English

20 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
- Advertisement -

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে নিসচা’র মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন

- Advertisements -

আগামী ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) মাসব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এ বছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কার্যকর উদ্যোগ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এই আইনে কিছু কার্যকর দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর।

রোববার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন ও সড়ক নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আইনের সমালোচনা করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত পাঁচটি মূল ঝুঁকি যেমন অতিরিক্ত গতি, স্টান্ডার্ড হেলমেট ও সিটবেল্ট ব্যবহার না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, শিশুদের জন্য নিরাপদ আসনের অনুপস্থিতি বিবেচনায় রেখে সার্বিকভাবে সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের আলোকে যথাযথ আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, উন্নত দেশগুলো নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সেইফ সিস্টেম এপ্রোচ তথা বহুমুখী পরিবহনব্যবস্থা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও দুর্ঘটনাপরবর্তী ব্যবস্থাপনার আলোকে নিজেদের আইনি ও নীতি-কাঠামো প্রণয়ন করে যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে। সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের উদ্দেশ্য হলো মানুষ বা সড়ক ব্যবহারকারী ভুল করলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা এমন হবে যার ফলে মানুষকে তার ভুলের সর্বোচ্চ মাসুল অর্থাৎ মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের শিকার যেন হতে না হয়।

বিশিষ্ট এই অভিনেতা বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পুরোপুরি সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের কাজে ব্যবহার করা। যেন সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের আলোকে সড়কে মানুষের জীবনের মৃত্যুঝুঁকি কমে। পাশাপাশি সড়কে মৃত্যু কমাতে নতুন আইনি কাঠামো প্রণয়নও এখন সময়ের দাবি।

প্রায় প্রতিদিনই পথচারী তথা সড়ক ব্যবহারকারী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান আইন বা নীতিকাঠামোতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার বিষয়টি উদ্বেগজনকভাবে অনুপস্থিত। তাই আপনাদের মাধ্যমে একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করে মানুষের জীবন বাঁচানোর দাবি শুধু আমাদের নয়, এটি সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই অনুধাবন করেন। তাই নীতিনির্ধারণ পর্যায়ের সকলের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি। সম্মিলিত উদ্যোগ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেশের সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি (জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ) কমানোর পথ সুগম করবে, যার মাধ্যমে এসডিজির ধারা ৩.৬ এবং ১১.২ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলয়াত করেন কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব সৈয়দ একরামুল হক, শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জনাব মোঃ গনি মিয়া বাবুল। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিসচা’র মহাসচিব জনাব লিটন এরশাদ।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব এস এম আজাদ হোসেন। এরপরে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিসচা চেয়ারম্যন চিত্রনায়ক জনাব ইলিয়াস কাঞ্চন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান জনাব বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মঞ্জুলী কাজী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আব্দুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জনাব ফিরোজ আলম মিলন, যুব বিষয়ক সম্পাদক জনাব এম নাহিদ মিয়া, সমাজ কল্যাণ ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মহসিন হোসেন খান, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক জনাব মফিজুর রহমান খান বাবু, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য জনাব নাসিম রুমি, জনাব এ.কে আজাদ, জনাব কামাল হোসেন খান, জনাব নুরুল হুদা, কেন্দ্রীয় আজীবন সদস্য ও ফেনী জেলা শাখার সদস্য সচিব জনাব শহিদুল ইসলাম, জনাব আব্দুর রাজ্জাক, জনাব এম. জামাল হোসেন মণ্ডলসহ অন্যান্য সদস্যগণ।

০১ অক্টোবর ২০২৩ সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্য

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আজকের সংবাদ সম্মেলনে আগত প্রিয় সাংবাদিকসমাজ, আসসালামু আলাইকুম। সকলকে নিরাপদ সড়ক
চাই-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ আপনাদের সামনে আগামী ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ উপলক্ষে নিসচা কর্তৃক গৃহীত মাসব্যাপী কর্মসুচি ও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনার
আলোকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

নতুন করে বলার কিছু নেই। আজ থেকে ৩০ বছর আগে কেন এবং কি প্রেক্ষাপটে আমি নিরাপদ সড়ক চাই
আন্দোলন শুরু করেছিলাম তা আপনাদের অজানা নয়। এই পথ পরিক্রমায় এদেশের কোটি কোটি জনগণ
আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, ভালবাসা দিয়েছেন- বিশেষ করে আপনারা মিডিয়া এবং সাংবাদিকবৃন্দ
আমার কর্মকা-কে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন যার ফলশ্রুতিতে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক
দিবস-এর স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এ বছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘আইন
মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’। যার আলোকে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।

