ইলিয়াস কাঞ্চন: সড়কে প্রতিদিন নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। গড়ে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার নতুন গাড়ি সড়কে নামছে। এই পরিমাণ চালক তো কেউ তৈরি করছে না। ফলে গাড়ির অনুপাতে নতুন চালক তৈরি হচ্ছে না। বিশেষ করে দক্ষ চালকের খুব অভাব।
বড় গাড়ির দুর্ঘটনায় হিসাব পাওয়া গেলেও ছোট গাড়ির হিসাব তেমন পাওয়া যায় না। অথচ ছোট গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা হয় বেশি। নিষিদ্ধ করার পরও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা মহাসড়কে চলছে।
বড় গাড়ির চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও ছোট এসব গাড়ির চালকদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। বৈজ্ঞানিকভাবে গাড়ি ফিট থাকার পাশাপাশি চালকদেরও ফিট থাকতে হবে। সঠিক প্রশিক্ষণ ও নীতিমালার আওতায় খুব কম চালকই তৈরি হচ্ছে।
এর বিপরীতে প্রভাবশালীদের চাপের মুখে চালকের সহকারীদের সহজে চালক বানিয়ে দেওয়ার পথ করে দিয়েছে সরকার।
মাত্র তিন বছর চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করলেই সে চালক হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা পেয়ে যাবে। এটা অযৌক্তিক। আগের নিয়ম ছিল হালকা গাড়ি, মাঝারি ভারী গাড়ি তিন বছর করে চালিয়ে তারপর ভারী যান চালানোর জন্য চালক যোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন। ভারী গাড়ি চালানো অনেক দক্ষতার বিষয়। কিন্তু এই পদ্ধতি এখন মানা হচ্ছে না।
আবার বড় গাড়ি ও ভারী যান চালানোর জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ একজন চালকের দরকার, সেটা সরকারের দিক থেকে পর্যাপ্তভাবে দেওয়া হচ্ছে না।
শুধু যে বড় গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায় তা তো নয়। ছোট গাড়িও দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী। তাহলে ছোট গাড়ির চালকদের কেন প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে না। সিটি করপোরেশন থেকে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চালকদের কোনো লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। চালকদের যদি কোনো সনদ থাকত তাহলে তাদের জবাবদিহির আওতায় সহজে আনা যেত।
দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যাও বেশ বড়। এ ক্ষেত্রে পথচারীদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। অনেকে সড়কে চলাচলের নিয়ম জানলেও তা মানতে চান না। স্কুলের পাঠ্য বইয়ে সড়ক সচেতনতা প্রসঙ্গে পড়াশোনা থাকা দরকার।
সড়কে আমাদের বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। তার ব্যবহার কিভাবে করতে হবে তা চালকরদের জানাতে হবে। আধুনিক সড়কে চলার মতো উপযুক্ত পরিবহন নামাতে হবে। এখন সড়কের মান, পরিবহনের মান ও চালকের মানের মধ্যে একধরনের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়ে গেছে। এটা সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। মোদ্দা কথা, দুর্ঘটনা আর পেছনের কারণগুলো অনেকটাই চিহ্নিত। দুর্ঘটনা কমাতে হলে সেসব সমস্যা সমাধান করতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই