ডিএমপি। প্রণব সাহা, স¤পাদক, ডিবিসি নিউজ। এস.এম সোহেল মাহামুদ, সহযোগী অধ্যাপক, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বুয়েট। নজরুল ইসলাম মিঠু, সাবেক সভাপতি, ডিআরইউ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিসচার মহাসচিব লিটন এরশাদ। কোরআন তেলাওয়াত করেন নিসচার ভাইস চেয়্রাম্যান সৈয়দ এহসান-উল হক কামাল। বৈঠক শেষে পুরো আলোচনার সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন নিসচার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন।