নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন আজ বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান এর সাথে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক এক মতবিনিময়ে মিলিত হন।
মগবাজার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাদ আসর এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, আজ বিকাল চারটায় মগবাজারস্থ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠক নির্ধারিত ছিলো। যথা সময়ে নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন মগবাজার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছান। পৌঁছানোর পরপরই তিনি দেখতে পান জামায়াতের সন্মানিত আমীর ডা. শফিকুর রহমান কার্যালয় সংশ্লিষ্ট মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করতে যাচ্ছেন। দুজনের দেখা হবার পর তারা দুজনে একসাথে আছরের নামাজ আদায় করে ফিরে এসে আমীরের রুমে বসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ।
মতবিনিময় সভায় ইলিয়াস কাঞ্চন তার দীর্ঘ ৩২বছরের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্দোলনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এবং বিদেশে তিনি যেসব সভা সেমিনার সিম্পোজিয়াম-এ অংশগ্রহন করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং দেন। ব্রিফিংয়েও তিনি দীর্ঘদিন ধরে যে কথা বলে আসছিলেন রোড সেফটি তখনি এনসিয়র হবে যখন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকবে। এবং পলিটিক্যাল দলগুলো বা রাজনীতিবিদরা আন্তরিকতা দেখাবে এবং তারা এই ব্যাপারে কাজ করবে । সেইসাথে সরকারি উদ্যোগ ও পরিলক্ষিত হবে। বেসরকারী ভাবে যারা এভাবে রোড সেফটি নিয়ে কাজ করছেন তারা বিভিন্ন রকম ভাবে মুভমেন্ট করে আন্দোলন করে কাজ করে একটি পথ দেখাতে পারে। কিন্তু বাস্তবায়নের জায়গাটা হতে হবে রাজনৈতিক ভাবে রাজনীতিবিদদের হাতে এবং সরকারের হাতে।
এই আলোকে গত ৩২বছর ধরে বিভিন্ন সভা সেমিনারে এই কথাগুলো বলে আসছিলেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় অংশহিসেবে এবার নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ইলিয়াস কাঞ্চন দেশের বর্তমান সকল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানেও তিনি সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার ওপর গুরুত্বআরোপ করেন।
এবং তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)র পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতীক দলের সাথে ১ টু ১ (ওয়ান টু ওয়ান) বৈঠক এর একটি চিন্তা ভাবনা করা হয়। যার অংশ হিসেবে আজকে জামায়াতে ইসলামের আমিরের সাথে এই দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান মনযোগ সহকারে ইলিয়াস কাঞ্চনের কথাগুলো শোনেন এবং সড়ক নিরাপত্তামূলক বিষয়গুলো শুনে তিনি এই ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে তার দলের পক্ষ থেকে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
পাশাপাশি তিনি কোন কোন জায়গায় কাজ করলে উদ্যোগগুলো ফলপ্রসূ হবে বলে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে জানতে চাইলে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সবচেয়ে বড় যে জিনিসটির প্রয়োজন সেটি হলো পরিবহন সেক্টরের শৃংখলা ফিরিয়ে আনা। এবং সেখানে যে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম হয় পরিবহন নেতৃত্বের নামে যারা এই পরিবহন জগতকে শোষণ করছে তাদের হাত থেকে এই পরিবহন জগতটাকে বের করে আনতে হবে এবং স্বচ্ছভাবে এই সেক্টরটির পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে।
আর এটি একমাত্র সরকার এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সম্ভব। এই ব্যাপারে তিনি সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি ইলিয়াস কাঞ্চন সড়কের নিরাপত্তা সুসংহত করতে এবং সড়কে আইন প্রণয়ন সহ বিভিন্ন শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় সড়ক সংস্কার কমিশন গঠনের অনুরোধ জানান।
এই সকল বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে অনুরোধ জানান।
সেইসাথে জনসচেতনা বৃদ্ধিতে তাদের যে রাজনৈতীক কর্মকান্ড পরিচালনা হয় সেখানে কিছু অংশবিশেষ সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মিদের প্রশিক্ষিত করা বা অবহিত করণ বিষয়ে ক্যাম্পেইন পরিচালনার অনুরোধ জানান। এইসব বিষয়ে জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান ইলিয়াস কাঞ্চনের গঠনমুলক প্রস্তাবনাকে স্বাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এই কাজটিই আমরা করতে চাই। এবং সেটি সমন্বিতভাবে করতে চাই ইনশাআল্লাহ আমরা এই কাজগুলো করবো। আগামীতে আমাদের আরও দেখা হবে প্রয়োজনে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আমিও কথা বলবো। পাশাপাশি তিনি এটিও বলেন শুধু সেগমেন্ট ধরে আসলে সমস্যা সমাধান নয় আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেসকল অনিয়ম দুর্নীতি এবং সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকেও চিহ্নিত করে নিরাময় করতে হবে। নিরাময় করতে পারলেই আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধি নিরাপদ বাংলাদেশ পাব।
পরিশেষে নিরাপদ সড়ক চাই এর পক্ষ থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন তার ৩২বছরের ইতিহাস এবং বিভিন্ন সময়ে কিছু প্রকাশনা জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান এর হাতে তুলে দেন। এবং জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রকাশনা ইলিয়াস কাঞ্চনের হাতে তুলে দেন জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।