প্রিয় সাংবাদিকসমাজ
প্রথমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত জাতীয় দিবস
হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন
অলংকৃত করে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের কার্যকর প্রয়োগের নির্দেশনা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
এ আইনের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য একটি ট্রাস্ট
গঠন। যে ট্রাস্টের মাধ্যমে একটি ফান্ড থাকবে এবং কিভাবে এই ফান্ড গঠিত হবে তার একটি নির্দেশনাও
আছে। আশার কথা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের মূল অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝে আর্থিক সহায়তার কার্যকর
উদ্বোধন করবেন। এজন্য আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া ২০১৮
সালের সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পক্ষকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির বিষয়টি
নিশ্চিত করতে নির্দেশনা রয়েছে। সরকার যেহেতু সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ
করেছে যার মূল লক্ষ্য সড়ক দুর্ঘটনা কমানো। সুতরাং আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য
দায়ী যে পক্ষই হোক না কেন তাকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে সড়ক
দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ
এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ও শাখাপর্যায়ে নিসচা কর্তৃক সারাদেশে
গৃহীত উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিসমূহ হচ্ছে- পিটিআইতে প্রশিক্ষণরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদ্যমান চালকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদান, স্কুলের
শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ
প্রদান, ট্রাফিক আইন জানতে ও মানতে রোড ক্যাম্পেইন পরিচালনা, সংবাদ সম্মেলন, র‌্যালি, পোস্টার
প্রকাশ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সড়ক ও অরক্ষিত লেবেল
ক্রসিংয়ে সতর্কতামূলক সাইন স্থাপন এবং অনেকে রেললাইনের এপাশে ওপাশে চলাচল করতে গিয়ে
অলিখিতভাবে তৈরি হওয়া লেবেল ক্রসিং চিহ্নিত করে রেল কর্তৃপক্ষের নজরে আনা, বিপজ্জনক বাঁকে
সচেতনতামূলক রোড সাইন স্থাপন, মটরসাইকেল চালকদের মাঝে স্টান্ডার্ড হেলমেট বিতরণ, স্কুল-কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বয়সভিত্তিক সড়ক নিরাপত্তামূলক রচনা প্রতিযোগিতা,
বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের করণীয় সম্পর্কে মত বিনিময়, বাস ও ট্রাক
টার্মিনালে গিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকা- পরিচালনা, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্মিত তথ্যচিত্রের
ভিডিও প্রদর্শন ও এর আলোকে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা, প্রশাসনের সাথে মত বিনিময়সহ
সরকারিভাবে ২২ অক্টোবরকে ঘিরে যেসব কর্মসূচি পালিত হবে পালিত সে সকল কর্মসূচিতে
অংশগ্রহণ। এছাড়া #৩৯;নিরাপদ্#৩৯; নামে একটি স্মরণীকাও প্রকাশ করা হবে। শাখা সংগঠনের অনেকেই দিবসটি উপলক্ষে স্মরণীকা এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বিভিন্ন জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে নিসচার উদ্যোগে
নিবন্ধ প্রকাশিত হবে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া আয়োজিত টক শোতে অংশগ্রহণ করা হবে। এছাড়া
যে মহিয়সী নারী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস স্বীকৃতি এসেছে
তাঁর স্মরণে নানা কর্মসূচি পালিত হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সকল ব্যক্তি ও জাহানারা কাঞ্চনের
আত্মার মাগফেরাত কামনায় সারা দেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

প্রিয় সাংবাদিক সমাজ
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সরকার এ বছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা
সড়ক নিরাপত্তার জন্য অনেকটা কার্যকর হবে বলে আমরা মনে করি। গত ৩০ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য যে আন্দোলন আমরা করছি তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের অনেক কার্যকর উদ্যোগ আমাদের কর্মেরই ফসল। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে সড়ক নিরাপত্তার জন্য সর্বস্তরের জনসচেতনতা যেমন প্রয়োজন তেমনি

তৃণমূল পর্যায়ে থেকে এবং শিক্ষার মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটাতে হবে। নিসচা দীর্ঘ পথচলার অভিজ্ঞতায়
প্রায় ০২ (দুই) দশক ধরে জনসচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের
ওরিয়েন্টেশনমূলক কর্মশালার মাধ্যমে সচেতন করে আসছে। নিসচা#৩৯;ই সর্বপ্রথম সড়ক নিরাপত্তার উপর এসব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্তর থেকে পাঠদানের সাথে সড়ক
নিরাপত্তার উপর যেন শিক্ষকরা তাদের মানসিকভাবে তৈরি করতে পারে তার জন্য দেশের ৬৫টি প্রাথমিক
টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) এর মাধ্যমে প্রতি বছর ২০০ করে শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তার
উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। নিসচা সারা বছরই কেন্দ্রীয় এবং শাখা পর্যায়ের একটি প্রশিক্ষিত টিমের
মাধ্যমে সারা দেশে শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ চালু রেখেছে। আশার কথা হলো সরকারও এ বছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক
দিবস কর্মসূচিতে রাজধানীতে ৫০টি স্কুল ও সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১০টি করে স্কুলের
শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তার উপর উদ্বুদ্ধমূলক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে
সাধুবাদ জানিয়ে দাবী করছি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউট, গার্লস্ধসঢ়; গাইড, কাব, রোভার স্কাউট-
এর আদলে স্বতন্ত্র ‘সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট’ গঠনের। যার মাধ্যমে সারা বছর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
সড়ক নিরাপত্তার উপর শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তাতে তৃণমূল থেকে সড়ক নিরাপত্তার
প্রতিটি বিষয় নিশ্চিত হবে বলে আমরা মনে করি।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা
আমরা মনে করি সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ
ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কার্যকর উদ্যোগ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন
আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এই আইনে কিছু কার্যকর দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর।
আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ হয়নি। আমরা দৃঢ়ভাবে
বশ্বিাস কর,ি সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত পাঁচটি মূল ঝুঁকি যেমন অতিরিক্ত গতি, স্টান্ডার্ড হেলমেট ও
সিটবেল্ট ব্যবহার না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, শিশুদের জন্য নিরাপদ আসনের অনুপস্থিতি
বিবেচনায় রেখে সার্বিকভাবে সেইফ সিষ্টেম এপ্রোচ-এর আলোকে যথাযথ আইন ও বিধিমালা
বাস্তবায়িত হলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে।

সুপ্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ
উন্নত দেশগুলো নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সেইফ সিস্টেম এপ্রোচ তথা বহুমুখি পরিবহন ব্যবস্থা,
নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনার আলোকে
নিজেদের আইনী ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন করে যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে। সেইফ সিস্টেম
এপ্রোচের উদ্দেশ্য হলো মানুষ বা সড়ক ব্যবহারকারী ভুল করলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা এমন হবে যার ফলে মানুষকে তার ভুলের সর্বোচ্চ মাসুল অর্থাৎ মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের শিকার যেন হতে না হয়। এক্ষেত্রে আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি, বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পুরোপুরি
সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের কাজে ব্যবহার করা। যেন সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের আলোকে সড়কে মানুষের
জীবনের মৃত্যু ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি সড়কে মৃত্যু কমাতে নতুন আইনী কাঠামো প্রণয়নও এখন সময়ের
দাবি। কারণ বাংলাদেশের সড়ক পথচারী তথা সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়
প্রতিদিনই পথচারী তথা সড়ক ব্যবহারকারী শিকার হচ্ছেন দুর্ঘটনার। কিন্তু বর্তমান আইন বা
নীতিকাঠামোতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার বিষয়টি উদ্বেগজনকভাবে অনুপস্থিত। তাই আপনাদের মাধ্যমে
একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন প্রণয়ের দাবি জানাচ্ছি যার মূল কেন্দ্রে থাকবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা।

সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
সড়কে মানুষের জীবন বাঁচানোর দাবী শুধুমাত্র আমাদের নয়, এটি সর্বোচ্চমহল থেকে শুরু করে সাধারণ
মানুষ সবাই অনুধাবন করেন। তাই নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের সকলের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি। আমরা আশা
করছি, আমাদের এই দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আপনারা তুলে ধরবেন। আমরা বিশস
করি সম্মিলিত উদ্যোগ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেশের সড়ক দুঘটনা হ্রাস করার মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত
অর্থনৈতিক ক্ষতি (জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ) কমানোর পথ সুগম করবে যার মাধ্যমে এসডিজির ধারা
৩.৬ এবং ১১.২ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশ অনেক দুর এগিয়ে যাবে।


নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর ধরেই সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলন চালিয়ে আসছে
এবং জনগনকে সচেতন করার জন্য নানা কার্যকর কর্মসূচি পালন করছে। নিসচা সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনের
কর্ম পরিকল্পনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নিসচা এসব
কর্মসূচির মাধ্যমে দীর্ঘ ৩০ বছরের পথচলায় যে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে আসছে তা আজ ১৮
কোটি মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়ে সকলের হৃদয়ের ¯পন্দন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। সকলের
সমর্থন ও অকুন্ঠ ভালোবাসাই আমাদের পথচলায় পাথেয়। আমরা পথপ্রদর্শক বলেই আজ সড়ক দুর্ঘটনাকে
জাতীয় সমস্যার একটি হিসেবে চিহ্নিত করে সমাধানের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

পরিশেষে বলতে চাই-বাংলাদেশে বহু দিবস পালিত হয় কিন্তু ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস সেরকম
দিবস নয়। এটির মাধ্যমে আমরা শুধু একদিনে দিবসটি উদযাপন করবো না বরং সারা বছর আমরা বিভিন্ন
কার্যক্রমের মাধ্যমে চালক, মালিক, পথচারি, যাত্রী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবো এবং দেশবাসিকে সচেতন করার মাধ্যমে দেশকে সড়ক দুর্ঘটনার মহামারী থেকে উদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।

দীর্ঘ ৩০ বছরের এ সামাজিক আন্দোলনের সফলতায় আপনারা সাংবাদিকবৃন্দ আমাদের পাশে থেকে যে
সহযোগিতা, সহমর্মিতায় আবদ্ধ করেছেন তার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে, সু-স্বাস্থ্য কামনা করে
আজকের সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করছি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।
পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন
চেয়ারম্যান
নিরাপদ সড়ক চাই

নিসচা গৃহীত মাসব্যাপী কর্মসূচির তালিকা
০১/১০/২০২২ তারিখে কেন্দ্রীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সারা দেশে মাসব্যাপী সড়কের ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের উদ্বোধন,

০২/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম চলবে,

০৩/১০/২০২২ তারিখে কেন্দ্রে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক মোড়ে চেয়ারম্যনের নেতৃত্বে ট্রাফিক
সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন বিকাল ৩.৩০টায় এবং সারাদেশে এই কার্যক্রম চলবে,

০৪/১০/২০২২ তারিখে কেন্দ্রে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক মোড়ে চেয়ারম্যনের নেতৃত্বে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন বিকাল ৩.৩০টায় এবং সারাদেশে এই কার্যক্রম চলবে,

০৫/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম চলবে,

০৭/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম চলবে,

০৮/১০/২০২২ তারিখে কেন্দ্রে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক মোড়ে চেয়ারম্যনের নেতৃত্বে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন বিকাল ৩.৩০টায় এবং সারাদেশে কার্যক্রম চলবে,

০৯/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে, ১০/১০/২০২২ তারিখে ফেনী জেলা কমিটি আয়োজিত চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ,

১১/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে, ১২/১০/২০২২ তারিখে রাজশাহী জেলা শাখা আয়োজিত প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) তে ২০০ প্রাইমারী স্কুলের প্রশিক্ষণরত শিক্ষকদের মাঝে সড়ক নিরাপত্তামূলক কর্মশালায় চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের
অংশগ্রহণ,

১৪/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

১৫/১০/২০২২ তারিখে যানবাহনের গতিসীমা (যানবাহন, রাস্তা ও পারিপার্শ্বিক আস্থা বিবেচনায়) নির্ধারণ সংক্রান্ত গোলটেবিল,

১৬/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

১৭/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

১৮/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

১৯/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে, ২১/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

২২/১০/২০২২ তারিখে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন,

২৩/১০/২০২২ তারিখে দেশব্যাপী স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মতবিনিময়,

২৪/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

২৫/১০/২০২২ তারিখে শরীয়তপুর জেলা শাখা আয়োজিত জেলার ৩০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০০ জন প্রদান শিক্ষক এবং জেলার প্রশাসন ও সুধী সমাজের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ ,

২৬/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে,

২৮/১০/২০২২ তারিখে কেন্দ্রে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক মোড়ে চেয়ারম্যনের নেতৃত্বে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন বিকাল ৩.৩০টায়। এছাড়া সারাদেশে কার্যক্রম চলবে,

২৯/১০/২০২২ তারিখে কেন্দ্রে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক মোড়ে চেয়ারম্যনের নেতৃত্বে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন বিকাল ৩.৩০টায় এবং সারাদেশে কার্যক্রম চলবে,

৩০/১০/২০২২ তারিখে সারা দেশে কার্যক্রম চলবে এবং

৩১/১০/২০২২ তারিখে চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আয়োজনে চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাসব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন